পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
567

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড

 এছাড়া আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ভিত্তিক যে নির্দেশ মন্ত্রীসভা আমাকে দিতেন তা আমার অধিনায়কদের কাছে পৌঁছে দিতাম।

 প্রঃ বাংলাদেশের অভ্যন্তরভাগে কিভাবে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়?

 জেনারেল ওসমানী: বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু থেকেই আমরা ঘাঁটিগুলি গড়ে তুলেছিলাম। গণবাহিনী কাজ শুরু করার পর এই ঘাঁটিগুলি অধিকতর সক্রিয় হয়। ঢাকা নগরীতেও কয়েকটি ঘাঁটি ছিল। ঘাঁটি প্রায়ই পরিবর্তন করা হতো। কয়েকটি ঘাঁটি শত্রুর হতে ধরাও পড়েছিল। ঘাঁটিগুলোতে যে কেবল মুক্তিযোদ্ধা ছিল তা নয়, এতে আমাদের ‘কনট্যাক্ট’ এবং কোরিয়াররাও ছিলেন। একটা কোরিয়ার সার্ভিস পরিচালিত হতো। ছিল অয়ারলেস যোগাযোগ। কোরিয়ার-এর আসা যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করা হতো। কোরিয়ার এর মাধ্যমে ভেতরের ঘাঁটিগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা হতো। ঘাঁটি সাধারণত তিন রকমের ছিল- (১) যেখানে অস্ত্র জমা থাকতো, (২) যেখানে তথ্যাবলী সংগ্রহ করা হতো ও যেখান থেকে পাঠানো হতো এবং (৩) যেখান থেকে শত্রুর উপর আক্রমণ করার প্রস্তুতি নেয়া হতো।

 এছাড়া ভেতরে অনেকে ছিলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে বাইরে না গিয়ে ভেতরে থেকে সহযোগিতা করেছেন।

 প্রঃ অধিকৃত এলাকার জনগণের কাছ থেকে কি ধরনের সাড়া পেয়েছিলেন?

 জে: ওসমানী: বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে আন্তরিক ও অকুণ্ঠ সমর্থন আমরা পেয়েছিকেবলমাত্র গুটি কয়েক লোক ছাড়া। বাংলাদেশের লোক ২৬শে মার্চ থেকে সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়ে এসেছেন। অনেকসময় নিজের প্রাণ বিপন্ন করে আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন, সাহায্য করেছেন। এটা অবশ্য সত্য- যারা দালালী করেছেন- রাজাকার আর-বদরের যুদ্ধে অনেক জায়গায় পেয়েছি। তারা বেশীর ভাগ সাহস সেখানে যুদ্ধ করতে দেখিয়েছে যেখানে তাদের মালিক পাঞ্জাবীরা ছিল, আর তা না হলে তারা মুক্তিবাহিনী দেখামাত্র পালিয়ে যেতো। তবে অনেক জায়গায় শত্রুর একটা প্লাটুন থাকতো আর একশো-দুশোজন রাজাকার, আলবদর হতো। জনগণের সাথে শুরু থেকেই যোগাযোগ ছিল। সাড়ে সাত কোটি মানুষের সম্পূর্ণ সমর্থন ছিল। আমার, আমার অধিনায়ক ও মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধাদের সব সময় এমন মনে হতো যে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ আমাদের সঙ্গে শ্বাস নিচ্ছে।

 প্রঃ অধিকৃত সময়ে আপনি কি কখনো ঢাকা এসেছিলেন?

 জে: ওসমানী: ঢাকায় আসিনি। আমি জানি, অনেকে বলেছেন, আমি ঢাকায় এসেছিলাম। সেটা ঠিক নয়। আমি অন্যান্য অঞ্চলে এসেছি ও ঘুরেছি। কিন্তু ঢাকায় আসিনি এবং ঢাকায় আসা ঠিক সম্ভবপর ছিল না। আরেকটি কথা জনগণের সমর্থনের প্রসঙ্গে আমি বলেছি। যোগাযোগ আমাদের সব জায়গায় ছিল সশরীরে— সব জায়গায়, সব শহরে। আপনারা জানেন কিনা জানি না, অমুক তারিখে হাজির হতে হবে বলে টিক্কা খান আমাকে যখন সময় দিলেন তখন তার জওয়াব আমি দিয়েছিলাম। সেই জওয়াব টিক্কা খানকে পৌঁছানো হয়। আমার হতের লেখা জওয়াব। টিক্কা খানের বাড়ীর দেয়ালে একটি বালক গিয়ে সেই জওয়াবের কাগজ লাগিয়ে দিয়েছিল। পরের দিন সেই জাগজটি নাকি কেউ টিক্কা খানকে দেখাবার পর সে বলেছিল- হ্যাঁ, এটি ঐ...এর হাতের লেখা।

 জেনারেল ওসমানী সাক্ষাৎকারে প্রবাসী বাঙ্গালী ও প্রবাসী বাঙ্গালীদের মেডিক্যাল সমিতির চিকিৎসা সাহায্য, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামরিক হাসপাতালসমূহের চিকিৎসা ও সেবা কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভারতীয় জনগণের ও সরকারের প্রতিও তাঁর কৃতজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, তাদের অবদানের কথা ভুলবার নয়। ভারতীয় বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি তিনি তাঁর আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।