পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8と。 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড একদিন সকাল বেলায় পাঞ্জাব পুলিশের একজন ডি.এস.পি (অল্পবয়স্ক) আমাকে দেখতে আসে। তার সাথে দু-এক মিনিট কথা বলার জন্য অনুমতি চাই এবং সে এতে রাজী হয়। তাকে আমি প্রথমে বলি, “শিক্ষার দিক থেকে তুমি আমার চাইতে বেশী নও, কিন্তু কি অবস্থায় আমাদেরকে রেখেছ, তোমরা মানুষ না অন্যকিছু, আমাদের বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে তা তুমি তদন্ত কর এবং আদালতে বিচার দাও। তা না হলে এভাবে আমাদেরকে রাখার কোন অধিকার তোমাদের নেই।” আমার কথা শুনে ভীষণ রেগে যায় এবং চিৎকার করতে থাকে। সে আমাকে একটা ছেলের পরিচয় জিজ্ঞাসা করে। আমি বললাম যে ছেলেটার নাম আমি শুনেছি তবে চিনি না। এরপর সে চলে যায়, ঐ দিনই সন্ধ্যার সময় আমাকে বেদমভাবে প্রহার করা হয়, যে ঘরে আমাদের উপর অত্যাচার চালানো হত সেখান থেকে পরে আমাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। এখানে দুইজন পাঞ্জাবী পুলিশ মাঝে মাঝে আমাদেরকে খাবার দিয়ে যেত। সিগ্রেটও কিনে এনে দিত, তারা আমাদের মারধর করত না। এদের সাহায্যেই আমি হাবিব ব্যাংকে (শান্তিনগর শাখা) এক বন্ধুর কাছে ঝাড়ুদারের মারফত একটা চিঠি পাঠাতে সক্ষম হই। আমার বন্ধু ঐ ঝাড়ুদারের কাছে আমার জন্য দশটি টাকা পাঠিয়ে দেয় এবং বন্ধু-বান্ধবদেরকে আমার খবর পৌছে দেয়। ছাড়া পাবার ৭/৮ দিন আগে থেকে আমাকে বলা হয় যে টাকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেয়া হবে। আমার চেক বইটি (তল্লাশী করে তারা নিয়েছিল) আমার কাছে নিয়ে আসে এবং দু'হাজার টাকার চেক সই করে দিতে বলে। আমি তাদের শ পাঁচেক টাকা দিতে রাজী হই। শেষ পর্যন্ত তরা ৬০০ টাকার একখানা চেক সই করিয়ে নেয়, আমাদেরই একজন বন্দীকে নিয়ে টাকা উঠিয়ে নিয়ে আসে। সেইদিনই বিকালে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং আরো আটশ টাকা দিতে বলে। আমি পালিয়ে যাব এ ভয়ে একজন পুলিশকে আমার পিছনে লাগিয়ে দেয়। পরের দিন আমি আমার বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদেরকে দিয়ে আসি। দীর্ঘদিনে বন্দী শিবিরের অত্যাচার ও নির্যাতনের চিহ্ন বহন করে অবশেষে বাড়ী ফিরে যাই। এখনও আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠিনি এবং অস্বাভাবিক জীবনযাপন করছি। স্বাক্ষর/ মোঃ আবু নূর 8-8-ԳՏ)