পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ ケ বঙ্গ-গৌরব জনসাধারণকে ইহার প্রতিবাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করিয়াছিলেন, বিদেশি বর্জনের মন্ত্রে ভাল চক্ষে দেখিতেন না। বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ ইমাের্সনের উদ্যত রোষ প্রকাশ্যেই তাহার উপর পতিত হইয়াছিল। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বরিশালে প্ৰাদেশিক সমিতি আহূত হয়। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এই সম্পর্কে সুরেন্দ্রনাথকে অপমানিত করিলেন, অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করিলেন, অবশেষে সমিতির অধিবেশন বন্ধ করিয়া দিলেন। এইরূপে দেশসেবা করিতে গিয়া সুরেন্দ্রনাথ কতবার যে লাঞ্ছিত হইয়াছেন, তাহার সংখ্যা করা যায় না। সুরেন্দ্রনাথ দেশকে ভালবাসিতেন, বিদেশি শাসকদের উপরেও তঁহাদের যথেচ্ছাচারের জন্য র্তাহার যথেষ্ট বিদ্বেষ ছিল। কিন্তু তিনি চরমপন্থী ছিলেন না-সংস্কারের ভিতর দিয়াই তিনি স্বাধীনতা কামনা করিতেন। সেইজনা ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে যখন ভারতবর্ষে শাসনসংস্কার প্রবর্তিত হয়, তখন ভারতীয় অন্যান্য নেতার মত তিনি সে সংস্কারকে উপেক্ষা করিতে পারেন নাই। এই জন্যই এই সংস্কারকে ধ্বংস করিবার জন্য যে অসহযোগ আন্দোলন জাগিয়া উঠিয়াছিল, তাহার সহিত তাহার যোগ ছিল না। বরং তিনি শাসনসংস্কার যাহাতে সার্থক হয়, তাহারই চেষ্টা করিয়াছিলেন এবং এই উদ্দেশ্যে গভর্নমেন্ট যখন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তাহকে মন্ত্রিত্ব গ্রহণের জন্য আহ্বান করিয়াছিলেন, তখন তিনি মন্ত্রিত্ব গ্রহণেও দ্বিধা বোধ করেন নাই। পথ লইয়া মতভেদ থাকিলেও সুরেন্দ্রনাথের দেশপ্রেম যে অকৃত্রিম ছিল, তাহাতে সন্দেহ করিবার উপায় নাই। দেশের কল্যাণের জন্য তিনি কোনো দুঃখকেই দুঃখ বলিয়া মনে করিতেন না। তাহার মত বাক্ষ্মী কাচিৎ জন্মে। এই বাগ্নিতার দ্বারা তিনি দেশের জনসাধারণকে যেমন উদ্ধৃদ্ধ করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন, তেমনি বিলাতে যাইয়াও ভারতের ভাগ্যবিধাতাদিগকে আঘাতের পর আঘাত করিয়া ভারত সম্বন্ধে সচেতন করিয়া তুলিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। যে দেশাত্মবোধ ভারতের জনসাধারণের মনে আজ জাগিয়া উঠিয়াছে, সুরেন্দ্রনাথের অদম্য অধ্যবসায়ের উপরেই তাহার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। গত ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ৭৭ বৎসর বয়সে তিনি পরলোক গমন করিয়াছেন। এ কথা বলিলে অত্যুক্তি হইবে না যে, সুরেন্দ্রনাথই। ভারতের জাতীয় আন্দোলনের প্রধান পুরোহিত, প্রধান যজ্ঞিক ছিলেন। এখন যে বাংলাদেশে, শুধু বাংলাদেশে কেন, ভারতবর্ষে যে জাতীয়তার সম্পূহ জাগিয়া উঠিয়াছে, যে কর্মপ্রচেষ্টা দেখা দিয়াছে, সুরেন্দ্রনাথই তাহার স্রষ্টা। তঁহারই জ্বালাময়ী বাণী, তঁহারই প্ৰাণোন্মদিনী বাগবিভূতি কেবল বাংলাদেশ বলিযা নহে, সমস্ত ভারতবর্ষকে দেশপ্রেমে উদ্ধৃদ্ধ করিয়াছিল। শেষ জীবনে তিনি যে পথ অবলম্বন করিয়াছিলেন, এ কালের জননেতৃবৃন্দ সে পথকে কল্যাণের অন্তরায় বলিয়া মনে করিলেও কেহই সুরেন্দ্রনাথকে তাহার প্রাপ্য শ্ৰদ্ধার অর্ঘ্য প্রদান করিতে বিরত হয় নাই। বাঙালি চিরদিন সুরেন্দ্রনাথকে তঁহাদেরই একজন বলিয়া গৌরব অনুভব করবে।