পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরবিন্দ ঘোষ * তাহার জ্ঞান খুব সামান্যই ছিল। তাহা হইলেও তাহার হাদয় ভারতের মাটির প্রভাব হইতে মুক্ত হইতে পারে নাই। ইউরোপীয় সভ্যতার ভিতর মানুষ হওয়া সত্ত্বেও ইউরোপীয় জীবন তঁহাকে তৃপ্তি দিতে পারে নাই ; মনেপ্ৰাণে তিনি এমন একটা জিনিষ চাহিতেন যাহা কেবল ভারতবর্ষই দিতে পারে। বরোদায় তাহার ক্রমশ পদোন্নতি হইতে লাগিল। কনফিডেন্সিয়্যাল সেক্রেটারি হইতে তিনি দেওয়ানের পদ প্রাপ্ত হইলেন এবং সেখান হইতে স্টেটু কলেজে বদলি হইলেন। এখানে কিছুদিন অধ্যাপকের কার্য করার পর তিনি গায়কোয়াড়ের প্রাইভেটু সেক্রেটারির পদ লাভ করেন এবং অবশেষে স্টেটু কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল হন। এইরূপে বরোদায় অরবিন্দ চৌদ্দ বৎসর কাল অতিবাহিত করেন। বরোদায় অরবিন্দ নানাদিক দিয়া আপনার কৃতিত্ব প্রদর্শন করিয়া যথেষ্ট সুনাম অর্জন করিয়াছিলেন এবং সকলেরই শ্রদ্ধা ও প্রীতি আকর্ষণ করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। আরও অধিক দিন সেখানে থাকিলে কোনো সম্মান বা কোনো পুরস্কার লাভ করাই হয়ত তাহার পক্ষে অসম্ভব হইত না। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অরবিন্দের মনে একটা পরিবর্তনের বাতাস বহিতে আরম্ভ করিল। জাতির পরাধীনতার দুঃখ দিন দিন তিনি নিজের অন্তরে গভীর হইতে গভীরতর ভাবে উপলব্ধি করিতে লাগিলেন। অবশেষে জাতির স্বাধীনতার সঙ্গীতে র্তাহার মনপ্রাণ মুখরিত হইয়া উঠিল এবং জাতির স্বাধীনতা লাভের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করিবার দুৰ্দমনীয় বাসনায় তিনি সমস্ত ঐশ্বর্য এবং সমস্ত সম্মানের সম্ভাবনাকে পদদলিত করিয়া কৰ্মসমুদ্রে কঁপাইয়া পড়িলেন। দেশের চিস্তায়, দেশের হিতে, দেশের কাজে তিনি আপনাকে নিঃশেষে উৎসর্গ করিয়া দিলেন। বাংলার আকাশে বাতাসে এই সময় একটা নূতন ভােব প্রবাহিত হইতেছিল। একটা নূতন ধরনের জাতীয়তার অনুপ্রেরণায় বাঙালির চিত্ত তখন ভরপুর। সুতরাং মহৎ আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত এবং দেশসেবার অদম্য আকাঙক্ষা লইয়া অরবিন্দ যখন কলিকাতায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। সমগ্র বাঙালি জাতিকায়মনোবাক্যে তখন তঁহাকে আপনাদের ভিতর সাগ্রহে বরণ করিয়া লইল । এই সময় গভর্নমেন্ট এক বিধি নির্দেশ করিয়া ছাত্ৰগণের রাজনীতির আন্দোলনে যোগদান নিষিদ্ধ করিয়া দেন ; তাহার জন্য দেশময় একটা প্ৰবল অসস্তোষের ভাব জাগিয়া উঠে। তাহার ফলে পুরাতন স্কুল কলেজের প্রতিও লোকের বিরাগ জন্মে এবং বহু ংখ্যক জাতীয় বিদ্যালয়ের সৃষ্টি হয়। অরবিন্দ এই সময়ে দেশে ফিরিয়া আসায় তিনিই জাতীয় শিক্ষাপরিষদের অধ্যক্ষ মনোনীত হন। অরবিন্দের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা এবং দক্ষতা হয় তা জাতীয় শিক্ষায়তনগুলিকে ঈপ্সিত আদর্শে উত্তীর্ণ করিয়া দিতা ; কিন্তু পরিষদের পুরাতন-পহী কতকগুলি সভ্যোর সঙ্গে মতদ্বৈধ সৃষ্টি হওয়ায় ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের আগষ্ট মাসে তিনি অধ্যাক্ষের পদ পরিত্যাগ করেন। বিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভালোবাসা এবং ভক্তি অরবিন্দ এরূপ গভীর ভাবেই লাভ করিয়াছিলেন যে, তাহার অবসর গ্রহণের সময় বিদ্যালয়ের প্রত্যেক ছাত্র অশ্রু-সজল নেত্ৰে তাঁহাকে বিদায়-অভিনন্দন করিয়াছিল। বঙ্গ-গৌরব-৫