পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

283 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড ৯। ৫নং সেক্টরে সংঘটিত যুদ্ধ সম্পর্কে বিবরণ একাত্ত্বরের রণাঙ্গনী-শামসুল হুদা চৌধুরী . ՖֆԳ Ֆ সাক্ষাৎকারঃ লেঃ জেনারেল (অবঃ) মীর শওকত আলী * প্রশ্নঃ একজন সেক্টর কমাণ্ডার হিসেবে আপনি কখন কিভাবে কাজ শুরু করলেন? উত্তরঃ প্রথমে আমি জেনারেল জিয়া (তৎকালীন মেজর)-এর সাথে এক নম্বর সেক্টরে সেকেণ্ড-ইন কমাণ্ড অর্থাৎ দুই নম্বর হিসেবে কাজ শুরু করি। ৩০শে মার্চ, ’৭১-এর পর জেনারেল জিয়া আমার সাথে আর ছিলেন না। তিনি রামগড় হয়ে সীমান্তের ওপারে চলে গিয়েছিলেন। কাজেই ৩০শে মার্চের পর থেকে উল্লিখিত সেক্টরের পুরো বাহিনীর কমাণ্ড আমার হাতে এসে পড়ে। আমি, বিডিআর, ছাত্রজনতা এবং আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়ে গঠিত বাহিনী নিয়ে ২রা মে, ’৭১ বিকেলে আমরা সীমান্তের ওপারে চলে গিয়েছিলাম। কিছুদিন পর জেনারেল ওসমানী সাহেব আমাকে ডেকে বললেন, সিলেট এলাকায় আমাদের কোনও সেক্টর খোলা হয়নি এবং সিলেটের সুনামগঞ্জ, ছাতক এবং সালুটিকর- এইসব এলাকায় অনেক বিডিআর এবং সৈন্য বিশৃংখল অবস্থায় আছেন। কাজেই তিনি আমাকে অবিলম্বে শিলং চলে যেতে বললেন। তিনি নির্দেশ দিলেন ওখান থেকে আমি ছাতক এবং সুনামগঞ্জ এলাকায় গিয়ে যেন যুদ্ধ সংগঠন করি। প্রশ্নঃ আপনার আনুষ্ঠানিক নিযুক্তি এবং সেক্টর সম্পর্কে ব্যাখ্যা দান করুণ। উত্তরঃ সরকার গঠিত হওয়ার পর আমাকে পাঁচ নম্বর সেক্টরের কমাণ্ডার নিযুক্ত করা হলো। এলাকা দেয়া হলো ডাউকী থেকে সুনামগঞ্জের বা দিকে বড়ছড়া নামক স্থান পর্যন্ত। এক কথায় বলা যায় ডাউক আমাদের লোকজন খুব বিশৃংখল অবস্থায় আছেন। তাদের জন্য ওখানে না ছিল কোনও রসদপত্র, না ছিল কোনও যুদ্ধ সংগঠন। আমি আমার এলাকটিকে পাঁচটি সাব-সেক্টরে ভাগ করে দিয়েছিলাম। এই সাব-সেক্টরগুলি ছিল ডাউকী, ভোলাগঞ্জ, শেলা, বালাত এবং বড়ছড়া, আমি বুঝলাম যে বিদেশের মাটিতে বসে দেশে যুদ্ধ করা যায় না। কাজেই সবদিকে আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জায়গা করে নেয়াই আমি আমার প্রধান কর্তব্য মনে করলাম। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সীমান্তের দশ মাইল অভ্যন্তরে আক্রমণ পরিচালনা করলাম এবং আমরা সফল হলাম। এক পর্যায়ে আমরা সুরমা নদীর উত্তর ভাগে পুরা অংশ আমাদের দখলে নিয়ে এলাম। আমরা আমাদের হেডকোয়ার্টার স্থাপন করলাম বাঁশতলায় (ছাতকের উত্তরে বাংলাদেশেরই একটি এলাকা)। সিলেট থেকে নদীপথে যেসব ছোট ছোট বার্জ এবং ছোট ছোট জাহাজ রসদপত্র নিয়ে ঢাকার দিকে যেতো সেগুলিকে আমরা পথে ধরতাম এবং রসদপত্রাদি কেড়ে নিয়ে কিছু আমাদের কাজে লাগাতাম এবং কিছু বাংলাদেশ হেডকোয়ার্টারে পাঠিয়ে দিতাম। সেখান থেকে এসব রসদপত্র অন্য সব সেক্টরে চলে যেতো। প্রশ্নঃ আপনার এই সংগঠন পর্যায় কোন মাস থেকে শুরু হয়েছিল? উত্তরঃ হুবহু দিন-তারিখ আমার মনে নেই, তবে যে-জুন কিংবা অনুরূপ সময় হতে পারে।

  • ১৯৭১ সালের মার্চে মেজর পদে কর্মরত ছিলেন।