পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৩৫

একজনের নাম, আমার খুব পরিচিত অবশ্য তিনি নিজে কিছু করছেন কিনা আমি বলতে পারব না। সংবাদপত্র থেকে যা জানতে পেরেছি, নূরুল আমীন সাহেব। তিনি আমাদেরই এখানে বসতেন। স্পীকার ছিলেন ১৯৪৬ সালে, মুসলিম লীগের আমলে যখন আমরা এই সভায় ছিলাম। আমার যতদূর মনে আছে তাঁর পার্টি সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়েছিল। উনি বোধহয় একাই নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই ব্যক্তিকে খুঁজে বার করে বক্তৃতা দেওয়ানো হচ্ছে। সেই বলছে যে, জোর করে দেওয়ানো হচ্ছে, আবার কেউ বলছে ইচ্ছাকৃতভাবে দিয়েছেন। সে যাই হোক, এইরকম মানুষের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে, এই হচ্ছে চরম দুর্গতি। মিলিটারি নির্যাতন সেখানে চলছে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম লীগ? যারা পকিস্তান তৈরি করেছিল, যারা পাকিস্তানের স্রষ্টা, কোথায় গেল সেই মুসলিম লীগ? সব ধুয়ে মুছে গেছে দেশ থেকে। শুধু যে একটা পার্টি হিসেবেই তা নয়, তাঁদের যে আইডিওলজি বা ভাবধারা, যা তাঁরা প্রচার করেছিলেন- হিন্দু মুসলমান ভাগ করা প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মের দিক থেকে কোথায় সে সব ভাবধারা? আজকে আর সে সব কিছু নেই। আজকে আর কিছু না হোক, এইসব ছেলেরা যারা এসেছে, যুবকরা যারা এসেছে, সাধারণ মানুষ যারা সেখান থেকে এসেছে, এমকি অফিসারও কিছু কিছু এসেছেন, আমরা তাঁদের দেখেছি অনেক দিন তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়নি। তাঁদের দেখে আমার আশ্চর্য মনে হয়েছে এই জন্য যে, অনেক খবর ওদের দেশের আমরা রাখতাম না। তাঁদের ও রাজনীতি আজ কত উর্ধ্বে, কত স্বচ্ছ, কত প্রসারলাভ করেছে, কত গণতান্ত্রিক হয়েছে। এইসব নতুন নতুন যুবক, ছাত্র, যাঁরা ওখান থেকে এসছেন তাঁদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার চিহ্ন মাত্র নেই। এইসব কল্পনাও তাঁদের মধ্যে কোনদিন আসেনি এই সমস্ত নতুন যুবক সম্প্রদায়, একটা নতুন জাতি, যেন মনে হচ্ছে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, সমস্ত নিয়ে একটা সত্যিকারের জাতি তৈরি হয়েছে। আমরা এখানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলি। রায়টে রায়টে সমস্ত ভারতবর্ষ ভরে গেছে। লজ্জার সঙ্গে, দুঃখের সঙ্গে, ক্ষোভের সঙ্গে বলতে হচ্ছে গত ৩-৪ বছর ধরে- এত অব্যবস্থা সত্ত্বেও, এত, প্ররোচনা সত্ত্বেও আমরা বোধ করি সেজন্য ঐ পূর্ব পকিস্তানে, বালাদেশে সেই ধরনের রায়ট বহুদিন ধরে সেখানে দেখিনে। এই সমস্ত নতুন নতুন রাজনৈতিক মানুষ সেখানে তৈরি হয়েছে। আজকে সেখানে ঐ সব দল ধুয়ে মুছে গেছে। মানুষ থেকে যারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিতাড়িত সেই সমস্ত মুসলিম লীগ নূরল আমীনের দল এদের ধরবার চেষ্টা হচ্ছে। যদি কোনরকমে বেঁচে থাকতে পারা যায়। আজকে আমরা সেজন্য একথা মনে করব, এই প্রস্তাবের মধ্যে আমরা যে কথা বলেছি, যদি আরো আন্তরিকভাবে এই প্রস্তাবকে সমর্থন করি, তাহলে একথা আমাদের বলতে হবে। করি কিনা জানি না, সে ভবিষ্যতে আমরা বিচার করব। মানুষ বিচার করবে ভারতবর্ষে, পাকিস্তানে, বাংলাদেশে সমস্ত জায়গায়- পৃথিবীর মানুষ সেটা বিচার করবে। কিন্তু আমাদের এটা মনে হয় যে, আন্তরিকতা আছে কিনা। আমরা সকলে মিলে সমর্থন জানাই।

 সরকার সমর্থন জানিয়েছেন। ভিন্ন প্রদেশের বিধানসভা ও আইন সভাগুলিতেও আমরা দেখেছি সেখান থেকে সমর্থন করে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে; প্রধানমন্ত্রী নিজেও সংসদে প্রস্তাব এনেছিলেন এবং সেটা গৃহীত হয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে খানিকটা যদি সন্দেহ হয় তাহলে আমাদের এখানকার কিছু সদস্য, মাফ করবে, উপায় কিছু নেই, কিন্তু আমাদের প্রথমে মনে হচ্ছে একটি প্রস্তাবের পিছনে যদি আন্তরিকতা না থাকে আমরা যদি এটা মনে না করি যে, এই প্রস্তাব কাগজে হবে না, একে আমাদের কার্যকরী করতে হবে এই আমাদের কার্যকরী করতে হবে, এই আমাদের জীবনমরণ সংগ্রাম ওদের মতো, যাঁরা ওখানে সংগ্রাম করছেন, যাঁরা ওখানে বুকের রক্ত ঢেলে দিচ্ছেন যাঁরা ত্যাগ স্বীকার করছেন- যদি তা হয়, তাহলে আমাদের পরিস্কার করে নিতে হবে যে, আন্তরিকতা কোথায় সেটা ঠিক করতে হবে। কিন্তু একটু সন্দেহ হয়, এটা আপনারা সবাই বিবেচনা করে দেখবেন- আমাদের জানতে ইচ্ছে করে যে, এখানকার সরকারপক্ষ থেকে এই প্রস্তাব তাঁরা এনেছেন এই প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রী নিজে এখানে রেখেছেন, যে সরকারের মধ্যে মুসলীম লীগ আছে, ওরা কি আন্তরিকতার সঙ্গে সমর্থন করেন বাংলাদেশের এই সংগ্রামকে, এই স্বাধীনতার আন্দোলনকে আমরা এখনও তার প্রমাণ পাইনি। কাজেই আমরা নিশ্চয়ই জানতে চাই তাঁদের বক্তৃিতা শুনব। কিন্তু আমাদের মনে হয় এখানে যদি আমরা সাম্প্রদয়িকতাকে প্রশ্রয় দিই এবং অনেক সময় ইয়ং পিপল যারা বাংলাদেশ থেকে এসে আমাদের বলছে এখানে আবার মুসলিম লীগ- ওখানে তো সব শেষ হয়ে গেছে, ওদেরকে আমরা তো শেষ করে দিয়েছি, ওখানে যাতে গণতন্ত্র প্রসার লাভ করে তার