পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬৫ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড l SS8 l মোঃ ফরিকুর রহমান কালীবাড়ী সড়ক ভোলা, বরিশাল পাক সেনারা ভোলায় আসার পরপরই মানুষ খুন করে। মেয়ে ধরে এনেও পাশবিক অত্যাচার করে। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি রাত ২টায় হঠাৎ আমার বাড়ী ঘিরে ফেলে। ১০ জনের মত খান সেনা একজন রাজাকার এবং বাঙ্গালী ড্রাইভার। তারা প্রথমে আমার আব্বার সাথে কথা বলে আমার কথা জিজ্ঞাসা করলে আমি উপর থেকে নীচে নেমে আসি। সুবেদার সিদীক আমাকে বন্দী করে গাড়ীতে তোলে। গাড়ীতে ডাঃ ফজলে হোসেন (এম, বি, বি, এস,) কে বন্দি অবস্থায় দেখলাম। গাড়ী মাকছুদুর রহমান এ্যাডভোকেটের বাড়ী যায় তাকে ধরার জন্য কিন্তু তাকে না পেয়ে গাড়ী চলতে থাকে। রাইফেল পড়ে গিয়ে সিদীক সুবেদারের পায়ের নখ উঠে যায় এবং রক্তপাত হতে থাকে। আমি এবং ডাক্তার মিলে তাড়াতাড়ি করে জয়নাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে ব্যাণ্ডেজ করে যত্ন করি। সুবেদার মন একটু নরম হলো বুঝলাম। গাড়ীর ড্রাইভারকে বললো গাড়ী খেয়াঘাট যাবে না, ওয়াপদা নিয়ে চলো। খেয়াঘাট মানেই মৃত্যু ছিল। বুঝলাম, আপাততঃ বেঁচে গেলাম। অতঃপর তারা আমাদের ২ জনকে ওয়াপদা কলোনীতে নিয়ে যায় এবং একটি ঘরে আটকে রাখে। বাইরে পাহারা থাকে। পরদিন চা নাস্তা খাইয়ে ক্যাপ্টেনের কাছে আমাদেরকে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাবার পর জিজ্ঞেস করে মুক্তি বাহিনী কোথায়, বল। আমরা জানি না বললে ভীষনভাবে মারধোর করে। আমরা মৃতপ্রায় হয়ে পড়ি তখন জেলে নিয়ে আটকে রাখে। আমি এবং ডাক্তার শহরে মোটামুটি পরিচিত ছিলাম। প্রতিবাদে শহরের সকল দোকান পাট বন্ধ হয়। রিক্সাসহ সমস্ত শহর অচল হয়ে যায়। ইতিমধ্যে আমার আত্মীয়স্বজন আমাদের জন্য চেষ্টা করতে থাকে। টাকা দিলে তাদের মন কিছুটা নরম হয়। শান্তি কমিটি শহরের এই অবস্থায় অধিবেশন ডাকে এবং আমাদের ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের যেখানে রেখেছিলো সেখানে অনেক রক্ত এবং রক্তমাখা জামা দেখলাম। ২দিন রাখার পর অত্যাচার করেও কোন কথা যখন বের করতে পারেনি তখন আমাদের ২ জনকে ছেড়ে দেয়। আমি বাড়ি চলে আসি। ১০/১২ দিন পর মিলিটারীর একান্ত সহকারীর মারফত খবর পেলাম আমাকে আবার ধরার ষরযন্ত্র করছে। আয়ুবী আমলে আমি ডি পি আর এর আসামী ছিলাম ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী বলে। আমি গোপনে নৌকা ভারা করে বরিশাল পালিয়ে যাই এরপর আর ভোলাতে আসিনি। ভোলা শত্ৰমুক্ত হলে আমি ভোলাতে ফিরে আসি। স্বাক্ষর/মোঃ ফরিকুর রহমান ১৩/৯/৭৩