পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি কলিকাতার নারিকেলডাঙায় মহাত্মা গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতার নাম রামচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। রামচন্দ্র একজন সামান্য দরিদ্র ব্রাহ্মণপণ্ডিত ছিলেন। 'কার ঠাকুর' নামক একটি কোম্পানিতে মাত্র ৫০ টাকা বেতন তিনি কর্ম করিতেন। এই অর্থেই তাঁহাকে সমগ্র পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদন নির্বাহ করিতে হইত। গুরুদাসের বয়ঃক্রম যখন দুই বৎসর দশ মাস, সেই সময়ে তাঁহার পিতার মৃত্যু হয়। যে সামান্য আয়ের উপর নির্ভর করিয়া একটি ক্ষুদ্র পরিবারের কায়ক্লেশে দিনাতিপাত হইতেছিল, রামচন্দ্রের মৃত্যুতে সে আয়ের পথটুকুও অন্তর্হিত হইল। কিন্তু রামচন্দ্রের পত্নী সোনামণি দেবী অতিশয় তীক্ষ্ণবুদ্ধিশালিনী ও সরলমনা রমণী ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুতে শিশু পুত্রকে লইয়া একান্ত নিঃসম্বল হইয়া পড়িলেও তিনি বিচলিত হইলেন না, এবং গুরুদাসের শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের যাহাতে কোনো প্রকার আঘাত উপস্থিত না হয়, তাহার ব্যবস্থা করিতে লাগিলেন। এইরূপে শৈশবে পিতৃহীন এবং নিঃসহায় হইয়াও একমাত্র জননীর যত্ন ও চেষ্টায় গুরুদাস মানুষের মত মানুষ হইয়া উঠিবার সুযোগ পাইয়াছিলেন।  প্রথমে একটি ক্ষুদ্র পাঠশালায় গুরুদাসের শিক্ষা আরম্ভ হইয়াছিল। নয় বৎসর বয়সে তাঁহাকে কলকাতার জেলারেল এসেমব্লি ইন্‌স্টিটিউসনে' ভরতি করিয়া দেওয়া হয়। এই বিদ্যালয় বর্তমানে স্কটিশ চার্চেস্ কলেজ নামে পরিচিত। তখনকার দিনে এই বিদ্যালয়ে ছাত্রদিগকে বিনা বেতনে শিক্ষা দেওয়া হইত। গুরুদাসকে এই জন্যই উহাতে প্রবিষ্ট করিয়া দেওয়া হইয়াছিল। জেনারেল এসেমব্লিতে কিছুকাল অধ্যয়ন করিবার পর শুরুদাস ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে প্রবিষ্ট হন এবং মামার বাড়িতে থাকিয়া পড়াশুনা করিতে থাকেন। গুরুদাসের মামা খুব বড়লোক ছিলেন। বড়লোকের বাড়িতে নানা শ্রেণির লোকের সংসর্গে পুত্রের ভবিষ্যৎ পাছে নষ্ট হয় এই আশঙ্কায় সোনামণি পুত্রকে পুনর্বার নিজ গৃহে লইয়া আসেন এবং স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে ভরতি করিয়া দেন। হেয়ার স্কুলে ভরতি হওয়ার পর অষ্টম শ্রেণি হইতে তিনি একেবারে পঞ্চম শ্রেণিতে এবং পঞ্চম শ্রেণি হইতে ডবল প্রমোশন পাইয়া তৃতীয় শ্রেণিতে উঠেন। এইরূপে আট বৎসরের পড়া পাঁচ বৎসরে সমাপ্ত করিয়া ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে পনেরো বৎসর বয়সে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। হেয়ার স্কুলের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বপ্রথম স্থান অধিকার করেন। গুরুদাসের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। বাড়িতে তিনি যখন পণ্ডিতের নিকট সংস্কৃত পড়িতেন, সেই সময়েই ‘অমরকোষ” নামক সংস্কৃত অভিধানখানি সম্পূর্ণ কণ্ঠস্থ করিয়া ফেলিয়াছিলেন।