পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\SO বঙ্গ-গৌরব প্ৰবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া গুরুদাস এফ, এ পড়িবার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভরতি হন। গুরুদাস খুব ভাল ইংরেজি লিখিতে পারিতেন। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম স্থান অধিকার করিয়া তিনি এফ. এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইংরেজির ন্যায় বাংলাতেও গুরুদাসের অদ্ভুত পারদর্শিতা ছিল। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত যখন র্তাহার নূতন ছন্দে 'মেঘনাদবধ’ রচনা করেন, গুরুদাস তখন বি. এ ক্লাসের ছাত্র। দেশে তখন এই কাব্য লইয়া নানা তীব্র সমালোচনা এবং নিন্দাবাদ চলিতেছিল। কিন্তু এ সকল সমালোচনায় কৰ্ণপাত না করিয়া গুরুদাস নিজের বুদ্ধির দ্বারা বিচার করিয়া কাব্যখনি পাঠ করেন। মাইকেলের ভাবার গান্তীর্য, ছন্দের নূতনত্ব এবং বর্ণনাভঙ্গি দেখিয়া তিনি মুগ্ধ হইয়া গেলেন। এই গ্রন্থের একটি সমালোচনা লিখিয়া ইহাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকাভুক্ত করিবার জন্য অনুরোধ করিয়া তিনি সেই সমালোচনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্য-নির্বাহক সভার সদস্য ডক সাহেবের কাছে পঠাইয়া দিয়াছিলেন। ফলে ‘মেঘনাদবধ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য শ্রেণিভুক্ত হইয়াছিল। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম স্থান অধিকার করিয়া গুরুদাস বি. এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন। এম. এ পরীক্ষাতেও গণিত শাস্ত্ৰে প্ৰথম স্থান অধিকার করেন এবং একটি একটি স্বর্ণপদক লাভ করেন। বি. এল পরীক্ষাতেও তঁহার যশ ক্ষুন্ন হয় নাই। এম. এ. পরীক্ষাতেও তাহার স্থান প্রথম হইয়াছিল এবং তিনিই স্বর্ণপদক লাভ করিয়াছিলেন। বি. এ. পাশ করার পর গুরুদাস প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিতের সহকারী অধ্যাপক নিযুক্ত হন; এম. এ পাশ করার পর তিনি উক্ত কলেজের অধ্যাপকের পদে স্থায়ী হন। এই চাকুরি গ্রহণ ব্যাপার লইয়া বেশ একটা কীেতুককর ঘটনা ঘটিয়াছিল। অধ্যাপকের পদের জন্য গুরুদাসকে শিক্ষাবিভাগের ডিরেক্টরের সহিত দেখা করিতে হয়। গুরুদাসের বেশভূষা নিতান্তই সাদাসিধা ধরনের ছিল। একখানি সাধারণ রকমের রংএর বনাত গায়ে দিয়া তিনি সাহেবের সঙ্গে দেখা করিতে গেলেন। সাহেব তাহাকে টোলের পণ্ডিত মনে করিয়া কিছু জিজ্ঞাসা না করিয়াই বলিয়া বসিলেন। এখানে টােলের পণ্ডিতের কোন কাজ খালি নাই।” কিন্তু গুরুদাস যখন বিনীতভাবে তাহাকে নিজের পরিচয় প্রদান করিলেন, তখন সাহেবের সংকোচ ও বিস্ময়ের সীমা রহিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অনাড়ম্বর অথচ উজ্জ্বলতম রত্নকে সাহেব সেই মুহূর্তেই অধ্যাপক পদের নিয়োগপত্র লিখিয়া দিয়াছিলেন। গুরুদাস বেশীদিন প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা করিবার সুযোগ পান নাই। কিন্তু সেই অল্প কালের মধ্যেই সদয় ব্যবহারে ও চরিত্রগুণে তিনি ছাত্রদের নিকট অতি প্রিয় অধ্যাপকররূপে পরিগণিত হইয়াছিলেন। কাহাকেও তিনি কখন কর্কশ ভাষায় তিরস্কার করিতেন না। কেহ কোনো অন্যায় করিলে মৃদু অনুযোগ করতেন মাত্র। তাহাতেই আশাতিরিক্ত ফল হইত। এই অধ্যাপনার কালেই বিখ্যাত ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্ৰ দত্তই এবং প্রসিদ্ধ কবি নবীনচন্দ্র সেন“ তাহার ছাত্র ছিলেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে বি. এল পরীক্ষা পাশ করিবার পর গুরুদাস তিনশত টাকা বেতনে