পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՏԳՆ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড lこ、○ l শ্ৰী বণিক চন্দ্র প্রধান শিক্ষক, পটিয়া হাইস্কুল পটিয়া, চট্টগ্রাম ১৪ই মে, শুক্রবার ১০টায় পাঞ্জাবীরা পটিয়ায় এসে স্থানীয় প্রাইমারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে স্থায়ী আস্তানা গাড়ে এবং সেইদিন বিকালে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণভূর্ষি ও কেলিশহর গ্রামে কিছু কিছু বাড়ী পুড়িয়ে দেয়, তারপর দিনও তারা ঐ সমস্ত গ্রামে অত্যাচার চালায়। ১৫ই মে শনিবার খবর পাই পরদিন রবিবার ওরা পটিয়া সংলগ্ন সুচক্রদন্ডী গ্রাম জুলিয়ে দেবে। এই খবর পেয়ে ১৬ই মে, রবিবার ভোরে ছেলেটিকে নিয়ে পটিয়া থেকে রিক্সা করে আবার বাড়ীর দিকে রওনা হই। এখানে বলে রাখা ভাল একজন ডাকাত আমার স্ত্রী এবং ভাইয়ের কাছ থেকে ২০০০ টাকা আদায় করে নিয়ে যায়। বাড়ীতে কিছু ধান ছিল, এ ধান বিক্রি করে তারা ডাকাতদের টাকা দেয়। অতি ভয়ে ভয়ে ১৬ ও ১৭ই মে গ্রামে কখনো নিজ ঘর কখনো অন্য বাড়ীতে গোপনে কাটাই। ১৮ই মে মঙ্গলবার আমার জীবনের কালো দিন। ঐ দিন স্থানীয় গুণ্ডারা, চেয়ারম্যান ও অন্যান্য দলীয় নেতাসহ পাঞ্জবীরা ছনহরা, চাটরা, ধাউরডেঙ্গা মঠপাড়া ও গুয়াতলী গ্রাম আক্রমণ করে। ছনহরা গ্রামে প্রথমে ঢুকে বাড়ীঘর জালায় এবং পলায়নরত ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করে ও কয়েকজনকে আহত করে। আমি নিজ নিরাপত্তার জন্য একটা চামড়ার ব্যাগে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জামাকাপড় ও শ’তিনেক টাকা নিয়ে গ্রামের পূর্ব দিকে খালের নিকট ঝোপের কাছে আশ্রয় নেই। বাড়ীর স্ত্রী,পুত্র, ছেলে, মেয়ে , যে যেদিকে পেরেছে ছিটকিয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় সকাল আটটায় স্থানীয় ৫/৬ জন গুণ্ডা প্রকৃতির লোক আমাকে আক্রমণ করে। আমার সঙ্গে যা ছিলো টাকা পয়সা, জামা, কাপড়, ঘড়ি, কলম ইত্যাদি কেড়ে নিয়ে যায়। আমাকে হত্যা করার জন্য গ্রামের দক্ষিণ দিকে রাস্তার পার্শ্বে বসিয়ে রাখে। এরা সব আমার পার্শ্ববর্তী জালিয়া পাড়া ও সর্দার পাড়ার লোক, আমাকে হত্যা করবে এই খবর পেয়ে জালিয়া পাড়ার কতিপয় বৃদ্ধ নরনারী দৌড়ে এসে আমাকে এদের কবল দেকে রক্ষা করে। আমি মুক্তি পেয়ে আবার পূর্বোক্ত স্থানে আশ্রয় নেই। ঐ খালের ধারে গ্রামের আবাল বৃদ্ধ বনিতা প্রায় ২০০ শ নরনারী শস্য ক্ষেতে, ঝোপের আড়ালে আশ্রয় নিয়েছিল। প্রায় ১ টার সময় দেখি ছনহরা গ্রাম জুলিয়ে পাঞ্জাবীরা আমাদের গ্রামে ঢুকে ঘরবাড়ী পোড়ায়, জিনিসপত্র লুট করে। ৪ জন পাঞ্জাবী আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে এসে বিভিন্ন স্থানে লুকায়িতদের তুলে নিয়ে পুকুর পাড়ে জমা করায়। এবার ধারণা হলো হয়তো আমাদেরকে এক জায়গায় এনে গুলি করে মারকে, কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় আমাদের বসিয়ে রেখে তারা খালের কূলে কলে দক্ষিণ দিকে চলে যায় এবং খালের ভিতর লুকায়িত কয়েকনজনকে ছেড়ে দেয় এবং তিনজনকে তুলে নিয়ে সদর রাস্তায় গুলি করে মারে। এদের নাম সারদা চরণ দে, বয়স ৬০, যোগেন্দ্রলাল মল্লিক, বয়স ৬০ ও গৌরাঙ্গ মল্লিক, বয়স ৩০/৩৫। পাঞ্জাবীদের সঙ্গে সবসময় স্থানীয় গুণ্ডারা ছিল। তারা পার্শ্ববর্তী ধাইরডেঙ্গা গ্রামের হিন্দুদের বাড়ীরঘর পুড়িয়ে দিয়ে সেখানেও ২/৩ জনকে হত্যা করে বেলা ২টা সময় পটিয়া ফিরে আসে। মুক্তিপেয়ে বিকালে বাড়ী ফিরে দেখি বাড়ীতে পোড়া ভিটা খাঁ খাঁ করছে। সেই রাত্রিতে গ্রামের অন্য এক বাড়ীতে (যে বাড়ীটিই শুধু পোড়া যায়নি) রাত্রি কাটাই। স্ত্রী-পুত্রকন্যা যারা দিনের বেলায় এদিক-ওদিক ছিল রাত্রে এক জায়গায় ঐ বাড়ীতে আশ্রয় নেই। অবশ্য এটাও সত্য কিছু কিছু স্থানীয় মুসলমান আমাদের নিরাপত্তার জন্য এগিয়ে এসেছিল, তাই বেঁচেছি। এতে প্রমাণ হয় দুনিয়ার সব মানুষ পশু নয়, প্রকৃত মানুষও আছে, নচেৎ ভগবানের সৃষ্টি বিফল হত। স্বাক্ষর/শ্ৰী বণিক চন্দ্র $/g/ab