পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর c যোগ আছে। নিজে অর্থ দিয়া অনেক দেশি শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করিতে তিনি চেষ্টা করিয়াছেন। স্বদেশি আন্দোলনের সময় দেশাত্মবোধের যে প্লাবন আসিয়াছিল, তাহার সঙ্গেও রবীন্দ্রনাথের যোগ অল্প ছিল না। প্রবন্ধের পর প্রবন্ধ রচনা করিয়া, গানের পর গান লিখিয়া তিনি তখন কমীদের কর্মে উৎসাহ দিয়াছিলেন; দেশের লোকের মনে দেশের প্রতি, দেশের জিনিসের প্রতি অনুরাগের সঞ্চার করিয়াছিলেন। বাংলার নেতাদের ভিতর কর্মধারা লইয়া যখন মতভেদের সৃষ্টি হইয়াছিল, এবং সেই মতান্তর যখন মনাস্তরে পরিণত হইয়া বাংলার রাজনীতির ক্ষেত্রটাকে আবর্জনায় ঢাকিয়া দিয়াছিল, সেই দুর্দিনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্র সম্মিলনের সভাপতির আসন প্ৰদান করিবার জন্য সকল দলের উর্ধের্ব অবস্থিত এই কবিকেই আহ্বান করা হয়। পাবনায় রাষ্ট্ৰীয় সম্মিলনের সভাপতিরূপে তিনি যে পথ অবলম্বন করিয়াছিলেন, তাহাতেই বিভিন্ন দলের ভিতর বিবাদ বিদূরিত হইয়া মিলনের সেতু গড়িয়া উঠে। দেশের নেতাদের শ্রদ্ধাও যে রবীন্দ্রনাথের উপর কত বেশি, এই ঘটনায় তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যসাধনায় মগ্ন থাকেন বলিয়া দেশের প্রতি খুঁটিনাটি কাজে আর সকলের মত দৃষ্টি দেওয়া তঁহার পক্ষে সম্ভব হয় না। কিন্তু প্রয়োজনের মুহূর্তে র্তাহার নির্জন সাধনার কুঞ্জটি পরিত্যাগ করিয়া তিনি যে রাজনীতির কলকোলাহলের ভিতরেও নামিয়া আসিতে পারেন তাহার পরিচয়ও তিনি অনেকবার প্রদান করিয়াছেন। ভারত অনুরাগিণী মিসেস বেশািস্তকে যখন গভর্নমেন্ট রাজবন্দীরূপে আবদ্ধ করিয়াছিলেন, তখন সমগ্ৰ দেশ ব্যাপিয়া একটি আন্দোলন জাগিয়া উঠে। রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠস্বর সেই আন্দোলনে অতি তীব্র ভাবেই বাজিয়া উঠিয়াছিল। তিনি সে আন্দোলনে নেতৃত্ব গ্রহণ করিতেও দ্বিধা করেন নাই। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডেও তিনি অপূর্ব তেজস্বিতার পরিচয় দান করিয়াছেন। এই সম্পর্কে তিনি যে পত্ৰখানি লিখিয়া গভর্নমেন্টের প্রদত্ত ‘স্যার” উপাধি পরিত্যাগ করিয়াছিলেন, জাতীয় সাহিত্য-ভাণ্ডারে তাহা চিরদিনের অক্ষয় সম্পদরাপে রক্ষিত হইবে। রবীন্দ্রনাথ যেমন বাংলা ভাষাকে আয়ত্ত করিয়াছেন, ইংরেজি ভাষাতেও তেমনি তঁহার অসাধারণ অধিকার। এমন সুন্দর ইংরেজি লিখিত পারেন যে, অনেক প্ৰসিদ্ধ ইংরেজ লেখকও তােহা দেখিয়া বিস্মিত হইয়াছেন। তিনি তঁহার কতকগুলি ভাল বাংলা কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করিয়া ‘গীতাঞ্জলি” নাম দিয়া একখানি পুস্তক প্রকাশিত করিয়াছিলেন। এই গ্রন্থের জন্যই ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তাহাকে “নোবেল” পুরস্কার দেওয়া হইয়াছে। এই পুরস্কারের পরিমাণ ১, ২০,০০০ টাকা। পুরস্কারের সমস্ত টাকাই তিনি বোলপুরের শক্তিনিকেতন বিদ্যালয়ে দান করিয়াছেন। ‘নোবেল” পুরস্কার লাভের পর রবীন্দ্রনাথের নাম সমস্ত পৃথিবীতে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। আজ র্তাহার রচনা পড়িবার জন্য ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিক উদগ্ৰীব হইয়া থাকে। নানা ভাষায় তাহার গ্রন্থ অনূদিত হইতেছে। প্রাচ্যের ভাব-ধারায় এমনি তিনি প্রতীচ্যকে অভিষিক্ত করিয়া দিয়াছেন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে কলিকতা বিশ্ববিদ্যালয়ও রবীন্দ্রনাথকে ডক্টর-অব-লিটারেচার উপাধি দিয়া গৌরবান্বিত হইয়াছে।