ওয়ালীউল্লাকে ত্রিমুখী আক্রমণ করার নির্দেশ দিলাম। নির্দেশক্রমে সুবেদার ওয়ালীউল্লা ত্রিমুখী আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। আমি নিজে এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে পিছন দিক থেকে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। শত্রুরা আমিনবাজারের দিকে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে সুবেদার ওয়ালীউল্লা ত্রিমুখী শুরু করে। ফলে শত্রুরা পিছনে হটতে থাকলে আমি পিছন থেকে আক্রমণ করি। আক্রমণ চারিদিক থেকে চলতে থাকে। কাজেই শত্রুরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। এদিকে জনসাধারণও ছত্রভঙ্গ হয়ে চারিদিকে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। ফলে আমাদের পক্ষে গুলি করা বিরাট প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এ সুযোগে শত্ররা হাতের অস্ত্র ফেলে জনসাধারণের মধ্যে মিশে যায় এবং অনেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ছয়জন রাজাকার নিহত হয় ও কয়েকজন আহত হয়। আমরা উক্ত ছয়জন রাজাকারের লাশ কাচিহাটিতে দাফন করি। রাজাকার মওলানা মিজানুর রহমান অক্ষত অবস্থায় অস্ত্রসহ আমাদের হাতে ধরা পড়ে। তার নিকট থেকে পাক বাহিনীর অনেক গোপন তথ্য সংগ্রহ করি। পরে তাকে হত্যা করে তারও দাফনের ব্যবস্থা করি। এখানে কয়েকটি চীনা রাইফেলও আমাদের হস্তগত হয়।
১০ই সেপ্টেম্বর: রাজাকার ও পাকবাহিনী গোপালপুর সড়কে মুক্তিবাহিনীর গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য এবং সময়মত খবর দেবার জন্য ছোট একটি ছেলেকে নিয়োজিত করে। ছেলেটিকে তারা কিছু টাকা- পয়সাও দিয়েছিল। কিন্তু গোপালপুর সড়কে সন্দেহভাজনভাবে ঘোরাফেরা করতে থাকলে গোপালপুরের ডাঃ আনিস তাকে ধরে ফেলে এবং তাকে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে কাজ করানোর জন্য বাধ্য করে।
ইতিমধ্যে আমি বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে চলে যাই সমরাস্ত্রসংগ্রহ করতে। জনাব মেজর (বর্তমানে কর্নেল) খালেদ মোশাররফ আমাকে এ্যামুনিশন ও বিস্ফোরক দ্রব্য সরবরাহ করেন এবং বিভিন্ন সময়ে গেরিলা পদ্ধতিতে মুক্তিযুদ্ধের কলাকৌশল সম্বন্ধে অবহিত করেন।
আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে নোয়াখালী জেলায় রাজাকার আর আলবদরের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। সেজন্য নোয়াখালীর পরিষদ সদস্যগণ আমাকে পরামর্শ দিলেন নোয়াখালীকে কয়েক ভাগে ভাগ করে অন্যান্যের হাতেও দায়িত্ব অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করার জন্য। আমি নতুন সমরাস্ত্র নিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরলাম। বহু ছাত্র-শ্রমিক ট্রেনিং দেশে ফেরে। আমি সদর মহকুমাকে চার ভাগে ভাগ করি-
(ক) দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের দায়িত্ব নিলাম আমি নিজে।
(খ) পূর্ব-দক্ষিণের দায়িত্ব দিলাম ওয়ালীউল্লাকে।
(গ) পূর্ব-উত্তরের দায়িত্ব দিলাম নায়েক সুবেদার শামসুল হককে।
(ঘ) পশ্চিম-উত্তরের দায়িত্ব দিলাম নায়েক সুবেদার ইসহাককে।
২রা অক্টোবর: ছাত্র কমাণ্ডার একরাম-এর নেতৃত্বধীন একটি গ্রুপ রামগঞ্জে রাজাকারদের আক্রমণ করে, অপরদিকে সুবেদার ইসহাক পানিয়ালা বাজার আক্রমণ করে ৪জন রাজাকার খতম করে। ৩রা অক্টোবরে কুখ্যাত রাজাকার কমাণ্ডার আবুল বাশার বিপুলাশহর থেকে বগাদিয়া যাবার সময় সুবেদার শামসুল হকের হাতে বন্দী হয়। সুবেদার শামসুল হক তার কাছ থেকে পাকবাহিনী গোপন তথ্য সংগ্রহ তাকে মেরে ফেলে।
১৮ই অক্টোবর: নায়েক সুবেদার ইসহাক শামসুন্নাহার হাই স্কুলে অবস্থানরত রাজাকার ক্যাম্পে অতর্কিত আক্রমণ করে কয়েকজন রাজাকারকে হতাহত করে ও ৫টি রাইফেল উদ্ধার করে। অপরদিকে নায়েক সুবেদার ওয়ালীউল্লা দালাল বাজার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করতে গেলে দেখতে পায় যে রাজাকারকে লুণ্ঠিত কাপড় বণ্টনে ব্যস্ত। সেই অবস্থাতেই তিনি তাদেরকে চরম আঘাত হেনে কয়েকজনকে হতাহত করেন। অবশিষ্ট রাজকাররা পালিয়ে প্রাণ বাঁচায়। পরে লুণ্ঠিত কাপড় মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এখানেও ৫টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।