পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড

॥ ৯৪॥

হাসিনা বেগম
প্রযত্নে: আফছার আলী খান
গ্রাম- সাধুপাড়া, থানা ও জেলা পাবনা

 ২৮ শে মার্চ ৭১ আমার স্বামী তখন বাড়ীতে। বেলা ১১/১২টায় একটি পাক সেনাদের গাড়ী এসে থামে, জোর করে তারা বাড়ীতে ঢুকে স্বামীকে যেতে বলে। তখন উনি মটরসাইকেল পরিস্কর করছিলেন। লুঙ্গি পরা অবস্থায় মটরসাইকেল নিয়ে যেতে বললেন। কিছুক্ষণ পরেই খবর পেলাম চাঁচড়ার মোড়ে আমার স্বামীকে গুলিকরে মেরেছে। লাশ আনতে গেলে পায় না, মটরসাইকেল ও তারা নিয়ে যায়। তারপর বাসায় থাকা নিরাপদ মনে করলাম না। আমার দুটি ছেলে নিয়ে পথে নামি। যশোর থানা, ইত্যাদি থানাতে তখন কাজে নামি। কাজ শুরু করি মুক্তি যুদ্ধের পক্ষে।

 আমার আব্বা ডি,এস,পি, ছিলেন। সেই বরাত দিয়ে উপরিউক্ত থানাগুলিতে গেছি। পরিচয় দিয়েছি, থেকেছি এবং সেখানে থেকে থানার বর্তমান ফোর্স কত, অস্ত্র কত ইত্যাদি খবর আমি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পরিবেশন করতাম। তারপর মুক্তিবাহিনী ঐসব থানাগুলিতে অপরেশন চালাতো। এতে করে কাজ এগিয়ে চলছিলো। আমি বিভিন্ন থানা ঘুরে ঘুরে কাজ করতে থাকি, সাফল্য ও বেশ আসে। আমার দুটি বাচ্চা নিয়ে ঐভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছিলাম। আমি তখন শৈলকুপা থানাতে আছি এক বাড়ীতে। লোকজন কেউ নেই আমি একাই ছিলাম বাচ্চা দুটি নিয়ে। চারদিকের ঘরবাড়ী সব বিধ্বস্ত শূন্য নি:সঙ্গ ভৌতিক একটি অবস্থা।

 ভাদ্র মাস (তারিখ মনে নেই)। তখন বেলা ১০/১১টার দিকে ভাত রান্না করছিলাম। হঠাৎ করে ২জন পাক সেনা এবং ৪জন রাজাকার এসে আমাকে থানাতে যেতে বলে। তারপর জোর করে ছোট বাচ্চাটিসহ থানায় নিয়ে যায়। অপর বাচ্চাটি পাক সেনা দেখে পালিয়ে যায়। থানাতে নিয়ে গিয়ে মারধোর শুরু করে। থানাতে তখন বহু পাক সেনা এবং রাজাকার ভর্তি ছিল। তখন অন্য পাঁচটি ছেলেকে ধরে এনেছিল। তাদের সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে না। ডানাতে এবং মাজাতে দড়ি বেঁধে শৈলকূপা ব্রীজের পানিতে ডুবিয়ে রাখে ১৪/১৫ঘণ্টা। এ অবস্থায় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। তার পরদিন পানি থেকে তুলে থানার মাঠে ফেলে রাখে। আমার তখন নড়বার মত অবস্থা ছিল না। ঐ ভাবে আছি। একজন রাজাকার এসে ‘এখনো মরেনি’ বলে উপর লাথি মারে। আমার জ্ঞান ছিল না। দারোগার বারবার অনুরোধে আমার প্রাণ ভিক্ষা দেয়। আমার চিকিৎসা করায় ক্রমশ: আমি সুস্থ হয়ে উঠি। আমার সেই পুরাতন বাড়ীতে ফিরে আসি।

সাক্ষর /-
হাসিনা বেগম
২৫/৭/৭৩