পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
190

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড

ত্বরান্বিত করেন। বাংলার মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে এটাই প্রমাণ করেছে যে তারা কাপুরুষ নয়। তারা সম্মুখসমরে যথেষ্ট দক্ষতার অধিকারী।

স্বাক্ষরঃ সুবেদার মেজর লুৎফর রহমান
১৮-৯-৭৩

সাক্ষাৎকারঃ সুবেদার আবদুল ওয়াহাব বীর বিক্রম[১]

 আমি এপ্রিল মাসেই ভারতের সোনামুড়াতে চলিয়া যাই এবং সেখান হইতে ক্যাপ্টেন গফফারের নেতৃত্বে দেবীপুর আসি। তখন ‘সি’ কোম্পানীর কমাণ্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন গফফার। আমি তখন ‘সি’ কোম্পানীর ৭নং প্লাটুনের প্লাটুন কমাণ্ডার ছিলাম। এইখানে পুরা কোম্পানী লইয়া আমরা কয়েকটা অপারেশন করি। আমি আমার নিজস্ব প্লাটুন লইয়াও ছোটখাট কয়েকটা অপারেশন করি।

 ১২-৪-৭১ তারিখে খবর পাইলাম যে ৭ জন পাকসৈন্য রেললাইন ধরিয়া শালদা নদীর দিকে অগ্রসর হইতেছে। তখন আমি আমার প্লাটুন লইয়া সেইদিকে অগ্রসর হই। গিয়াই দেখিতে পাই তাহারা অনেক দূর আগাইয়া গিয়াছে। তখন আমি আমার প্লাটুন লইয়া মন্দভাগ রেল স্টেশনের উত্তর দিকে দীঘিরপাড় নামক স্থানে এ্যামবুশ বসাই। তাহারা যখন পুনরায় ঐ রাস্তা হইয়া ফিরিতেছিল তখন আমরা তাহাদের উপর আক্রমণ করি। আমার আক্রমণে সেখানে ১৮ জন নিহত হয়, ৯ জন আহত হয়। বাকী লোক পলায়ন করিতে সক্ষম হয়, পরে আমরা দেবীপুর চলিয়া যাই।

 ২৫-৪-৭১ তারিখে ২২ জন জোয়ান লইয়া বাংলাদেশে প্রবেশ করি। চালনা নামক গ্রামে আসার পর আমাদের রাত্রি হইয়া যায়। তাই সেখানকার জনগণের সহযোগিতায় সেখানেই রাত্রি যাপন করি। পরের দিন ভোর ৪টার সময় সেখান হইতে রওয়ানা হইয়া শিতলাই নামক গ্রামে যাই। সেখান হইতে আমি নিজে গিয়া সি-এণ্ড-বি রোড রেকি করিয়া আসি। রাত্রিতে শালঘর নামক স্থানে সি-এণ্ড-বি রাস্তায় এ্যামবুশ লাগাই। রাত্র ১১টার সময় কুমিল্লা হইতে ২৭ খানা গাড়ি লইয়া পাকসৈন্য সিলেটের দিকে অগ্রসর হইতে থাকিলে আমি আমার প্লাটুন লইয়া তাহাদের উপর হামলা চালাই। আমার এই আক্রমণে তাহাদের ১০টা গাড়ি সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ৮টি গাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়। তাহাতে বহু পাকসৈন্য হতাহত হয়। বাকীগুলি চলিয়া যায়। পরের দিন সকাল ১০ ঘটিকার সময় পুনরায় আমি দেবীপুর চলিয়া আসি।

 ১৩-৫-৭১ তারিখে খবর পাই যে প্রায় ২০০ জন পাকসৈন্য রেল লাইন হইয়া গাড়িতে করিয়া শালদা নদীর দিকে অগ্রসর হইতেছে। তখন আমি আমার প্লাটুন লইয়া মন্দভাগ রেল স্টেশনে গিয়া তাহাদের উপর আক্রমণ করি। আমাদের আক্রমণে প্রায় ২৫ জন মারা যায়, বাকীগুলি তখন পজিশন নেয়। এমতাবস্থায় তাহাদের মালপত্রের গাড়িতে আগুণ লাগিয়া যায়। তখন তাহারা সেখান হইতে পলায়ন করে। এই আগুন তিনদিন পর্যন্ত জ্বলিতেছিল।

 ১৭-৫-৭১ তারিখে আমি আমার প্লাটুন লইয়া পৃথক হয়ে পড়ি। তখন আমার কমাণ্ডে ৫০ জন লোক ছিল। তাহাদেরকে লইয়া মন্দভাগ (কোনাবন) রেল স্টেশন এরিয়ায় ডিফেন্স করি।

 ২১-৫-৭১ তারিখে পাকসৈন্যরা ২টা গাড়ি লইয়া শালদা নদীর দিকে অগ্রসর হইতে থাকিলে আমি তাহাদের উপর আক্রমণ করি। তাহাতে তাহাদের ২টা গাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয় ও ৯ জন সৈন্য মারা যায়।

 ১৮-৬-৭১ তারিখে ৪০ জন সৈনিকের একটি পেট্রোল পার্টি তাহাদের বিজলী তার মেরামতের জন্য শালদা নদী হইতে কসবার দিকে অগ্রসর হইতে থাকিলে আমি আমার জোয়ান লইয়া তাহাদের উপর অতর্কিতভাবে


  1. বাংলা একাডেমীর পক্ষ থেকে এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।