পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“ለo বঙ্গ-গৌরব ইহার পর জগদীশচন্দ্র রয়েল ইনস্টিটিউসনে তঁহার গবেষণা সম্বন্ধে বক্তৃতা করার জন্য আহূত হন। কোন বৈজ্ঞানিককে এইরূপ বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আহ্বান করা তাহার পক্ষে খুব সম্মানের কথা। জগদীশচন্দ্ৰ বক্তৃতা প্ৰদান করার জন্য তিন বার আহূত হইয়াছিলেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে তীহার প্রথম বক্তৃতা প্রদত্ত হয়! তৎপর ১৯০১ এবং ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি যথাক্রমে তাহার দ্বিতীয় ও তৃতীয় বক্তৃতা প্ৰদান করেন। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে এক বিজ্ঞান মহাসভার অধিবেশন হয়। বাংলার লেফটেন্যান্ট গবর্নার স্যার জন উডবার্ন জগদীশচন্দ্ৰকেই ভারতের প্রতিনিধি মনোনীত করিয়া সেই সভায় প্রেরণ করিয়াছিলেন। সেখানে তিনি তঁহার কার্য সম্পাদনে এরূপ দক্ষতা ও কৃতিত্ব প্রদর্শন করিয়াছিলেন যে, তাহার প্রশংসায় ফ্রান্স মুখরিত হইয়া উঠিয়াছিল। যে দেশ এরূপ এক ব্যক্তিকে তাহার প্রতিনিধি করিয়া পাঠাইতে পারে, সে দেশ যে গৌরবের পাত্ৰ, সম্মিলিত পণ্ডিতমণ্ডলী শত মুখে সে কথা কীর্তন করিয়াছিলেন। ইহার কিছুকাল পরে তাহাব নূতন আবিষ্কার সম্বন্ধে প্যারিসে কয়েকটি বক্তৃতা প্ৰদান করিবার জন্য তিনি নিমন্ত্রিত হন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে তীহাকে ফ্রান্সের পদার্থ-বিজ্ঞান পরিষদের সদস্য নিযুক্ত করা হয়। অক্সফোর্ড এবং কেন্ত্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ও জগদীশচন্দ্ৰকে তঁহাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা প্রদানের জন্য নিমন্ত্রণ করিয়াছিল। নানারূপ পরীক্ষা এবং চিত্রের সাহায্যে তিনি ঐ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি বক্তৃতা প্ৰদান করেন। তঁহার বক্তৃতা এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাসমূহ দেখিয়া শুনিয়া বহু খ্যাতনামা পণ্ডিত নিঃসংকোচে স্বীকার করেন যে, জগদীশচন্দ্ৰ তাহার আবিষ্কার দ্বারা যে সম্পদ দান করিয়া গেলেন, তজজন্য সমগ্র ইউরোপ ভারতবর্ষের নিকট ঋণী থাকিবে। ইহার পর জগদীশচন্দ্ৰ আমেরিকা ভ্ৰমণে বাহির হন এবং সেখানকার বহু স্থান পরিদর্শন করেন। নিউইয়র্ক, হার্ভার্ড, কলোম্বিয়া, চিকাগো প্রভৃতি যে সমস্ত স্থানে তিনি গিয়াছিলেন, সর্বত্রই শিক্ষিত ব্যক্তিগণ আনন্দের সহিত তাহার বক্তৃতা শ্রবণ করিয়াছিলেন এবং নানারূপে তাহাকে অভিনন্দিত করিয়ছিলেন। এই পৃথিবী ভ্ৰমণ শেষ করিয়া জগদীশচন্দ্র দেশে ফিরিয়া আসিলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাহাকে ‘ডক্টর অব সায়েন্স” উপাধি প্ৰদান করিয়া সম্মানিত করে। তাহার পর ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় হইতে তাহাকে তঁহার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্বন্ধে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করা হয়। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় পারিশ্রমিক স্বরূপ তঁহাকে ১২০০ টাকা দিতে চাহে। কিন্তু জগদীশচন্দ্র আপনার স্বাভাবিক উদারতা গুণে সে টাকা গ্ৰহণ করেন নাই। তিনি টাকাগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে ফিরাইয়া দিয়া উহা হইতে কোন উপযুক্ত ছাত্ৰকে গবেষণা কার্যের সাহায্যের জন্য মাসিক ১০০ টাকা হিসাবে একটি বৃত্তি দানের অনুরোধ করিয়াছিলেন। কিন্তু জগদীশচন্দ্রের যে সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক জগতে এক তুমুল আন্দােলনের সৃষ্টি করিয়াছে, তাহার কথা এখনও বলা হয় নাই! জগদীশচন্দ্ৰ নিঃসংশয়ে প্রমাণ করিয়া