পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২১৫

পারে তার দায়িত্ব বেঙ্গল রেজিমেণ্টের কোম্পানীকে দেওয়া হয়। এবং সিদ্ধান্ত হয় যে, তাহার ঢাকা-নরসিংদী পাকা রাস্তায় ফোর্সের যে কোন অগ্রাভিযান প্রতিরোধ করিবে। আমরা ঢাকার পূর্ব দিকে আক্রমন করিব। সেই ভাবে ১-৪-৭১ তারিখ রাত্রিতে আমি ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান সহ ৩” মর্টার দ্বারা ঢাকায় ক্যাণ্টনমেণ্ট এরিয়াতে ইপিআর-এর ৬০ জন লোক মিলিয়া আক্রমণ করি যাহাতে পাক ফোর্সের গাড়ী ও অন্যান্য যুদ্ধসরঞ্জাম ধ্বংস করি। এই যুদ্ধ চালাইতে আমাদের সাহায্য করেন আওয়ামী লীগ নেতা জনাব লাল মিয়া সাহেব। তাহারই পরিপ্রেক্ষিতে পাক ফোর্স তাহাদের ক্ষতিপূরণ করিবার জন্য ৩-৪-৭১ তারিখে রেডিওতে হুকুম জারি করে ঢাকার সমস্ত বাস ও ট্রাক রমনা মাঠে ড্রাইভার সহ রিপোর্ট করিতে। এর আগে আকাশবাণী কলিকাতা হইতে এই খবর প্রচার হইয়াছিল যে, একটি বিরাট মুক্তিবাহিনী দল নরসিংদী হইয়া ঢাকার দিকে অগ্রসর হইতেছে। আমরা ভাঙ্গা হইতে পরপর দুইদিন ও রাত্রিতে আক্রমণাত্মক এ্যাকশন চালাইলে পাক ফোর্স তাহার ডেমরা ঘাঁটির শক্তি বৃদ্ধি করিতে থাকে বলিয়া সংবাদ পাই। আরও জানিতে পারি যে, আমাদের বেইসের উপর আক্রমণ করিবে। কিন্তু আমাদের ২২ জন লোকের একটি দল গেরিলা পদ্ধতিতে ঢাকার তৎকালীন পাক মোটর বর্তমান বাংলা মোটরে ৪-৪-৭১ তারিখের রাত্রিতে এবং ঢাকা-ডেমরা রোডে ৫-৪-৭১ এ রাত্রিতে দুই জায়গায় সরকারী গাড়ী সহ বেশ কিছু পাক ফোর্সকে মারে। এই দুইটা সফল অপারেশনে অংশ গ্রহন করিয়াছিল হাবিলদার হাকিম, সিপাই নান্নু মিয়া সিপাই আফতার, সিপাই ক্লার্ক মান্নান।

 ৩-৪-৭১ তারিখে বেলা অনুমান ১১/১২ টার সময় আমি একজন সিপাই-এর মারফত সংবাদ পাই যে, ঢাকায় বহু ইপিআর মারা পড়িয়াছে। এবং প্রায় ১০০ লোক ঢাকার জিঞ্জিরায় সুবেদার গণি সাহেবের সাথে আছে। আমি একজন লোক মারফত চিঠি দিয়া গনি সাহেবকে আমার সহিত যোগদানের অনুরোধ জানাই। ৬- ৪-৭১তারিখে আমি নায়েক সুবেদার সুলতান- এর মারফত জানিতে পারি যে, সুবেদার গনি সাহেব নরসিংদীতে লোক নিয়া পৌঁছিলে ঐ জায়গায় বিমান আক্রমণ হয়। এবং তাহারা আবার ছত্রভঙ্গ হইয়া গিয়াছে। এবং অন্য দিকে বেঙ্গল রেজিমেণ্টের কোম্পানী নয়া ক্যাপ্টেন সাইগল ঢাকা-নরসিংদী রাস্তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়িয়া দিয়া নরসিংদী পার হইয়া পূর্ব দিকে চলিয়া গিয়াছেন। এই সংবাদ শুনিয়া আমার লোক জনের মনোবল কমিয়া যায়। আমার ২০/২২ জন লোক তখনও ভাঙ্গা বেইস হইতে ঢাকায় আপারেশনে ছিল। অন্যদিকে ২-৪-৭১ তারিখে আমি নায়েক সুবেদার সিরাজ-এর নেতৃত্বে ৪০ জন লোকের একটি প্লাটুন ঘোড়াশাল রেল স্টেশন এরিয়া প্রতিরক্ষার জন্য পাঠাই। ৬-৪-৭১ তারিখে বেঙ্গল রেজিমেণ্ট চলিয়া যাওয়ার সংবাদ পাইয়া আমি তাহাদেরকে আমার সঙ্গে পাঁচদোনায় ফেরত ডাকিয়া পাঠাইয়া নিজে ভাঙ্গার লোকজন সহ পাঁচদোনার শীলমন্দির নামক গ্রামে প্রতিরোধ ব্যবস্থা করি, অর্থাৎ ডিফেন্স লাগাই। অন্য দিকে খবর পাই যে, পাক ফোর্স ডেমরায় জমা হইয়া আমাদের উপর আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি নিতেছে।

 ৭-৪-৭১ তারিখে রাত্রে জানিতে পারি যে, পাক ফোর্স সকাল বেলা আমাদের উপর হামলা করিবে। তাই পাঁচদোনার আগে ১২-১৪ জন লোক দিয়া একটি এ্যামবুশ পার্টি লাগাই যাহাতে সিপাই স্নানু, মান্নান, হাকিম ছিল। ঠিক ৮-৪-৭১ তারিখ সকাল আনুমানিক সাড়ে সাড়ে ছয়টায় পাক ফোর্স অগ্রসর হইতে থাকিলে এ্যামবুশ পার্টি একযোগে ৪ টি এলএমজি দ্বারা আক্রমণ চালায় যাহাতে পাক ফোর্সের প্রায় ১৫৫ জনের মতলোক হতাহত হয় এবং কয়েকটি গাড়ীও নষ্ট হয়। পাক ফোর্স ঐ দিন আর অগ্রসর হয় নাই।

 ৯-৪-৭১ তারিখ অনুমান নয়টার সময় পাক ফোর্স এয়ার ও আর্টিলারী সমর্থনপুষ্ট হইয়া আমাদের ওপর হামলা চালায়। অনুমান এক হইতে সোয়া ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাক ফোর্স-যাহাতে ৩১ বেলুচ রেজিমেণ্ট ছিল-আক্রমণ ছাড়িয়া দিয়া পাঁচ হইতে পিছে চলিয়া যায়। যুদ্ধ কিছুটা স্তিমিত হইয়া পড়ে কিন্তু আর্টিলারী ফায়ার চলিতে থাকে। আমাদের তরফ হইতে চলিতে থাকে তিন ইঞ্চি মর্টার। বেলা অনুমান ৫ ঘটিকার সময় পাক ফোর্স আবার আমাদের উপরে এয়ার ও আর্টিলারী দ্বারা সমর্থন পুষ্ট হইয়া দ্বিতীয়বার হামলা চালায়। এই যুদ্ধে পাক ফোর্সের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। আমাদের দুটি মেশিনগান খারাপ হইয়া যায়। পাক ফোর্স এইবারও যথেষ্ট ক্ষতি স্বীকার করিয়া আক্রমণ ছাড়িয়া দিয়া সন্ধ্যার সময় গোপালদী বাজারে চলিয়া যায়। এদিকে দুইবারের