পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৭৩

 শ্রী অজিত কুমার গাঙ্গুলী: মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহোদয়, মুখ্যমন্ত্রী মহাশয় যে প্রস্তাব এনেছেন সে প্রস্তাব আমি সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করছি। শুধু মুখ্যমন্ত্রী মহাশয় এই প্রস্তাব এনেছেন বলেই নয়, বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান যেমন বাংলাদেশের মানুষকে সেখানে সমস্ত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, আজকে এই হাউসে এই যে প্রস্তাব এসেছে সেটা চার কোটি পশ্চিমবঙ্গবাসীর প্রতিভূ এই বিধানসভা সদস্যদের পক্ষ থেকে এসেছে। সেজন্য এর একটা মৌলিক গুরুত্ত্ব আছে। সাধারণভাবে অনেক সময় অনেক প্রস্তাব এখানে সমর্থিত হয়, সেটা একটা দিক, আজকে উপাধ্যক্ষ মহাশয়, যদি প্রস্তাবটা দেখেন, দেখবেন এটা শুধু সমর্থনসূচক নয়। এই প্রস্তাবের একটা গভীর তাৎপর্য রয়েছে। প্রতিটি প্যারাতে দেখবেন একটা কার্যকরী সমন্বিত ধারা রয়েছে। আমি সেদিক সম্বন্ধে আপনার মাধ্যমে এই সভায় উপস্থিত করতে চাই। সেটা হচ্ছে- আপনি লক্ষ্য করেছেন, বাংলাদেশে যে লড়াইটা হচ্ছে সেই লড়াই অত্যাচারীর বিরুদ্ধে লড়াই নয়, এটা একটা ঔপনিবেশিক দাসত্ব থেকে মুক্তির লড়াই। লিবারেশন স্ট্রাগল ফ্রম কলোনিয়াল অপ্রেশন। এটা আমাদের বুঝতে হবে। আমারও বাড়ি পুর্ববঙ্গে। আপনারা প্রায়ই বনগাঁর নাম শুনে থাকেন, সেই বনগাঁ থেকে ঝিকরগাছা ১৯ মাইল দূরে গেলে দেখতে পাবেন সেখানে নতুন বাড়ি ১১ খানার বেশী হয়নি এই অত্যাচারী শাসনের অধীনে। ওখানে বেনাপোলের বাজার, নাভারণ বাজার, ঝিকরগাছা বাজার যতদুরে যাবেন দেখতে পাবেন কত অন্যায় হয়েছে। একটা ঔপনিবেশিক দেশকে সেই অবস্থায়ই রেখে দিয়েছে। আমরা এটা বুঝি কেননা আমরা এই ঔপনিবেশিক দাসত্বের মধ্যে ছিলাম, আমরা জানি বৃটিশের অত্যাচার কি, সেই অত্যাচারের কাহিনী মনে রেখে আমরা এই জিনিস উপলব্ধি করতে পারি। কারণ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই পশ্চিমবঙ্গবাসী করেছিল। আজকে ওখানে যে লড়াই চলছে, সেই লড়াইয়ের প্রতি সেদিক দিয়ে আমাদের সহানুভূতি আরও গভীর। এরা কি অত্যাচারই না করেছিল। আপনি উপাধ্যক্ষ মহাশয়, জানেন ইয়াহিয়া জন্তু-জানোয়ারকেও ছাড়িয়ে গেছে। যশোরে পোলের হাট বলে একটা জায়গা আছে। সেখানে বাড়িতে চার জন মরা পড়ে আছে। একটা কুকুর, পোষা কুকুরই হবে, সেই মড়াগুলোকে শুকুনের হাত থেকে রক্ষা করাবার জন্যই হয়ত পাহারা দিচ্ছে। একটা কুকুরের যে বোধ আছে ইয়াহিয়ার সে বোধও নেই। শিশু নারী বৃদ্ধ নির্বিচারে হত্যা করে চলেছে। সাড়ে সাত কোটি মানুষ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই খবর রাখেন, মাননীয় সদস্যরা অনেকে জানেন, খবরের কাগজে দেখে থকবেন, লোকমুখেও শুনে থাকবেন এই লড়াইয়ের কাহিনী। তাদের অনেকে দশ-বার দিন পর্যন্ত স্নান করতে পারেনি, তার মধ্য থেকেই লড়েছে, তাদের দেহ বন্ধ হয়ে আসছে কিন্তু এর মধ্যে থেকেই সেখানে লড়াইয়ের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে তারা এতদিন রয়েছে। এক মাসের বেশি হয়ে গেল আজ পর্যন্ত তাদের স্বীকৃতি দিতে পারলেন না। প্রথম দিকে কথা উঠেছিল কিভাবে সমর্থন দেব? গভর্নমেণ্ট কোথায়? তারপর সেখানে প্রতিষ্ঠিত হল, এখন সে প্রশ্ন উঠতে পারে না। প্রশ্ন হতে পারে, আমরা তো দিতে পরি কিন্তু পৃথিবীতে তো অনেক দেশ আছে কই কিছু তাঁরা তো করলেন না? কেন্দ্রীয় সরকার যদি এই ভেবে বসে থাকেন যে আরও অন্যান্য দেশ সমর্থন করুন তখন আমরাও সমর্থন করব, তাহলে বুঝতে হবে, খানিকটা মজা দেখার মনোভাব নিয়ে তার থাকছেন। এখানে এই প্রস্তাব এককভাবে হয়েছে এবং জ্যোতিবাবু বলেছেন আমরা দিল্লী যেতে চাই। আমি বলি দিল্লী যাবেন তাতে আমাদের সমর্থন আছে, কিন্তু মনে রাখবেন দিল্লী সব নয়। আমরা যখন একসঙ্গে বসে প্রস্তাব রচনা করেছি তখন কেন তাকে কার্যকরী করার ব্যবস্থা করতে পারব না? কেন তার জন্য কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারব না? কাজেই আমি মনে করি যখন এককভাবে সর্ববাদীসম্মত প্রস্তাব এসেছে তখন একে কার্যকরী করার জন্য একটা সুপরিকল্পনা আমাদের একসঙ্গে বসে করতে হবে যাতে অদূরভবিষ্যতে এর জন্য আমরা ব্যবস্থা করতে পারি। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যুদ্ধে যেমন সামনের ফ্রণ্ট লড়াই করে ঠিক তেমনি রিয়ারেরও একটা কাজ থাকে। এখানে যারা এসেছে, এই সরকার তাদের বাস্তুহারা বলে মনে করেন। তাঁরা মনে করেন না যে, লক্ষ লক্ষ সৈনিক এসেছে ওই রিয়ারের। এদের শুধু খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী মনে রাখবেন এই সমস্ত সৈনিক যারা এসেছে তাদের অস্ত্র দিয়ে, ট্রেনিং দিয়ে এরকম ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তারা আবার ওখানে যেতে পারে। আমি সুবোধবাবুর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলছি আমাদের দেশেও ভলাণ্টিয়ার রেইজ করতে হবে এবং তাদের হাতে অস্ত্র দিতে হবে। সেটা তারা আমার বুকে মারবে, না কার বুকে মারবে সেই