পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G SR বঙ্গ-গৌরব কলানৈপুণ্য দেখিয়া বিস্মিত হইতে হয়। মার্জিত রুচি এবং অপরূপ সৌন্দর্য জ্ঞানের পরিচয় তাহার রচনার ছত্ৰে ছত্রে পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের পূর্বে যাহারা বাংলা রচনায় খ্যাতি অর্জন করিয়া গিয়াছেন, তাহারা প্ৰায় সকলেই অল্পবিস্তর কঠিন কঠিন সংস্কৃত শব্দ এবং সমাস-সম্বন্ধ পদ ব্যবহার করিতেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের পথ তাহার পূর্ববতী সাহিত্যিকদের পথ হইতে সম্পূর্ণ বিভিন্ন। যেমন সহজ সাদা ভাষায় আমরা কথা বলিয়া থাকি, লেখাতেও তিনি সেই ভাষার প্রবর্তন করিয়াছেন। ইহাতে ভাষার প্রকাশ-শক্তি যথেষ্ট বাড়িয়া গিয়াছে। কেবল যে ভাষার ভিতরেই রবীন্দ্রনাথ পরিবর্তন আনয়ন করিয়াছেন তাহা নহে, নূতন নূতন নানা ভাবে তিনি বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করিয়া তুলিয়াছেন। তাহা ছাড়া মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, করুণা, প্ৰেম, সহানুভূতি প্রভৃতি চিরন্তন ভাবগুলি নিজের মন দিয়া এমন গভীর ভাবে তিনি অনুভব করিয়াছেন এবং এত সহজ সুন্দর ও স্বাভাবিক ভাবে তিনি ব্যক্ত করিয়াছেন যে, তাহার কবিতা পড়িয়া প্রত্যেকেরই মনে হয়, কবি ঠিক তাহার মনের ছবিটাই ভাষার তুলিতে আঁকিয়া গিয়াছেন। সেই জন্যই রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়িয়া সকলের এত ভালো লাগে এবং তিনি বাংলা সাহিত্যের ভিতর দিয়া এমন সুন্দর জিনিস আমাদের ভিতর পরিবেশন করিয়াছেন বলিয়া যেমন আমাদের আনন্দ বোধ হয়, তেমনই আবার কবিকে আপনার জন ভাবিয়া শ্রদ্ধা করিতে ও ভালবাসিতে ইচ্ছা করে। রবীন্দ্ৰনাথ যে কেবল কবিতাই লিখিয়াছেন তাহা নহে। গান, নাটক, গল্প, প্ৰবন্ধ, সমালোচনা, ভ্রমণকাহিনি প্রভৃতি কত বিভিন্ন রকমের রচনা যে তঁহার হাত দিয়া বাহিব হইয়াছে তাহার ইয়ত্ত করা যায় না। এ পর্যন্ত র্তাহার যতগুলি গ্রন্থ প্রকাশিত হইয়াছে, কেবল মাত্র সেইগুলি দিয়াই ছোটখাট একটি পুস্তকালয় প্রতিষ্ঠা করা যায়। এত বেশি। ও এত বিভিন্ন প্রকারের গ্রন্থ আর কেহ কখনও লিখিয়াছেন কি না সন্দেহ। তিনি একাধারে বিশ্ববিশ্রুত কবি, যশস্বী গল্পলেখক, প্ৰথিতনামা ঔপন্যাসিক, প্ৰসিদ্ধ নাট্যকার, নিপুণ প্ৰবন্ধ লেখক এবং সূক্ষ্মদশী সমালোচক। রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়িয়া মনে হইতে পাবে যে, তিনি কেবলমাত্র কল্পনালোকেই বিচরণ করেন, বাস্তবের সঙ্গে তাহার কোন সম্বন্ধ নাই। কিন্তু যাহারা তাহার জীবনের সঙ্গে পরিচিত তাহারা জানেন তাহার মত কামীও সচরাচর দেখা যায় না। দেশের নানা রকমের কর্মের সহিত র্তাহার ঘনিষ্ঠ যোগ আছে। কলিকাতা হইতে প্রায় একশত মাইল দূরে বোলপুরের শাস্তিনিকেতনে তিনি একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন। এখানে প্ৰায় দুই শত ছাত্র লেখাপড়া শিক্ষা করে। উন্মুক্ত ময়দানে, ছেলেদের সুখসুবিধা-স্বচ্ছন্দ্যের দিকে দৃষ্টি রাখিয়া, আমোদ-প্ৰমোদের ভিতর দিয়া তাহাদিগকে শিক্ষণ দেওয়া হয়। শিক্ষা অপেক্ষা শিক্ষার আয়োজন বিপুল হইয়া বালকদের মনকে শিক্ষার প্রতি যাহাতে বিতৃষ্ণ করিয়া না তোলে, সেদিকে তিনি তীক্ষ দৃষ্টি রাখিয়াছেন। শৈশবে এই বোঝার ভয়েই তিনি স্কুলে যাইতে চাহিতেন না। এখনকার ছাত্রদের মন হইতে সেই ভয় দূর করিবার জন্যই হয়ত এই নূতন ধরনের বিদ্যালয় এবং নূতন ধরনের শিক্ষাপদ্ধতির প্রবর্তন করা হইয়াছে। দেশপ্রোমেও এই মহাকবির মন একেবারে ভরপুর। বহু স্বদেশি শিল্পের সহিত ভঁাহার