পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৩০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৭৫

শুনলাম। একটু আগে মুসলিম লীগের একজন যুক্তি দিয়ে বললেন যে, এখানে মুসলিম লীগ করা হয়েছে তার কারণ মুসলীমদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হত। তিনি এইটুকুই কেন বললেন আমি জানি না। তাঁর এটা বলা উচিত ছিল এবং আমাদের পার্টি এই কথাই বলেছে যে, কংগ্রেসী রাজত্বে মুসলমানদের প্রতি শুধু বৈষম্যমুলক আচরণই নয়, তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে রাখা হয়েছে। একথা বলার সৎসাহস তাঁদের নেই কিন্তু আমাদের পার্টি বলেছে এবং আমরা সংগ্রামও করেছি। সংখ্যালঘুদের যে সমস্যা সেটা আমরা জানি কিন্তু তাদের সমর্থনের জন্য মুসলিম লীগের গঠন করার দরকার হয়না। তাই যাঁরা মুসলিম লীগের সদস্য আছেন তাদের ভেবে দেখতে অনুরোধ করবে যে আজকে পাকিস্তানে যা হচ্ছে সেই পাকিস্তানই কি করে হল। অতীতের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা কি আমরা ভুলে যাব। আমি খুশি হলাম সাত্তার সাহেব যখন বললেন যে, এতদিন পরে প্রমান হল দ্বিজাতিতত্ত্ব ভুল, এটা শুনে। এটা প্রমান হবেই, কিন্তু অনেক ক্ষয়ক্ষতির পরে। এত মূল্য দিতে হবে স্বাধীনতার একথা কেউ জানে না। আমার মনে পড়ে না যে, এইভাবে কোন দেশ স্বাধীন হয়েছে যাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি পুড়ে গিয়েছে, তাদের হত্যা করা হয়েছে। এত নির্যাতন পৃথিবীর ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজকে যাঁরা মুসলিম লীগ করছেন তাঁদের মনে সত্যিই জানি না মুসলমানদের ভাল করার ইচ্ছা আছে কিনা, তা যদি থেকেও থাকে তাহলে এটা কি বুঝতে পারছেন না যে, মুসলিম লীগ করা মানেই হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তাঁরা কি বুঝতে পারছেন যে, মুসলিম লীগ বাড়লেই জনসঙ্ঘও বাড়তে বাধ্য। তখন বাংলাদেশের আবহাওয়া বিষাক্ত হবে এবং তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, যাদের কথা নিয়ে তাঁরা বলছেন। তারপরে ওঁরা বলেছেন ডেমোক্রেটিক কোয়ালিশন এলিয়াস, ১৪৪ এই হচ্ছে ডেমোক্রেটিক কোয়ালিশ। যেদিন স্যার, এই গভর্নমেণ্টের জন্ম হল সেইদিন থেকে ১৪৪ ধারা। আর স্যার, আমার বিশ্বাস, যেদিন এর মৃত্যু ঘটবে সেদিন পর্যন্ত ১৪৪ ধারাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে, যা ইতিপূর্বে হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের সে অভিজ্ঞতা আছে, ১৪৪ ধারা মিলিটারি, সি আর পি, এসব দেখা গিয়েছে। সংগ্রামের মাঠে তাঁর ফয়সালা হবে একথা বলেছেন আমাদের কমরেড হরেকৃষ্ণ কোঙার। তিনি বলেছেন, সংগঠনের জোর যদি আমাদের থাকে, মানুষকে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে পারে তাহলে দেখে নেব। আর একটি কথা বলেই আমি শেষ করব। স্যার, বাংলাদেশে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা হঠাৎ হয়ে যায়নি। এখানে অনেক মাননীয় সদস্য বলেছেন, আমি সেকথার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না, শুধু এইটুকুই বলব, পাকিস্তান হবার পর থেকেই এই আন্দোলন চলছে। কোনদিনই পাকিস্তানের জনগন এই স্বেচ্ছাচার শাসনকে মেনে নেয়নি। পাকিস্তান হবার পর থেকেই তাঁরা দাবি করে আসছেন গণতন্ত্রের, যে দাবি এমন কিছুই ছিল না। ২৫শে মার্চের আগে পর্যন্ত তাঁদের এইটুকুই দাবি ছিল। সেখানে এ ইয়াহিয়া খান যিনি এত অত্যাচার করলেন তিনি এটাকে মিলিটারি দিয়ে দাবিয়ে দিতে চেয়েছেন। পাকিস্তানের জনগণকে আমি এই কথাই বলতে চাই যে, আমাদের বাংলাদেশের এই আন্দোলন সম্পর্কে যে মনোভাব সেটা শুধু এই জন্য নয় যে, পাকিস্তান আমাদের প্রতিবেশী, তার থেকেও যেটা বেশি সেটা হল ২৩ বছর আগে আমরা একাই ছিলাম। আমাদের একই ভাষা, একই ঐতিহ্য, একই ইতিহাস, একই সমস্ত জিনিসআমাদের কোন জিনিসে কোন পার্থক্য করা যায় না। আমাদের দেশে যখন জাতীয় মুক্তি আন্দোলন বেড়ে গেল, বিদেশী সম্রাজ্যবাদীরা যখন বুঝল যে, সরাসরি এই দেশে আর শাসন করা যায় না তখন তারা এই ষড়যন্ত্র করেছিল। তারা দেখলেন যে ধর্মের নামে এর মধ্যে একটা বিবেধ আনা যায়, এবং একথা বললে সম্পূর্ন হবে না। তারপর মুসলিম লীগ পাকিস্তানের দাবি তুলল এবং তারপর দেশ বিভক্ত হল। শুধু এইটুকু বললেই সম্পূর্ণ বলা হবে না। কেন না, মুসলিম লীগ তাতে কৃতকার্য হত না যদি এই ষড়যন্ত্রের শেষের দিকে কংগ্রেস নেতারা লিপ্ত হয়ে যেতেন। সেজন্য বলছি, এতবড় অন্যায় যা হল তার জন্য সেই কংগ্রেস এবং সেই মুসলিম লীগ দায়ী। যাদের কোন দিন ইতিহাস ক্ষমা করবে না। আজকে দেখছি ইতিহাসের পরিহাস। সেই দুটি দল আবার মিলিতভাবে এখানে ডেমোক্রেটিক কোয়ালিশন করছে এবং আমাদের কাছে শিক্ষা দেবার চেষ্টা করছে যে, তারা নাকি দেশের ভাল করছে। মাননীয় স্পীকার মহাশয়, আমি আপনার মাধ্যমে আমার শেষ কথা বলে আমার বক্তব্য শেষ করছি। আমাদর নেতা জ্যোতিবাবু যে কথা বলেছেন যে আমরা নিশ্চই এই প্রস্তাবটি পাস করাব। কিন্তু এর মধ্যে ঐ ট্রেজারী বেঞ্চের লোকদের কতটা আন্তরিকতা