পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জগদীশচন্দ্ৰ বসু ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে এক সম্রাস্ত কায়স্থ বংশে জগদীশচন্দ্ৰ বসু জন্মগ্রহণ করেন। র্তাহার পিতা স্বগীয় ভগবানচন্দ্ৰ বসু, ফরিদপুরের সাব-ডিভিশনাল অফিসার ছিলেন। অতি শৈশব হইতেই জগদীশচন্দ্রের মনে একটা নূতন কিছু আবিষ্কারের দিকে বিশেষ ঝোঁক ছিল। জগদীশচন্দ্রের পিতা শিল্প-বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় কতকগুলি স্কুল প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। ইহা হইতেই জগদীশচন্দ্রের মনে আবিষ্কারের প্রথম স্পাহা জাগ্রত হয়। ভগবানচন্দ্ৰ পুত্রের এই মনের গতি লক্ষ্য করিয়া সেই ভাবেই তাঁহাকে শিক্ষিত করিয়া তুলিতে চেষ্টা করেন। এই সময়ে ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিক শিক্ষা-পদ্ধতির কেবল সূচনা হইয়াছে। ফলে সব দিক দিয়া পাশ্চাত্যের অনুকরণ দেশে প্রবল হইয়া উঠিতেছিল। সুতরাং ভগবানচন্দ্ৰ পুত্রের প্রথম শিক্ষা ইংরেজি বিদ্যালয়ে না দিয়া গ্ৰাম্য পাঠশালায় তাহাকে ভরতি করিয়া দেন এবং গ্রামের কৃষক, তঁতি, কামার, কুমার প্রভৃতি সকল শ্রেণির ছেলেদের সঙ্গে তিনি সমান ভাবে শিক্ষিত হইয়া উঠিতে থাকেন। ইহার একটি চমৎকার সুফল ফিলিয়াছিল। জগদীশচন্দ্ৰ নিজেকে সকলের সমান মনে করিতে শিখিয়াছিলেন এবং কোনো কারণেই আপনাকে বড় বলিয়া ভাবিবার অবসর পান নাই। বাংলাদেশের সম্রাস্ত এবং উচ্চপদস্থ লোকদের বাড়িতে ছোট ছেলেমেয়েদের রক্ষণাবেক্ষণের ভার সাধারণত হিন্দুস্থানি দারোয়ানদের উপরেই অৰ্পিত হইতে দেখা যায়। কিন্তু জগদীশচন্দ্ৰ যাহার কোলে শৈশবে লালিত হইয়াছিলেন, সে ছিল দসু্যদলের একজন নামজাদা সর্দার। কথিত আছে, ভগবানচন্দ্র যখন ফরিদপুরের মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, সেই সময়ে তিনি এই ডাকাতকে গ্রেপ্তার করিয়াছিলেন। বিচারে দসু্যর বহু বৎসরের জন্য কারাদণ্ড হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, কারামুক্ত হইয়া সে ভগবানচন্দ্রের কাছেই ফিরিয়া আসে এবং একটা কিছু চাকুরির প্রার্থী হয়। ভগবানচন্দ্ৰ লোকটাকে সৎভাবে জীবন যাপনের সুযোগ দিবার জন্য তাহাকে বাড়ির চাকরের পদে বহাল করেন এবং তাহার উপর জগদীশচন্দ্ৰকে কোলে করিয়া স্কুলে পৌছাইয়া দেওয়ার ভার অর্পণ করেন। এই সময়ে জগদীশচন্দ্ৰ চারি বৎসরের শিশু মাত্র। সুতরাং ইচ্ছা করিলে দসু্যু ভৃত্য তাহাকে গ্রেপ্তার করার প্রতিশোধ সহজেই লইতে পারিত। কিন্তু তাহার উপর যে গুরুতর বিশ্বাসের কাজ অপিত হইয়াছিল, সে জীবনে কোনদিন তাহার অবমাননা করে নাই ; বরং বিপদে আপদে চিরদিন সে এই পরিবারের অনুগত ছিল। জগদীশচন্দ্রের লেখাপড়ার উন্নতির দিকে ভগবানচন্ত্রের প্রখর দৃষ্টি ছিল। জগদীশচন্দ্ৰ