পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুরেন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় 登a সুরেন্দ্রনাথের চেষ্টাতেই হ্যারিসন সাহেবের অকাল-মৃত্যুর পর তাহার নামেই হ্যারিসন রোডের নামকরণ হইয়াছিল। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের মিউনিসিপ্যাল বিলের বিরুদ্ধে প্ৰতিবাদ করিয়া তিনি যে বক্তৃতা করিয়াছিলেন, তাহা হইতে তাহার মিউনিসিপ্যাল আইন সম্বন্ধে প্রগাঢ় জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। র্তাহার যুক্তি যেমন তীব্র ও সারবান ছিল, তেমনি নানা তথ্যে পরিপূর্ণ ছিল। মিউনিসিপ্যালিটির বহু সদস্য এই আন্দোলনে তঁহার সহিত যোগদান করিয়াছিলেন। এত প্ৰতিবাদ সত্ত্বেও বিলটি পাশ হওয়ায় তিনি কর্পোরেশনের সদস্যের পদ পরিত্যাগ করেন। সংবাদপত্র সম্পাদনায় সুরেন্দ্রনাথ যে কৃতিত্ব দেখাইয়াছিলেন, সেরূপ কৃতিত্ব দেখাইবার সৌভাগ্য খুব অল্প বাঙালির ভাগেই ঘটিয়াছে। স্বনামধন্য ডব্লিউ-সি-ব্যানার্জি 'বেঙ্গলি* নামে একখানা ইংরেজি কাগজের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে কাগজখানির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হইয়া পড়ে। কিন্তু সুরেন্দ্রনাথ এই কাগজের পরিচালনার ভার গ্ৰহণ করিয়া অল্প দিনের ভিতরেই ইহার এত উৎকর্ষ সাধন করেন যে, তখনকার দিনে ‘বেঙ্গলিই বাংলার শ্রেষ্ঠ সংবাদপত্র ছিল। ইহার সম্পাদকীয় মন্তব্যকে রাজপুরুষেরাও রীতিমত ভয় করিয়া চলিতেন। এই পত্রের আন্দোলনের দ্বারা সুরেন্দ্ৰনাথ গভর্নমেন্টের অনেক অন্যায়ের প্রক্তিকর করিয়াছিলেন এবং দেশের অশেষ হিতসাধন করিয়াছিলেন। একবার একটি প্রবন্ধের জন্য তঁহকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হইয়াছিল। হাইকেটের বিচারক মিঃ নরিস কোনো একটি মামলায় কোনো এক পরিবারের প্রতিষ্ঠিত দেব-বিগ্ৰহ প্রকাশ্য আদালতে উপস্থিত করিবার আদেশ দিয়াছিলেন। এরূপ আদেশের দ্বারা হিন্দুর মনে অত্যন্ত আঘাত দেওয়া হইয়াছে এবং বিচারুক অত্যন্ত অন্যায় করিয়াছেন, ইহাই ছিল প্ৰবন্ধের প্রতিপাদ্য বিষয়। প্রবন্ধের ভাষা অত্যন্ত তীব্র ছিল। বিচারপতি নরিস ক্রুদ্ধ হইয়া সুরেন্দ্রনাথের নামে মামলা আনয়ন করেন। বিচারে তঁহার প্রতি বিনা শ্ৰমে দুই মাসের জন্য কারাবাসের আদেশ প্রদত্ত হয়। এই কারাদণ্ড সুরেন্দ্রনাথকে অধিকতর জনপ্রিয় করিয়া তুলিয়াছিল। পরে সুরেন্দ্রনাথের প্রতি মিঃ নরিসের মনোভাব পরিবর্তিত হইয়াছিল। সুরেন্দ্রনাথ তাহার বন্ধুগণ সহ ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে, ভারতবর্ষের সম্বন্ধে আন্দোলন করিবার জন্য যখন ব্রিস্টলে গিয়াছিলেন, তখন মিঃ নরিস অযাচিত ভাবে আঁহাকে অনেক সাহায্য করিয়াছিলেন। জাতীয় মহাসমিতির সৃষ্টির প্রথম হইতেই এই প্রতিষ্ঠানটির সহিত সুরেন্দ্রনাথের যোগ ছিল। এই সভার তিনি একজন শক্তিমান সভ্য ছিলেন। ভারতবর্ষের সমস্ত প্রদেশের প্রতিনিধিই তাহাকে বিশেষ শ্ৰদ্ধা ও সম্মান করিতেন। বস্তুত সুরেন্দ্রনাথের চেষ্টা, উদ্যম, অধ্যবসায় ও অসাধারণ বাগ্নিতা গুণেই কংগ্রেসের শক্তি বিশেষভাবে বধিত হইয়াছিল। তিনি দুইবার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হইয়াছিলেন। বঙ্গভঙ্গের কথা পূর্বেই উল্লেখ করা হইয়াছে। এই আন্দোলনে সুরেন্দ্রনাথ যে তেজস্বিতা, নিভীকতা ও কর্মতৎপরতা দেখাইছিলেন, তাহা অতুলনীয়। বঙ্গভঙ্গের প্ৰতিবাদকল্পে তিনি অক্লাস্তুভাবে সভাসমিতিকরিয়াছিলেন, সমগ্ৰ বঙ্গদেশে পরিভ্রমণ করিয়া