পাতা:বঙ্গ গৌরভ - জলধর সেন.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জগদীশচন্দ্ৰ বসু Գ ֆ দেখাইয়াছেন যে, গাছপালা এবং জীবজন্তুর জীবনে কোনো প্ৰভেদ নাই। গাছপালাকে আমরা সাধারণত প্ৰাণহীন বলিয়া মনে করি বটে, কিন্তু তাহারাও মানুষ এবং অন্যান্য জীবজন্তুর ন্যায় সুখ দুঃখ, হর্ষ ও বেদনা অনুভব করে। এই বৈজ্ঞানিক সত্য প্রমাণ করিবার জন্য জগদীশচন্দ্ৰকে প্রথমে একটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র আবিষ্কার করিতে হইয়াছিল। ইহার ভিতরের কাজ এত জটিল সূক্ষ্ম যে শুনিলে চমৎকৃত হইতে হয়। জগদীশচন্দ্ৰ নিজের তত্ত্বাবধানে ভারতীয় শিল্পী দ্বারা এই যন্ত্রগুলি নির্মাণ করাইয়াছেন। তঁহার এই আবিষ্কার পৃথিবীময় ছড়াইয়া পড়ায় এই ভারতীয় যন্ত্রগুলিও আজ নানা দেশবিদেশের লোক কিনিয়া লইয়া যাইতেছে। জগদীশচন্দ্রের আর একটি আবিষ্কার এই যে, জীবজন্তুর ন্যায় গাছপালারাও রাত্রিতে নিদ্রা যায় এবং সকালবেলা তাহাদের ঘুম ভাঙে। পরীক্ষা দ্বারা এই মত প্রতিপন্ন করার জন্য জগদীশচন্দ্ৰকে অনেক বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকের মতবাদ খণ্ডন করিতে হইয়াছিল। এইরূপে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বহু বিখ্যাত মনীষীর প্রতিষ্ঠিত মতবাদ খণ্ডন করিয়া নূতন নূতন মতবাদ প্রচার করার চেষ্টায় জগদীশচন্দ্ৰকে যে কত উপহাস এবং লাঞ্ছনা সহ্য করিতে হইয়াছে তাহার সংখ্যা নাই। কিন্তু যাহা সত্য তাহা কখনও অনাদৃত থাকে না। জগদীশচন্দ্ৰও অক্লান্ত চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের বলে অবশেষে স্বমত প্রতিষ্ঠিত করিয়া আজ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক বলিয়া সর্বত্র আদৃত হইতেছেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে জগদীশচন্দ্ৰ “উদ্ভিদের স্পন্দন” নামে একখানি ইংরেজি গ্রন্থ প্ৰকাশ করেন। ইহা তঁহার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলির অন্যতম। ইহাতে তাহার কয়েকটি অদ্ভুত আবিষ্কারের বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ‘Electro-Physiology** নামে তিনি আর একখানি পুস্তক প্রকাশ করেন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে জগদীশচন্দ্রের বয়স পঞ্চান্ন বৎসর পূর্ণ হওয়ায় কার্য হইতে র্তাহার অবসর গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু তাহার প্রেসিডেন্সি কলেজের কার্যাবলির প্রতিষ্ঠার কথা স্মরণ করিয়া এবং ছাত্রদের উপর তাহার অসীম প্রভাব প্রত্যক্ষ করিয়া বাংলা সরকার তঁহার কর্মকাল আরও দুই বৎসর বাড়াইয়া দিয়াছিলেন এবং বিগত ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে জগদীশচন্দ্র কর্ম হইতে অবসর গ্রহণ করিয়াছেন। সাধারণ নিয়মানুসারে পেন্সন না দিয়া পূর্ণ বেতনে তঁহাকে কার্য হইতে অবসর দেওয়া হইয়াছে। ভারত গভর্নমেন্ট আরও অনেক দিক দিয়া জগদীশচন্দ্রের প্রতিভার প্রতি সম্মান দেখাইতে ক্ৰটি করেন নাই। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে গভর্নমেন্ট তাঁহাকে সি. আই. ই. এবং ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট পঞ্চম জর্জের রাজ্যাভিষেকের সময় সি. এস. আই. উপাধি প্রদান করিয়াছেন। র্তাহার আমেরিকা হইতে প্রত্যাগমনের পর তঁহাকে নাইটু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। শেষোক্ত উপাধি প্ৰদান উপলক্ষে কলিকাতায় এক বিরাট সভার অধিবেশন হইয়াছিল। তাহাতে প্ৰফুল্লচন্দ্র রায় জগদীশচন্দ্ৰকে বৈজ্ঞানিক জগতের যুগপ্রবর্তক বলিয়া বর্ণনা করেন এবং তঁহার নিঃস্বার্থপরতা ও অস্তরের উদারতার সবিশেষ প্রশংসা করেন। প্রফুল্লচন্দ্ৰ বলেন যে, জগদীশচন্দ্ৰ ইচ্ছা করিলে তঁহার আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতির দ্বারা ব্যবসায়