পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○の8 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্যের অনুরাগীরা তাঁকে বারবার অনুরোধ করেছিলেন। দেশ ছেড়ে চলে যেতে। কিন্তু তিনি যাননি স্বাধীনতা দেখে যেতে চেয়েছেন এখানে থেকে। জীবনের শেষ দিন সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য বেশ ভোরেই ঘুম থেকে উঠেছিলেন। যথারীতি নাস্তা করে রেডিও শুনেছেন। তারপর আহ্নিক করতে বসেছেন। সকাল তখন সাড়ে আট কি নয়। আহ্নিকে বসবার আগে মেয়ে স্বপ্নাকে ডেকে বলেছিলেন, দেশ স্বাধীন হয়ে যাচ্ছেরে মা, খুব শীঘ্রই তোর দাদাকে দেখতে পারবি। স্বপ্নার দাদা অর্থাৎ সন্তোষ বাবুর বড় ছেলে কলকাতায় থাকতেন। সন্তোষ ভট্টাচার্য আহ্নিকে ব্যস্ত এমন সময় দরজায় ধাক্কা। দরজা খুলে দিলে ভিতরে ঢুকলো এক বাঙ্গালী যুবক। কাঁধে ষ্টেন। এমন সময় সন্তোষ বাবু বেরিয়ে এলেন। যুবকটি তাঁর নাম জিজ্ঞেস করে তাঁকে নিয়ে যেতে চাইলো। সন্তোষ বাবু জিজ্ঞেস করলেন, “আমার কি অপরাধ?’ “চুপ, বেশী কথা বলবেন না।’ ‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’ যেখানে খুশী।” তারা তাকে বাসা থেকে টেনে বাইরে নিয়ে গেল। চোখ বাঁধলো এবং সেই শেষ বাসে নিয়ে তুললো। ডাক্তার আলীম চৌধুরী ২৯ নম্বর পুরানা পল্টনের দোতলায় থাকতেন মিটফোর্ড হাসপাতালের ডাক্তার আলীম চৌধুরী। তার নীচের তলায় থাকতেন মওলানা আব্দুল মান্নান, নীচের তলায় আগে ডাক্তার আলীমের ক্লিনিক ছিল। কিন্তু মাওলানা সাহেব একবার বিপদে পড়ে প্রাক্তন স্পীকার এ,টি, এম, মতিনকে ধরে বসেন আশ্রয়ের জন্যে। মতিন সাহেব আলীম সাহেবকে বললেন, ডাক্তার চৌধুরী, ক্লিনিক উঠিয়ে মওলানাকে আশ্রয় দিন। ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় তখন ভারতীয় বিমান হরোদমে বোমা বর্ষণ করছে। কার্য্যও চলছে। শুধু সকাল আটটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত কাফু উঠান হল। আসবেন এবং একবার হাসপাতালটা ঘুরে আসবেন। তাঁর স্ত্রীর ইচ্ছা ছিল না তখন তিনি বের হন। আলীম চৌধুরী বেরুবেনই। স্ত্রীকে বললেন, আমাকে তো একবার হাসপাতালে যেতেই হবে। ডাক্তার মানুষ আমি যদি না যাই তো কে যাবে? তারপর বললেন, আমি যতো তাড়াতাড়ি পারি ফিরবো। তুমি তৈরী থেকো। আমি ফিরলে সবাইকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো। আলীম চৌধুরীর স্ত্রী বললেন, তুমি ঠিক মতো ফিরবে- তাহলেই হয়েছে। তুমিও কার্ফ্যর সময় পার করে দিয়ে আসবে আর আমাদেরও যাওয়া হবে। আলীম চৌধুরী স্ত্রীকে বারবার কথা দিলেন যে কার্ফর অনেক আগেই তিনি ফিরবেন। তারপর কেরোসিনের একটি টিন নিয়ে গাড়ীতে গিয়ে উঠলেন। বাসায় তখন কেরোসিনের অভাব।