পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

68 বঙ্গ-গৌরব বাংলাভাষা আরও একটা দিক দিয়া রবীন্দ্রনাথের নিকট ঋণী। আজ মাসিক পত্রিকায় বাংলাদেশ ঢাকিয়া গিয়াছে। তাহদের আদর্শও আজ অনেক উন্নত। কিন্তু এই আদর্শকে এতটা উন্নত করিয়া তোলার মূলেও রহিয়াছে রবীন্দ্রনাথের সাধনা। রবীন্দ্রনাথ, “ভারতী’, “বঙ্গদর্শনী ২ প্রভৃতি নানা পত্রিকার সম্পাদকতা করিয়াছেন; এবং তিনি যখনই যে পত্রিকার সম্পাদকের ভার গ্রহণ করিয়াছেন, তাহাঁই দেশের ভিতর সর্বোৎকৃষ্ট মাসিক পত্রিকা হইয়া উঠিয়াছে। আজিও বাংলার শ্রেষ্ঠ মাসিক পত্রিকাগুলি রবীন্দ্ৰনাথের লেখা বক্ষে ধারণ করিয়াই শ্রেষ্ঠত্বের দাবী করে। দেশের প্রতি রবীন্দ্রনাথের প্ৰেম অতি সুগভীর হইলেও বিদেশকেও তিনি ঘূণা করেন না। বিদেশের যাহা ভাল তাহা আমরা গ্রহণ করিয়া এবং আমাদের যাহা ভাল বিদেশকে দান করিয়া আমরা সার্থক হইব, এই তীহার বিশ্বাস। জাতীয়তার মোহে পড়িয়া বিদেশের ভালকে আমরা যাহাতে উপেক্ষা না করি, সেজন্য তঁহার চেষ্টা ও যত্নের অন্ত নাই। এইরূপ আদানপ্রদানের ভিতর দিয়াই সমগ্র মানবজাতি মিলিত হইবে-এ কথা তিনি বহুবার বহুরকমে বলিয়াছেন এবং এই মিলনের মন্ত্র উচ্চারণ করাই আজ তাহার জীবনের সাধনা | রবীন্দ্ৰনাথ তাহার এই বিশ্ব-প্ৰেম এবং এই প্ৰাচ্য ও প্রতীচ্যের মিলনের বাণী লইয়া এ পর্যন্ত বহুবার বহুদেশ ভ্ৰমণ করিয়াছেন। আমেরিকা, ইউরোপ, চীন, জাপান-যেখানেই তিনি গমন করিয়াছেন, সেইখানেই লোকে সাদরে তঁহাকে অভ্যর্থনা করিয়াছে, তাহাকে বিশ্বকবির উপযুক্ত সম্মান দেখাইয়াছে, তঁহার বাণী সংগ্রহে শুনিয়াছে। যে “বিশ্বভারতী’র নাম আজ বিশ্বময় ছড়াইয়া পড়িয়ছে, এই মিলনের উদ্দেশ্যেই তাহার প্রতিষ্ঠা। নানা দেশের ছাত্র একত্রে মিশিয়া এখানে শিক্ষালাভ করিতেছে। দেশবিদেশের বিভিন্ন ভাষা শিখাইবার জন্য, বিদেশের মনীষীদের ভাবধারার সহিত ছাত্রদের পরিচয় সাধনের জন্য বিদেশের বহু পণ্ডিতও এখানে অধ্যাপক নিযুক্ত হইয়াছেন। এইরূপে যে মিলন কেবলমাত্র কবির স্বপ্নে ছিল, তাহাঁই তিনি বাস্তব জগতে কাজের ভিতরে প্রতিষ্ঠিত করিতে চেষ্টা করিতেছেন। বঙ্গীয়-সাহিত্য-সৃস্মিলনীর অধিবেশনে সভাপতির আসন দুইবার রবীন্দ্রনাথের দ্বারা অলকৃত হইয়াছে। তঁহাব প্রতি দেশের লোকের শ্রদ্ধা যে কি বিপুল, ইহাতেই তাহা বোঝা যায়। বিদেশেও তাঁহার যশ মধ্যাহ্ন-সূর্যের মতই উজ্জ্বল। জগতের শ্রেষ্ঠ মনীষীরাও আজ র্তাহাব প্রতিভার পূজা করিতে দ্বিধা করিতেছেন না। মানুষের মনের সুখ দুঃখের এমন সকল জিনিষ। লইয়া তিনি কারবার করেন, যাহা সর্বদেশের সর্বদেশের সর্বকালের সকল মানুষকে আনন্দ দিবার ক্ষমতা রাখে। তাই তিনি সাধারণ কবির মত কোনো বিশেষ যুগ বা বিশেষ দেশের কবি নহেন, তিনি সর্বদেশের সর্বকালের কবি-তিনি বিশ্বকবি। সুতরাং বিশ্বমানবের মিলনের বাণী ঘোষণা করিবার যে তিনিই সর্বাপেক্ষা যোগ্য ব্যক্তি, তাহাতে কোনও সন্দেহ নাই। বিশ্ব-কবির সাধনা জয়যুক্ত হােক!