পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
314

 মিত্র ও মুক্তিবাহিনী ১০ই ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরে প্রবেশ করে। মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রাম নতুন শহরে উঁচু পানির ট্যাংকে প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে। পাকবাহিনীর অবস্থান ঘাঁটিসমূহ ছিলঃ (১) রিভারভিই হাইস্কুল (ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং গোলন্দাজ গ্রুপ) (২) কুড়িগ্রাম ধরলা নদীর ঘাট; (৩) কুড়িগ্রাম সি-এণ্ড-বি অফিস গোডাউন; (৪) নূতন টাউন কোর্ট বিল্ডিং; (৫) শান্তি কমিটি ও রাজাকার ট্রেনিং কেন্দ্র (সঞ্জীব করঞ্জাইয়ের গোডাউন ও কুড়িগ্রাম কলেজ)।

স্বাক্ষরঃ সৈয়দ মনসুর আলী টিংকু
29-9-93

সাক্ষাৎকারঃ সুবেদার মেজর মোঃ কাজিমউদ্দীন

 জুন মাসের শেষের দিকে উইং কমাণ্ডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার আমাদের সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত হইয়া আসিলেন এবং তেঁতুলিয়ায় তাঁহার দপ্তর স্থাপন করিলেন। তিনি পাক বিমান বাহিনীর অফিসার। সদ্য মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। স্থলযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁহার সীমাবদ্ধ বৈকি! তবু তাহাকে পাইয়া আমরা আরও উৎসাহিত হই এবং আমাদের মনোবল বাড়িয়া যায়। তিনিও অল্পদিনের মধ্যে বিশেষ নিপুণতার পরিচয় দিয়া আমাদেরকে চমৎকৃত করিলেন। রংপুর ও ঠাকুরগাঁও এলাকা নিয়া সেক্টর গঠিত ছিল। তেতুলিয়ায় থাকিয়া কিছুদিন পর্যন্ত কাজ করার পর স্কোয়াড্রন লীডার সদরউদ্দিন সাহেব আসিলেন। ৬নং সেক্টরকে ২টি সাব সেক্টরে ভাগ করা হইল। ঠকুরগাঁ এলাকা নিয়া সাব সেক্টর ৬-এ এবং রংপুর এলাকা নিয়া সাব সেক্টর ৬-বি। সদরউদ্দিন সাহেব ৬-এ সাব সেক্টর কমাণ্ডার এবং ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ সাহেব সাব সেক্টর ৬-বি এর কমাণ্ডার নিযুক্ত হইলেন। তখন ক্যাপ্টেন নজরুল হক সহ-সেক্টর কমাণ্ডার নিযুক্ত হইলেন। জুলাই মাসের প্রথম দিকে নজরুল হক সাহেব অসুস্থ হওয়ায় আমাকেই পুনরায় কমাণ্ড নিতে হইল, কেনন সদরউদ্দিন সাহেবও উপস্থিত ছিলেন না। আমাদের কাজ চলিতে থাকে। প্রারম্ভ হইতে এই সময় পর্যন্ত আমরা স্বাধীন এলাকার জনসাধারণের সাহায্য-সহানুভূতি পাইয়াছি প্রচুর। সমর্থন ও ভালবাসা পাইয়াঠি অফুরন্ত। এই দুর্দিনে এদের মধ্যে এককভাবে যিনি আগাগোড়া আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসিতেন, এমনকি অনেক সময় সামরিক অফিসারের ভূমিকা নিয়া কাজ করিতেন তিনি হইলেন পঞ্চগড় ময়দানদীঘির স্বনামধন্য এডভোকেট জনাব সিরাজুল ইসলাম এম-সি-এ।

 যাই হউক, ইতিমধ্যে আমরা নূতন সেক্টর কমাণ্ডারের নির্দেশ ও প্রেরণায় এবং পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার প্রয়াস পাইতেছি। দুশমনকে অনেকটা ঘেরাও করিয়া তাহার নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টায় আছি। ভজনপুর ডিফেন্স হইতে কোম্পানীগুলিকে উঠাইয়া এলাকার পরিপ্রেক্ষিতে ৩-৬ মাইল আগে বাড়াইয়া অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে লাগানো হইল। কাজেই দুশমনের সঙ্গে ছোটখাটো সংঘর্ষ আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইল। বন্ধুরাষ্ট্রের সাহায্যে আমরাও দুশমনকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিলাম। দিনে দিনে নূতন মুক্তিসেনার দল ট্রেনিং শেষে বাহিনীতে আসিয়া যোগ দিতে লাগিল, আর পরিকল্পনা অনুসারে আমরা তাহাদিগকে দখলকৃত এলাকায় পাঠাইতে আরম্ভ করিলাম। এই সময় আমরা ফিল্ড হেডকোয়ার্টার ভজনপুর হইতে ৫ মাইল সামনে দেবনগর নামক স্থানে স্থাপন করিলাম এবং সাব-সেক্টর হেডকোয়ার্টার তেঁতুলিয়া হইতে ভজনপুর নিয়ে আসা হইল। তখন কোম্পানীগুলোর পজিশন ছিল-সুবেদার হাফিজের ‘এ’ কোম্পানী পঞ্চগড়ের পিছনে কাগপাড়া ওমরখানা, নায়েক সুবেদার আবদুল খালেকের 'বি' কোম্পানী সাহেবজুত- বেরাজুত এবং নায়েক সুবেদার মুরাদ আলীর ‘সি' কোম্পানী নয়াপাড়া এলাকা। সন্দেহ নাই, পূর্বের বিধ্বস্ত অবস্থা কাটাইয়া আমরা তখন অনেকটা সংগঠিত ও সুবিন্যস্ত। তবু যেন একটা বিরাট শূন্যতা সব সময় আমরা অনুভব করিতে লাগিলাম। মঙ্গলময়ের ইচ্ছায় এমনি সময় জুলাই মাসের ১৫ তারিখে আঞ্চলিক অধিনায়ক উইং কমাণ্ডার বাশার একজন নূতন অফিসার নিয় দেবনগর আসিলেন কনফারেন্স করিতে। তথায় উপস্থিতদের মধ্যে সুবেদার মেজর