পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VS বঙ্গ-গোিবব ইহার পর অরবিন্দের উপর “বন্দেমাতরম" কাগজের সম্পাদন ভার অর্পিত হয়। এই কাগজের সম্পাদনায় তিনি অদ্ভুত প্রতিভার পরিচয় প্রদান করিয়াছিলেন। দেশের লোককে শিক্ষিত ও দেশপ্রেমে উদ্ধৃদ্ধ করিবার জন্য তিনি প্রতিদিন ইহাতে প্ৰবন্ধ লিখিয়াছেন। অরবিন্দ হিংসা ও আইন অমান্যের ভাব লইয়া দেশসেবার ঘোর বিরোধী ছিলেন। নানা প্রবন্ধের ভিতর দিয়া তিনি এ কথা ব্যক্ত করিতে দ্বিধা করেন নাই। কিন্তু দেশসেবকদের উপর এবং স্বদেশি আন্দোলনের উপর সরকারের পক্ষ হইতে এই সময় যে ব্যবস্থা চলিতে থাকে, তাহার ফলে বাঙালি “বন্দেমাতরম" এর মন্ত্র ভুলিয়া “যুগান্তরে’র সৃষ্টি করে এবং এই ভাবে বাংলায় বিপ্লবের আন্দোলন জাগিয়া উঠে। অরবিন্দ এ ভাবের ঘোব বিরোধী ছিলেন। অরবিন্দ দেশসেবার কাজকে ভগবানের নির্দেশ বলিয়া জ্ঞান করিতেন। দেশসেবার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসও তাহার বাড়িয়া চলিতেছিল। এই সময় তার স্ত্রীকে তিনি যে সব পত্ৰ লিখিয়াছিলেন, সেই সব পত্ৰ হইতেও তাহার দেশপ্রীতি ও ভগবৎ প্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই সহরে জাতীয়তা সম্বন্ধে তিনি একটি বক্তৃতায় তিনি বলিয়াছিলেন –“মুখে জাতীয়তার কথা বলিলেই দেশপ্রেমের পরিচয় দেওয়া হয় না। ফলের কথা চিন্তা না করিয়া ভগবানে অখণ্ড বিশ্বাস রাখিয়া, নিজেকে ভগবানের যন্ত্রম্বরূপ মনে করিয়া যিনি দেশেব কাজ করিয়া যাইতে পারেন, তঁহাকেই সত্যকারী দেশপ্রেমিক বলা যায়। দেশসেবার কার্যে নেতার কোনো প্রয়োজন নাই, নেতার আদেশ বা পরিচালনাব কোন আবশ্যক নাই। নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী যতটুকু পারা যায় তাহাঁই যদি আমরা করিয়া যাইতে পারি, তবে আমরা ভগবানের অনুগ্রহ নিশ্চয় লাভ করিব।” ইহা হইতেই অরবিন্দের জাতীয়তার আদর্শ যে কত উচ্চ ছিল, তাহা বুঝিতে পারা যায়। আরবিন্দের দেশ-সেবার আদর্শ এবং তঁহার অহিংস-নীতি বিপ্লববাদের সম্পূর্ণ বিপরীত। তথাপি তিনি রাজরোষ হইতে মুক্তি পান নাই। একান্ত অপ্রত্যাশিত ভাবে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দেব ৩০ মে তারিখে গভীর রাত্ৰিতে তঁহার কলিকাতার গৃহে পুলিশ-কর্মচারীরা উপস্থিত হইয়া ভঁহাকে গ্রেপ্তাব করে। তাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল--তিনি নানারকমের মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্ৰ দিয়া বিপ্লববাদী দিগকে সাহায্য করিয়াছেন। অরবিন্দের মামলা এক বৎসর ধরিয়া চলিয়াছিল। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন অরবিন্দের পক্ষে এই মামলার পরিচালনার ভার গ্রহণ করিয়াছিলেন। যুক্তি, তর্ক, সাক্ষ্য, প্রমাণ দিয়া তিনি স্পষ্ট প্রমাণ করিয়াছিলেন। যে, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ অলীক। তঁহার চেষ্টায় অরবিন্দ নির্দোষ প্রতিপন্ন হইয়া মুক্তিলাভ করেন । এই মোকদ্দমার ফলে অরবিন্দের ধর্মবিশ্বাস আরও গভীর হইয়া উঠে। ইহার পরবর্তী সমস্তু কাজেই তাহার এই ধর্মের ভাৰটাই প্রধান ও সুপরিস্ফুট হইয়া দেখা দিয়াছে। বরিশাল ঝালকাঠিতে যে রাষ্ট্ৰীয় সভার অধিবেশন হয়, তাহাতে তিনি যে বক্তৃতা দিয়াছিলেন, তাহাতে বলিয়াছিলেন,-“ভগবানের হাতুড়ির নীচে আমরা লোহার মত।