পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

442 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে। একই সাথে শ্যামনগরও দখল করা হয়। হিংগলগঞ্জ থেকে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা শ্যামনগর ও কালীগঞ্জে ঘাঁটি স্থাপন করে। ২৩/২৪ সেপ্টেম্বর বাকুন্দিয়া থেকে মুক্তিযোদ্ধারা সাতক্ষীরার দিকে অগ্রসর হয়। সাতক্ষীরার প্রায় ১১ মাইল দূরে কুলিয়াতে পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধ ৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে। ২৪শে নভেম্বর কালীঞ্জ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা কুলিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। কুলিয়ার যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ছয়জন আহত হন। ৬ই ডিসেম্বর মেজর জয়নাল আবেদীন আমাদের সেক্টরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী পিছু হটতে শুরু করে এবং খুলনার দিকে চলে যায়। ৩ রা ডিসেম্বর থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বিভিন্ন এলাকা মুক্ত করতে থাকে। ৬ই ডিসেম্বর একটি লঞ্চ এবং একটা গানবোট নিয়ে জনাব নূরুল ইসলাম মঞ্জুর ৪০০ মুক্তিযোদ্ধা সমভিব্যহারে বরিশালের দিকে রওনা হয়ে যান। ১০/১১ই ডিসেম্বর তারা বরিশাল পৌছেন। ইতিমধ্যে বরিশালের সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন ওমর বরিশাল দখল করে নিয়েছিলেন। খুলনা শত্রমুক্ত হয় ১৭ই ডিসেম্বর। খুলনাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান। তিনি ১৭ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের কাছে আতুসমর্পণ করেন। সাক্ষাৎকারঃ রাজিনা আনসারী নভেম্বর মাসে আমি বুকাবুনিয়া পৌছি। জনাব আলমগীর বুকাবুনিয়ায় এক হিন্দুবাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। ট্রেনিং শেষ হবার পর আমি আলমগীর সাহেবের সাথে কয়েকটি অপারেশনে অংশগ্রহণ করি। তাঁর নেতৃত্বাধীনে আমি পটুয়াখালী, আমতলী, পাথরঘাটা ইত্যাদি স্থানে পাকসেনাদের সাথে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হই। আমতলী থানা অপারেশনঃ আমতলী থানা অপারেশনের কথা আমার আজও মনে আছে। ৫০ জনের একটি দল নৌকায় করে আলমগীরের নেতৃত্বে বুকাবুনিয়া থেকে আমতলী থানা আক্রমণ করার জন্য ভারতের দিকে রওনা দেয়।আমিও ঐ দলের সদস্য ছিলাম। পরদিন রাত ৮ টায় বুকাবুনিয়া থেকে ২৪/২৫ মাইল দুরে আমতলীতে পৌছি। আমতলী এলাকার আরও ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা আমাদের সাথে অংশগ্রহণ করেন। আমরা ১০০ জন মিলে রাত ১ টার সময় আমতলী থানা আক্রমণ করি। আমাদের সাথে ছিল ২ টা হালকা মেশিনগান ও রাইফেল। আমতলী থানায় পাকসেনা, রাজাকার ও পুলিশ মিলে ছিল ১৫০ জনের মত। ওরা আমাদের প্রচন্ডভাবে বাধা দেয়। আড়াই ঘন্টা ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রচন্ড গোলাগুলি চলে। আমি আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের যুদ্ধের সময় মনোবল বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করি। এ যুদ্ধে পাকসেনাদের ২০ জন নিহত এবং অনেক আহত হয়। এরপর আমরা নিরাপদে আমতলী অবস্থান পরিত্যাগ করে বুকাবুনিয়া চলে আসি। আমাদের কেউ এ যুদ্ধে নিহত হননি। এছাড়া আমি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রুষা করি। ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবাযত্ন ছাড়াও তাদের থাকা- খাওয়ার সুবন্দোবস্ত করার দায়িত্ব আমার উপর ছিল। স্বাধীন হবার পর ক্যাপ্টেন মেহেদী আমাকে আমার বাবা-মার কাছে পাঠিয়ে দেন।