পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড
293

 ১৯শে সেপ্টেম্বর ক্যাপ্টেন ফারুকের নেতৃত্বে রাধানগরে পাকসেনাদের অবস্থানে আক্রমণ চালানো হয়। ২০শে সেপ্টেম্বর পাকসেনাদের উক্ত অবস্থানে এক কোম্পানী মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আমরা পুনরায় আক্রমণ চালাই।

 ২৩শে সেপ্টেম্বর আমরা নয়াবস্তি নামক স্থানে ডিফেন্স দেই। ২৫শে সেপ্টেম্বর আমাকে তামাবিল সাব-সেক্টরে ডেকে পাঠানো হয় এবং ব্রেভো কোম্পানীর কমাণ্ডার নিযুক্ত করা হয়। ২৬শে সেপ্টেম্বর আমি কোম্পানীর দায়িত্ব গ্রহণ করি।

 ১লা অক্টোবর ২০/২২ জন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মুবাবস্তি নামক স্থানে পাকিস্তানী সৈন্যদের বাঙ্কার আক্রমণ করি। এই আক্রমণে বেশ কয়েকজন সৈন্য হতাহত হয়। আমাদের পক্ষে আহত হয়েছিল দু'জন। আমাদের অয়ারলেস সেটটি খারাপ হয়ে যাওয়ার ফলে আমরা দ্রুত সরে আসি।

 ২রা অক্টোবর ভারতীয় মেজর মিত্র সস্ত্রীক আমাদের ক্যাম্পে আসেন (বাউরভাগ ক্যাম্প)। উক্ত ক্যাম্পে অবস্থানকালে আমরা পাঞ্জাবী সৈন্যদের প্রবল চাপের সম্মুখীন হয়েছিলাম। যার ফলে রাতে আমরা কেউ ঘুমাতে পারতাম না। মুক্তারপুর ক্যাম্প থেকে আরও ৭৫ জন মুক্তিযোদ্ধা পাঠিয়ে আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছিল। ঐদিনই ভারতীয় বার্মাশেল ও ই-এস এস-ওর কিছু অফিসার এবং পাংতুং থেকে মিস লিণ্ডা নামে একজন লেডী ডাক্তার আমাদের ক্যাম্পে এসে খোঁজখবর নিয়ে যান।

 ৭ই অক্টোবর ইয়োথ ক্যাম্প থেকে জনৈক মিঃ ঘোষ ক্যাপ্টেন বি, এস রাওয়ের সাথে আমাদের ক্যাম্পে আসেন।

 ৮ই অক্টোবর পাকিস্তানী সৈন্যরা ৪নং ব্রীজের পাশ থেকে আমাদের উপর প্রবল গুলিবর্ষণ শুরু করে। সারারাত আমরা জেগে থাকি।

 ১১ই অক্টোবর মাত্র পনেরজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আমি কাপুরা নামক স্থানে পাকসৈন্যদের অবস্থানের উপর আক্রমণ চালাই। এই সংঘর্ষের পর বিএসএফ-এর একজন লেঃ কর্নেল এবং স্টেটসম্যান পত্রিকার একজন সাংবাদিক আমার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।

 ১৮ই অক্টোবর আমি লামহাদার পাড়ায় যাই। টুনু মিয়া চেয়ারম্যানের বাড়ি আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তখন তার বাড়িতে পঁয়ত্রিশজন থেকে চল্লিশজন রাজাকারসহ ৫ জন পাঞ্জাবী অয়ারলেস সেট ও মেশিনগানে সজ্জিত হয়ে পাহারা দিচ্ছিল। যাই হোক পরে টুনু মিয়া চেয়ারম্যানের বাড়ি অপারেশন করা হয়নি।

 ২০শে অক্টোবর খবর পাই ১০/১২ জন পাঞ্জাবী সৈন্য গোরকচি গ্রামে এসে জনসভা করার পর বেশ কিছুসংখ্যক গ্রামবাসীকে বাঙ্কার খননের জন্য রাধানগর নিয়ে গেছে। ঐদিন আমরা মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার সন্দেহে ৪ ব্যক্তিকে ধরে নিয় এসে, তাদেরকে স্থানীয় লিবারেশন কমিটির চেয়ারম্যান বশির সাহেবের নিকট সোপর্দ করা হয়।

 ২৫শে অক্টোবর সারিগোয়াইন রাস্তার উপর নির্মিত সেতু (১নং ব্রীজ নামে অভিহিত) উড়িয়ে দেবার জন্য নির্দেশ পাই। এই কাজের জন্য আমাকে এক প্লাটুন গেরিলা যোদ্ধা দেয়া হয়। ইতিপূর্বে সেতুটি উড়িয়ে দেবার জন্য গেরিলা যোদ্ধারা তিনবার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। ২জন পুলিশ, ২১ জন রাজাকার ও অপর ১৬ জন বেসামরিক ব্যক্তি সেতুটির পাহারায় নিয়োজিত ছিল। পুরা প্লাটুন আমরা তাদের অবস্থানের উপর আক্রমণ চালাই। ৫ জন রাজাকার সংঘর্ষ স্থানেই নিহত হয়। অন্যান্য রক্ষীরা ১টি ৩০৩ রাইফেল, ইউনিফরম, ব্যাজ, বেল্ট ও তাদের কাপড়-চোপড় রেখেই পালিয়ে যায়। আমরা সাফল্যের সাথে সেতুটি উড়িয়ে দিতে সক্ষম হই।

 ১লা নভেম্বর আমরা পাকিস্তানী সৈন্যদের অবস্থান কাপুরা আক্রমণ করি।