পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খণ্ড
৩৩৪

কোন যৌক্তিকতা নেই। রউফ সেই মুহূর্তে ভীষণভাবে মৃত্যু কামনা করছিল। এত যন্ত্রণার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়। কিন্তু হঠাৎ মা, বাবা, ছোট ভাই, বোনদের কথা আর তার ভবিষ্যৎ জীবনের কথা মনে হতেই বাঁচার আকাঙ্খা আবার তীব্র হয়ে উঠলো তার হৃদয়ে।

 সে এখন বাঁচতে চায়। ভীষণভাবে বাঁচতে চায়। জীবনটা এত শিগগির শেষ হয়ে যেতে চাচ্ছে কেন? আশপাশ থেকে হানাদারদের পদশব্দ কানে ভেসে এলো রউফের। মৃত্যু কি অতি সন্নিকটে? তবু বাঁচার প্রয়াস। রউফ তার ভাঙ্গা পা থেকে ক্ষতিকর রক্তাক্ত দেহটাকে গড়িয়ে গড়িয়ে বুকে মেখে মখে পড়ে রইল কাত হয়ে মড়ার মত। খানিক পরে রউফের ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন ও জিনাত আলী মিলে ধরাধরি করে রউফকে নিয়ে যায় জনৈক ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ঘরে। সেখানে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে পরবর্তী কালে শহীদ ডঃ মর্তুজার সাহায্যে প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। এমনি মৃত্যু আর জীবনের এক হৃদয় বিদারক কাহিনী ছড়িয়ে রয়েছে ইকবাল হলের চারপাশে।

 ২৬শে মার্চের ভোরে ইকবাল হলের যেখানেই দৃষ্টি পড়ে সেখানেই দেখা যায় শুধু লাশ। স্বদেশের সোনার ছেলেদের গুলি খাওয়া লাশ। আর আকাশে ধোয়ার কুগুলি। এখান থেকেই শুরু হলো বাংলাদেশে পাক হানাদারদের বীভৎস লঙ্কা কাণ্ডের যাত্রা শুরু।