পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
87

পরিত্যাগ করে পিছু হটে যায়। যুদ্ধে পাকসেনাদের ৩০ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রের চারিদিকে মৃতদেহগুলি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যায়। পাকসেনারা পিছু হটার পর আমাদের দলটি অনেক অস্ত্রসস্ত্র দখল করে নেয় এবং শত্রুদের ক্ষতিগ্রস্ত ট্রাকটিও নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয় কিন্তু ট্রাকটির এত বেশী ক্ষতি হয়েছিল যে এটা আনা সম্ভব হয়নি এবং ট্রাকটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়। পাকসেনাদের যে দুজন দালাল যুদ্ধের সময় পথ দেখিয়ে নিয়ে এসেছিল, তারাও গুলিবিদ্ধ হয়। পাকসেনারা পিছু হটে যাবার পথ আমাদের দলটি তাদের ২/৩টি পেট্রোল ও পর্যবেক্ষন ঘাঁটিতে অবস্থিত পাকসেনাদের তাড়িয়ে দেয়। বিকেল সাড়ে চারটার সময় পাকসেনাদের ১টি জঙ্গি বিমান যুদ্ধক্ষেত্র পর্যবেক্ষন করে এবং আমাদের দলটিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমাদের দলটি সেখান থেকে একটু দুরে সরে যাওয়াতে জঙ্গি বিমানটি কিছুক্ষন ঘোরাফিরা করে চলে যায়। এ সংঘর্ষেরপর ১০ জুলাই সন্ধ্যায় ১টি এ্যামবুশ পার্টি উক্ত অবস্থানের ১ মাইল দক্ষিণে লেঃ ইমামুজ্জামানের নেতৃত্বে আবার এ্যামবুশ পাতে। আমাদের ধারণা ছিল যে, পাকসেনারা আবার উক্ত সেতুর নিকট আসবে। ১০ই জুলাই সারাদিন পাকসেনাদের জন্য তারা অপেক্ষা করে থাকে কিন্তু আমাদের ধারণামত সেদিন না এসে ১১ই জুলাই ১১টার সময় পাকসেনাদের ১টা কোম্পানী দু'টি গাড়ীসহ আস্তে আস্তে ভাঙ্গা সেতুর দিকে মিয়াবাজারের দিকে অগ্রসর হয়। পাকসেনারা যখন এ্যামবুশ অবস্থানের ভিতর পৌঁছে ঠিক সে সময় এ্যামবুশ পার্টি তাদের উপর প্রচণ্ড গোলাগুলি চালাতে থাকে। এতে শত্রুদের বেশ হতাহত হয়। তারা পিছু হটে গিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায় এবং উভয়পক্ষে যুদ্ধ সারাদিন ধরে চলতে থাকে। এ যুদ্ধে পাকসেনাদের ১০/১৫ জন আহত হয়। বিকেল ৩টায় পাকসেনারা যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করে আবার পিছু হটে যায়। আমাদের দলটি রাত ২ টা পর্যন্ত পুনরায় আক্রমনের অপেক্ষায় থাকে। এরপর বালুজুরির ভগ্নাবশেষ সেতুটি সম্পুর্নরুপে বিধ্বস্ত হলে লেঃ ইমামুজ্জামান তাঁর দলটি নিয়ে ঘাঁটিতে চলে আসে। আসার পথে চৌদ্দগ্রাম-লাকসাম রোডের উপর বাংগোডার পশ্চিমে এবং চৌদ্দগ্রামের উত্তরে আর একটি ভাঙ্গা ব্রীজের নিকট এণ্টি-ট্যাঙ্ক এবং এণ্টি পার্সোনাল মাইন পেতে রাখে। মাইন পাতার সময় আমাদের কমাণ্ডো প্লাটুনের দু'জন লোক দুর্ঘটনায় সামান্য আহত হয়।

 এ সময় পাকিস্তানীরা চাঁদপুর থেকে ফেনী দিয়ে চট্টগ্রাম রেললাইন পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করে। আমার রাজনগর সাব-সেক্টর থেকে ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম একটি প্লাটুন ও Engineer এর একটি দলকে Explosive সহ মিয়াবাজারের দক্ষিণে পাঠিয়ে দেয়। এ দলটি স্বরিসদি রেলওয়ে ব্রীজ সম্বন্ধে খবরাখবর নেয় এবং গোমতীর নিকট স্বরিসদি রেলওয়ে ব্রীজটি আক্রমণ করার জন্য বেছে নেয়। কিছুসংখ্যক স্থানীয় দালাল পাকবাহিনীর অস্ত্র দিয়ে এই ব্রীজটি পাহারা দিত। ১৩ই জুলাই রাত ১১টার সময় দলটি স্বরিসদি ব্রীজটি আক্রমণ করে। পাহারারত সশস্ত্র দালালদের কিছু নিহত এবং বাকীদের তাড়িয়ে দিয়ে তারা Demolition লাগিয়ে ব্রীজটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে পাকিস্তানীরা শুধু ফেনী এবং গুনবতীর মধ্যে ট্রেন মাঝে মাঝে চলাচল চালু রাখত। অবশ্য এর আগে ট্রেন চলাচল করতে পারতো না। এ দলটি পাকিস্তানীদের নয়াপুর বি ও পি অবস্থানের উপর ৩ মর্টারের সাহায্যে আক্রমণ চালায়। এর ফলে দু'জন পাকসেনা নিহত ও ৭ জন আহত হয়।

 ১৩ই জুলাই রাত ১০টায় পাকসেনাদের দত্তসার দীঘি এবং আমতলা অবস্থানগুলির উপর ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে দুটি দল আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে পাকসেনাদের ১৫ জন আহত ও কিছু নিহত হয়। শালদা নদীতে পাকসেনারা আবার নতুন করে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। ১১ই জুলাই পাকসেনারা আমাদের শালদা নদী অবস্থানের দিকে মারমুখী পেট্রোলিং চালাতে থাকে। আমাদের সৈন্যরাও মেজর সালেকের নেতৃত্বে তাদের অবস্থানের সাহসের সঙ্গে পাকসেনাদের উপর লক্ষ রাখে। ১২ই জুলাই রাত ৮টায় পাকসেনারা প্রচণ্ডভাবে আমাদের শালদা নদী অবস্থানের উপর আক্রমণ চালায়। আমাদের ৪র্থ বেঙ্গলের `এ' কোম্পানী মেজর সালেকের নেতৃত্বে এ আক্রমণ মোকাবিলা করে। আমাদের সৈন্যদের গুলির আঘাতে পাকসেনাদের প্রচুর হতাহত হয়। তারা পর্যুদস্ত হয়ে আক্রমণ পরিত্যাগ করে রাত ১১টায় পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়। সমস্ত রাত উভয় পক্ষে গোলাগুলি চলতে থাকে। ভোর ৫টায় পাকসেনারা ১টি ব্যাটালিয়ন নিয়ে আবার শালদা নদীর দক্ষিণে