পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



748

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

 যশোহর শহর ও ক্যাণ্টনমেণ্ট থেকে নগদ টাকা, নোট ও সোনাদানা সরানো শুরু হয়ে গিয়েছে। পাকিস্তান ইণ্টারন্যাশনাল এয়ারওয়েজের বিমানে করে ঢাকায় এসব জিনিস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৫০০ পাকিস্তানী সৈন্য মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমৰ্পন করেছে।

 বি বি সি-র খবর, আজ চট্টগ্রাম বন্দরের উপর মুক্তিবাহিনীর বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। উপরন্তু একটি গানবোট, দুটি তৈলবাহী জাহাজ, ৪টি খাদ্যবাহী জলযান বাংলাদেশ নৌবহর ডুবিয়ে দেয়েছে।



-আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৫ নভেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

ঝিকরগাছা দখল। দশটি জেলা সাত দিনে মুক্ত করার সংকল্প

 ২৫ নভেম্বর- আজ সন্ধ্যায় মুক্তিবাহিনী ঝিকরগাছা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈণ্যদের তাড়িয়ে দিয়ে ওদের ঘাঁটিগুলি দখল করেছে। এখন ঝিকগাছার সব জায়গায় বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। শত্রু পালিয়ে যাওয়ার সময় বহু অস্ত্রশস্ত্র ফেলে গিয়েছে। মুক্তিবাহিনীর একটি বড় দল এখন যশোর শহরের ৪ মাইল উত্তরপশ্চিমে গিয়ে চাপ দিতে শুরু করেছে।

 মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের রংপুর থেকে খুলনা-এই বিস্তৃত এলাকার অন্তত দশটি জেলা অর্থাৎ রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ইত্যাদি সাত দিনের মধ্যে মুক্ত করার সংকল্প নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে।

 বাংলাদেশ সরকারের সূত্র থেকে এই দিন রাত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে গত এক সপ্তাহ প্রচণ্ড যুদ্ধ চলার পর রংপুর এবং দিনাজপুর জেলার প্রায় ৪৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখল করে নিয়েছে।

 মুক্তিবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, আমাদের এই এলাকা মুক্ত করে শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করার এক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি সেক্টরে আমাদের যোদ্ধারা শক্রবাহিনীকে কোণঠাসা করে এনেছে।

 এই মুখপাত্র আরও আশা প্রকাশ করেন, যশোর দুর্গ শত্রুকবলমুক্ত করতে আর ৭২ ঘণ্টার বেশী সময় লাগা উচিৎ নয়। তিনি অবশ্য বিস্তারিত কিছু বলতে অস্বীকার করেন।

 মুক্তিবাহিনীর সূত্রে ঘোষণা করা হয়: সাতক্ষীরা মহকুমার প্রতিটি থানা মুক্ত হয়েছে। মুক্তিবাহিনী এখন খুলনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

 মেহেরপুর শহর দখল নিয়ে জোর লড়াই চলছে।

 রাঙ্গামাটিতে লড়াই, গ্রামের পর গ্রাম মুক্তিফৌজের দখলে: সামনে ফেনী

 ২৫ নভেম্বর- মরণপণ লড়াই করে মুক্তিবাহিনী ছিনিয়ে নিয়েছে ফুলগাজি, আনন্দপুর আর চাঁদগাজি বাজার। এখন হাত বাড়ালেই ফেনী- মাত্র তিন মাইল দূর। এছাড়া, পরশুরাম থানা এলাকায় মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ কর্তৃত্ব। গত ১১ নভেম্বর ওই এলাকাটি মুক্ত করা হয়।

 লড়াই চলছে রাঙামাটিতেও। লড়াই চলেছে মুখোমুখি। সেখানে তেরজন রাজাকার রাইফেল গোলবারুদ নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে।