পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
১১৬

দিকে তাদের চাপ বাড়াতে থাকে, আমি ক্যাডেট হুমায়ুন কবিরকে একটা কোম্পানীসহ কসবার উত্তরে লাটুমুরায় অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিই।

 ৩০ শে মে সন্ধ্যা ৭ টায় আমাদের ১ টি ছোট গেরিলা দল ইকবালের (বাচ্চু) নেতৃত্বে বিবিরবাজারে শত্রুসেনাদের অবস্থানে আঘাত হানার জন্য পাঠান হয়। পাক সেনারা তখন তাদের অবস্থানের উপর বসে তাদের সান্ধ্যভোজনে ব্যস্ত ছিল এবং এ সময়টি সম্বন্ধে আমাদের স্থানীয় লোকের দ্বারা খবর আগে থেকেই সংগ্রহ করা ছিল। পাক সেনারা যখন খাওয়ায় ব্যস্ত ছিল, সে সময় আমাদের গেরিলা দলটি তাদের উপর হঠাৎ গোমতী বাঁধের উপর থেকে গোলাবর্ষণ করে। এতে শত্রুদের ১০ জন হতাহত হয়। ঐ দিন সাড়ে ৬ টার সময় আমাদের মর্টার প্লাটুন সিঙ্গারবিল শত্রুঅবস্থানের উপর গোলাবর্ষণ করে। এর ফলে শত্রুদের ৬ জন নিহত এবং ৭ জন আহত হয়। ২৯ শে মে চৌদ্দগ্রাম বাবুর্চি রোডে হরিসর্দার বাজারের নিকট রাস্তার ব্রিজ সম্পূর্নভাবে উড়িয়ে দেয়া হয়।

 ২৯ শে মে বিকাল ৪ টায় ৪র্থ বেঙ্গল এর পাইওনিয়ার পার্টিকে লাকসাম-চাঁদপুর রেলওয়ে লাইনে মাইন পুঁতে রেল গাড়ী লাইনচ্যুত করার জন্য পাঠানো হয়। এ দলটি মাইন পুঁতে লাকসাম এবং নোয়াখালীর মাঝে তিনটি রেলওয়ে বগী সম্পূর্নভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়। ফেরার পথে পাইওনিয়ার পার্টির ছোট দলটি চৌদ্দগ্রাম-চট্টগ্রাম সড়কের উপর একটি সদ্য মেরামত করা ব্রিজের উপর মাইন পুঁতে দেয়। রাত ৮টায় একটি জিপ ৫ জন পাকসেনা সহ ফেনীর দিক থেকে আসে। জিপটি যখন ব্রিজের উপর পৌঁছে তখন মাইন বিস্ফোরিত হওয়াতে ব্রিজটি সম্পূর্ন বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এর ফলে ১ জন অফিসারসহ তিনজন পাকসেনা নিহত এবং অন্য ২ জন গুরুতরভাবে আহত হয়। ঐ দিন সন্ধ্যায় তিনজন গেরিলাকে হ্যাণ্ড গ্রেনেডসহ চৌদ্দগ্রাম থানায় পাঠান হয়। থানার সন্নিকটে দিঘির নিকট শত্রুদের একটি বাংকার ছিল। গেরিলা দলটি গ্রেনেড ছুড়ে বাংকারটি ধ্বংস করে দেয়। ফলে ৩ জন শত্রুসেনা নিহত হয় এবং কিছু স্থানীয় লোকও আহত হয়। ৩০ শে মে চৌদ্দগ্রামের আধ মাইল উত্তরে চৌদ্দগ্রাম মিয়াবাজার রোডের উপর ৪র্থ বেঙ্গল এর বি কোম্পানীর একটি প্লাটুন হঠাৎ শত্রুদের ২৭ জনের একটি দলকে দূরে থেকে আসতে দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি এ্যামবুশ পাতে। শত্রুরা যদিও এ অতর্কিত আক্রমণে হকচকিত হয়ে যায় কিন্তু তারা ত্বরিত গতিতে রাস্তার পশ্চিম পাশে সরে পড়ে। এ্যামবুশের ফলে শুধু তিনজন শত্রুসেনা নিহত হয়। আমাদের গেরিলারা লাকসাম বাংগোড়া কাঁচা বাস্তার উপর ফেলনা গ্রামের নিকট মাইন পুতে রাখে। শত্রুদের একটি তিন টনের গাড়ী এ মাইনের সাথে সংঘর্ষে সম্পূর্ন বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ২৯ শে মে ৪র্থ বেঙ্গল এর 'ব্রাভো' কোম্পানীর একটা প্লাটুন ২টি ৩ ইঞ্চি মর্টারসহ সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম থানার উপর মর্টারের সাহায্যে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। অতর্কিত মর্টারের গোলার আঘাতে এবং হালকা মেশিনগানের আঘাতে তাদের যথেষ্ট হতাহত হয়।

 জুন মাসের ৪ তারিখে রাত দুটোর সময় ৪র্থ বেঙ্গলের ‘এ’ কোম্পানীর ২টা প্লাটুন মর্টার নিয়ে শত্রুদের অবস্থানে গোপন পথে প্রবেশ করে শালদা নদীর দক্ষিণে বাগড়া বাজার নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ভোর বেলায় পাকসেনারা যখন তাদের বাংকারের উপর অসতর্কভাবে ঘোরফেরা করছিল ঠিক সে সময় আমাদের সৈনিকরা তাদের উপর অতর্কিত মর্টার এবং মেশিন গানের সাহায্যে আক্রমণ চালায়। পাক সেনারা এ অতর্কিত আক্রমণে সম্পূর্ণ হকচকিত হয়ে যায়। আধ ঘণ্টা পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো পাল্টা জবাব আসে না। এ আক্রমণের ফলে শত্রুদের প্রায় ১৭ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়। আমাদের একজন সৈন্য বুকে গুলি লেগে গুরুতরভাবে আহত হয়। এ আক্রমণের তিন ঘণ্টা পরে শত্রুরা যখন ভেবেছিল আমাদের সৈন্যরা অবস্থান পরিত্যাগ করেছে এবং তাদের আহতদের পিছনে নিয়ে যাবার যখন ব্যবস্থা করছিল, ঠিক সে সময় আমাদের সৈন্যরা আবার তাদের উপর দ্বিতীয় দফা আক্রমণ চালায়। এতে শত্রুদের আবারও ৫ জন নিহত হয়। এরপর আমাদের পার্টি অবস্থান ত্যাগ করে চলে আসে। ঐ দিনই সকাল ৭ টার সময় আমার আর একটা পার্টি শত্রুদের রাজাপুর অবস্থানের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ৬ জন শত্রুকে নিহত করে এবং তিনজনকে আহত করে। আমাদের আরেকটি দল