পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
351

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৪। ৭নং সেক্টরে সংঘটিত যুদ্ধের আরও বিবরণ ...... .....১৯৭১

একটি অপারেশন[১]: ডাঃ মাহবুবুল আলম, এমবিবিএস, বিপি
৩০-১০-১৯৭৯

 ১৪ই আগস্ট, ১৯৭১ সন। রাজশাহীর দক্ষিণাঞ্চল বন্যাকবলিত। পদ্মা নদীর দুই কূল ভেসে গেছে। যেদিকে চোখ যায় মনে হয় যেন একটা সাগর, তারই মাঝে চোখে পড়ে দু-একটি গ্রাম। বহু গৃহপালিত পশু ভেসে যাচ্ছে আর নদীর দু’পাশের লোকজন প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে ঠাঁই পেতে চেষ্টা করছে তারই ঘরের চালে বসে অনাহারে-উপবাসে। সেই দিনটিতেই পাকবাহিনী ঢাকঢোল পিটিয়ে উদযাপন করতে চাইছে ১৪ই আগষ্ট, স্বাধীনতা দিবস। আর তার সাথে যোগ দিয়েছে তাদেরই পদলেহনকারী কিছু সংখ্যক আলবদর বাহিনীর লোক। চাঁপাইনওয়াবগঞ্জ শহরের লোকজনকে জড়ো করা হয়েছে পাকসেনাদের মহত্ত্বের প্রশংসা করতে, বিকেলে টাউন হলে সম্বর্ধনা সভা ডেকে। আর্মি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক প্রধান অতিথি। জাঁকজমক পরিবেশে সবকিছুর পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এদিকে ফরিদপুর বি-ও-পি তে সকাল ৭টায় সেদিন প্রায় এক কোম্পানী মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত করেছেন মেজর গিয়াস (বর্তমানে ব্রিগেডিয়ার)। পদ্মা ও মহানন্দা নদীর মাঝামাঝি এ বি-ও-পিসহ আরও চারটি বি-ও-পি জুড়ে প্রায় দুইশত বর্গমাইল এলাকা ২৬শে মার্চের পর থেকেই মুক্ত ছিল। পাকবাহিনী বহু চেষ্টার পরও এর কোনটি অধিকার করতে পারেনি স্বাধীনতার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত। ৮৬জন মুক্তিযোদ্ধাকে মনোনীত করা হল অপারেশনের জন্য। বি-ও-পি’র ভিতরে পাকা মেঝেতে সুন্দর একটা নকশা পূর্ব থেকে বানান ছিল-যার আশেপাশে সকলকে বসানো হল। সেদিন প্রত্যেকটি মুক্তিযোদ্ধার চোখেমুখে ছিল জিঘাংসা আর দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ের চিহ্ন।

 নকশনার উপর শত্রুর ঘাঁটি আর অবস্থান সম্বন্ধে একে একে বুঝিয়ে দিলেন মেজর গিয়াস। শত্রুর অবস্থান ছিল তখন নিম্নরূপঃ

 ক) একটি ইনফ্যানট্রি ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার নওয়াবগঞ্জ ও তার সাথে একটি কোম্পানী, যারা নওয়াবগঞ্জ শহরের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে সি-এ-এফ’র সাথে নিয়োজিত ছিল।

 খ) হরিপুর পুলের উপর দুই সেকশনের কিছু বেশী লোক পাহারা দিচ্ছিল। ২২০ ফুট লম্বা এ ব্রিজটি নওয়াবগঞ্জ থেকে দুই হাজার গজের কিছু বেশী দূরে রাজশাহী-নওয়াবগঞ্জ রাজপথের উপর অবস্থিত।

 গ) আমনুরা রেলওয়ে স্টেশনে ছিল সেনাবাহিনীর একটা প্লাটুন, আর এক প্ল্যাটুন ছিল নওয়াবগঞ্জ স্টেশনে। এই প্লাটুনদ্বয়ের কাছে একটা ইঞ্জিন ও দুটি করে বগি থাকত এবং বিশেষ করে রাত্রে তারা আমনুরা ও নওয়াবগঞ্জের সাথে পেট্রোলিং করে বেড়াত।

 এছাড়া এক প্লাটুন আর্মি ও সি-এ-এফ’এর গার্ডও ছিল, যারা নওয়াবগঞ্জের অদূরে নওয়াবগঞ্জ-আমনুরা রেললাইনের উপর দুটি পুল বিদিলপুর নামক জায়গায় পাহারা দিচ্ছিল।

 এই ৮৬জন মুক্তিযোদ্ধাকে বাছাই করলেন মেজর গিয়াস নিজে। তিনি তাদের তিনটি ভাগে ভাগ করলেন। ঘোষণা করলেন যে তিনি নিজে সেই অপারেশন পরিচালনা করবেন। কিংবদন্তীর নায়ক মেজর গিয়াসের নাম


  1. প্রকল্প সংগৃহীত দলিলপত্র থেকে সংকলিত।