পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

5י-5bי বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ক্যান্টনমেন্ট তাঁকে এফ আই ইউ (ফিল্ড ইনভেষ্টিগেশন ইউনিট) অফিসে রাত দশটা পর্যন্ত বসিয়ে রাখা হয় এবং দশটায় তাঁকে স্কুল রোডের সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেলে প্রবেশের আগে তাঁর ঘড়ি, আংটি খুলে নেয়া হয়। সারাদিন অবুক্ত থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কিছুই খেতে দেয়া হয়নি। পরদিন সকালে তাঁকে এক কাপ মাত্র ঠাণ্ডা চা খাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যাপ্টেন সাজ্জাদের অফিসে। সাজ্জাদ তাঁর কাছে তাঁর পরিকল্পনার কথা জানতে চায়। তিনি তাঁর কোন পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেন। ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ এতে তাঁকে মিথ্যাবাদী বলে অভিহিত করে এবং শাস্তি হিসেবে তাঁকে বৈদ্যুতিক শক দেবার হুমকি দেখায়। কিন্তু এরপরও কোন কথা আদায় করতে না পেরে ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ তাঁকে হাজার ওয়াটের উজ্জ্বল আলোর নীচে শুইয়ে রাখার হুকুম দেয়। হুকুম মত রাতে তাঁকে তাঁর সেলে চিৎ করে শুইয়ে মাত্র হাত দেড়েক ওপরে ঝুলিয়ে দেয় পাঁচশো পাওয়ারের দুটি অত্যুজ্জ্বল বাল্ব। প্রায় চার ঘন্টা অসহ্য যন্ত্রণা তাঁকে ভোগ করতে হয়। পরদিন আবার তাঁকে ক্যাপ্টেন সাজ্জাদের কছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সাজ্জাদ আবার তার পরিকল্পনার কথা জানতে চায়। জানতে চায় শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর কি কি কথা হয়েছে, তিনি ভারতে চলে যাবার পরিকল্পনা করেছিলেন কিনা। জনাব হক এ সব কিছুই অস্বীকার করলে ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ তাঁর ঘাড়ে প্রচণ্ড আঘাত হানে। এরপর তাঁর সেলে চব্বিশ ঘন্টা হাজার ওয়াটের বাতি জুলিয়ে রাখার হুকুম দেয়। বেলা একটায় তাঁকে সেলে এনেই বাতি জুলিয়ে দেয়া হয়। ঘন্টা কয়েক পরেই তিনি অসহ্য যন্ত্রণায় চীৎকার করতে থাকেন। চীৎকার করে তিনি একটি কথাই বলতে থাকেন: আমাকে একবারেই মেরে ফেল। এভাবে তিলে তিলে মেরো না। তিনি যখন অসহ্য যন্ত্রণায় চীৎকার করছিলেন তখন তাঁর দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো একজন পাঠান হাবিলদার। তাঁর এই করুণ আর্তি বোধ হয় হাবিলদারটি সইতে পারেনি। তারও হৃদয় বোধ হয় বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল মানুষের ওপর মানুষের এই নিষ্ঠুর জুলুম দেখে। আর তাই বোধ হয় সে সেন্ট্রিকে ডেকে হুকুম দিয়েছিল বাতি নিভিয়ে দিতে বলেছিল, কোন জীপ আসার শব্দ পেলেই যেন বাতি এরপর ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ তাঁকে আরো কয়েকদিন জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং নতুন ধরনের নির্যাতন চালায়। তাঁর কাছ থেকে সারাদিন ধরে একটির পর একটি বিবৃতি লিখিয়ে নেয়া হয় এবং তার সামনেই সেগুলি ছিড়ে ফেলে আবার তাঁকে সেগুলি লিখতে বলা হয়। এবং যথারীতি আবার তা ছিড়ে ফেলা হয়। এই অবস্থায় ক্লান্তি ও অবসন্নতায় তিনি লেখার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। এদিকে হাজার ওয়াটের উজ্জ্বল আলোর নীচে থাকায় তিনি দৃষ্টি শক্তিও প্রায় হারিয়ে ফেলেন। দিন ও রাতের মধ্যে কোন পার্থক্যই বুঝতে পারতেন না। ২৬ শে জুলাই বিকেলে তাঁকে ইন্টার স্টেটসস্ক্রিনীং কমিটির (আই এস এস সি) ছাউনিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে ছোট্ট কামরায় তাঁরা মোট ১১০ জন আটক ছিলেন। বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁকে বের করে রান্নাঘরের বড় বড় পানির ড্রাম ভরার কাজ দেয়া হয়। এই কাজে আরো একজনকে তাঁর সাথে লাগানো হয়। তিনি হচ্ছেন জিওলজিক্যাল সার্ভের জনাব এস কে আব্দুল্লাহ। তাঁরা দুজনে প্রায় পোয়া মাইল দূরের ট্যাপ থেকে বড় বড়