পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

935 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩৯৩। পাক-ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধের যুগান্তর ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ খবর লাকসামের পতন, লক্ষ্য ঢাকা (ষ্টাফ রিপোর্টার) কলকাতা, ৫ই ডিসেম্বর- বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর অভিযানের লক্ষ্য ঢাকা। আজ কলকাতায় ইষ্টাৰ্ণ কম্যান্ডের জনৈক মূখপাত্র ভারতীয় ও বিদেশী সাংবাদিকদের বলেছেন যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন সেকটরে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী মুক্তিবাহিনী ও সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায় বাংলাদেশের রণাঙ্গনে কয়েকটা উল্লেখযোগ্র সাফল্য লাভ করেছে। বাংলাদেশে আজকের জয়লাভের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লাকসাম আখাউড়া, বকসিগঞ্জ (ময়মনসিংহ), মিয়াবাজার, পারিকোট, লালবাগ (কুমিল্লা) ও যশোরের কোটচাঁদপুর। যশোর শহর ও ক্যান্টনমেন্ট ভারতীয় বাহিনীর সাফল্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ঐ মূখপাত্র বলেন যে, যশোরকে সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ক্যান্টনমেন্টের পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের ভারতীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে মাইকে বলা হচ্ছে “আত্মসমর্পণ অথবা মৃত্যু, এর একটি বেছে নাও।” এদিকে ভারতীয় বাহিনী আজ সন্ধ্যায় দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৬ মাইল দুরে। ইষ্টাৰ্ণ কম্যান্ডের সামরিক মুখপাত্র আজ বলেছেন, বাংলাদেশে আমাদের অভিযানের সাফল্যের একটা বড় সুবিধা হল যে মুক্তিবাহিনী আগেই বহু এলাকা মুক্ত করে রেখেছেন। ঐ মুখপাত্র বলেন যে, চট্টগ্রামের দরিয়া এখন ভারতীয় নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। ভারতীয় বিমানবাহী রণতরী বিক্রান্ত’ কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বন্দরের পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করে দিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে বাংলাদেশে এখন চারটির বেশী নেই। ইষ্টাৰ্ণ এয়ার কম্যান্ডের অধিনায়ক এয়ার মার্শাল দেওয়ান শিলংয়ে বলেছেন যে, বাংলাদেশের আকাশে এখন ভারতীয় বিমান বাহিনরি পূর্ণ আধিপত্য। আজ ভারতীয় বিমান বাহিনী ময়মনসিংহের জামালপুরে পাকিস্তানী কলামের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৯০টি সামরিক গাড়ী ও কয়েকশ’ পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যকে নিহত করেছে। রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন আখাউড়া ও লাকসামের পতনের ফলে চট্টগ্রাম, ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লা, শ্রীহট্ট ও ঢাকার মধ্যে রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কলকাতায় ইষ্টাৰ্ণ কম্যান্ডের মুখপাত্র বলেছেন যে, ১২ নম্বর ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রাইফেলসের একটি ব্যাটেলিয়ান আখাউড়ায় যুদ্ধ করছিল। তাদের সঙ্গে ট্যাংক ছিল। সকাল সাড়ে ছটায় ভারতীয় বাহিনী চূড়ান্ত আঘাত দিলে আখাউড়ার প্রতিরক্ষা ভেঙ্গে পড়ে। বহু পশ্চিম পাকিস্তানীকে বন্দী করা ছাড়াও ২টি ট্যাংক ও কয়েকটি ফিল্ডগান ভারতীয় সৈন্যদের কাছে ধরা পড়েছে। কুমিল্লা সেকটরের মিয়াবাজারে ভারতীয় বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের ২৫ নম্বর ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রাইফেলসের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল বেগকে আটক করেছে। তিনি তাঁর সকল সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। লেঃ কর্নেল তাঁর ২৩৫ জন লোক নিয়ে ভারতের প্রচন্ড আক্রমণের মুখে হাত তুলে আত্মসমর্পণ করেছেন।