পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
২১৬

আক্রমণে আমাদের কিছু হাতিয়ার খারাপ হইয়া যায়। যাহা হউক, সন্ধ্যার পর আমরা সিন্ধান্ত নিই যে আমরা এই আবস্থায় ছাড়িয়া ভৈরবের দিকে যাইয়া বেঙ্গল রেজিমেণ্টের সাথে মিলিব। আশুগঞ্জে গিয়া বেঙ্গল রেজিমেণ্টকে পাওযা যায়। এবং সেখানে হইতে কিছু বেঙ্গল রেজিমেণ্টসহ ১৩-৪-৭১ তারিখে রামনগর পুলের নিকট আর একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা হয়। কিন্তু ১৪-৪-৭১ তারিখে সূর্যাস্তের আগে হইতেই এয়ার ও আর্টিলারী সমর্থনপুষ্ট হইয়া পাক ফোর্স হামলা চালায় এবংর দুপুর ১২ টার আগেই ঐ ডিফেন্স নষ্ট হইয়া যায় এবং এখানকার লোকজন ছত্রভঙ্গ হইয়া যায়। কিছু লোক মেঘনা পার হইয়া সিলেট জেলার ভিতর চলিয়া যায়।

 আমি কিছু সংখ্যক লোকসহ কিশোরগঞ্জ হইয়া ময়মনসিংহে যাই, কারণ আমার ছেলেপেলে ঐখানে ছিল। তারপর ১৫-৪-৭১ তারিখ বিকালবেলা আমি মুক্তাগাছা হইয়া ময়মনসিংহ জেলার মধুপুরে জিয়াউল হক সাহেবের সঙ্গে দেখা করিলে জানিতে পারি যে, টাঙ্গাইলের আগে জামুর্কী এলাকায় নায়েক সুবেদার হারিসের নেতৃত্বে ইপিআর দলের সঙ্গে পাক ফোর্সের তুমুল যুদ্ধ হয় এবং দুই দিকের ভীষণ ক্ষতি হয়। তাহাতে ২০/৩০ জন ইপিআর মারা যায়।

 পরদিন ১৭-৪-৭১ তারিখে খুব সকাল হইতে পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের ৪টি জঙ্গী বিমান ভীষণভাবে ময়মনসিংহ শহর ও অন্যান্য এলাকায় আক্রমণ চালায় যাহাতে কিছু সিভিল লোক শম্ভুগঞ্জ ঘাটে মারা যায় এবং কয়েকটি বাস ও দোকানঘর পুড়িয়া যায়। অন্যদিকে গফরগাঁওয়ে বেশ কিছু সিভিল লোক মারা যায় এবং অনেক জায়গা পুড়িয়া যায়। তাহা ছাড়া মধুপুর ও জামালপুরেও বিমান আক্রমণ হইয়াছে বলিয়া সংবাদ পাই।

 তারপর আমরা আমাদের অবস্থানে যে কয়েকজন লোক ছিল তাহাদের নিয়া বর্ডারে করইতলী হেডকোয়ার্টারে ফুলপুর ও হালুয়াঘাটের মাঝামাঝি সায়চা পুরঘাটে ডিফেন্স তৈয়ার করি। কিন্তু ২২-২৩ তারিখে পাক ফোর্স আবার এয়ার ও আর্টিলারী দ্বারা সমর্থনপুষ্ট হইয়া আক্রমণ চালায় সকালের দিকে। সেখানে আমরা অতি অল্প সময় টিকিতে পারি। ২৩-৭-৭১ তারিখে আমি আমার সঙ্গী লোকসহ করইতলী ক্যাম্পে থাকাকালীন সুবেদার হাকিম সাহেব আসিলে তাঁহাকে উইং-এর ভার দিয়া আমি আমর ফ্যামেলিসহ হিন্দুস্থানের ভিতর দিয়া গাছুয়াপাড়া হইতে ডালু হইয়া আমার বাংলাশে ঢুকিয়া বহু কষ্টে আমার ফ্যামেলি বাড়ী পৌঁছাইয়া দিয়া আগরতলা কোনাবন বর্ডার দিয়া ঢুকিয়া পুরানো ফোর্সের সাথে ৩ সেকটরের অধীনে বেলচরা সাবসেকটরে যাইয়া যোগদান করি। সেখানে ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান সাহেব ছিলেন। তারপর ঐ সব সেক্টরের ১৬-৫-৭১ হইতে যুদ্ধে লিপ্ত থাকি।

সশস্ত্র প্রতিরোধে ময়মনসিংহ

সাক্ষাৎকার : সুবেদার মেজর জিয়াউল হক

৮-৬-৭১

 ২৬শে মার্চ বেলা একটার সময় ঢাকা ইপিআর হেডকোয়ার্টার থেকে কমর আব্বাসকে অয়ারলেস সেটে এ কথা বলার জন্য ডাকা হয়। তখন ডিউটি অপারেটর ছিল নায়েক ফরহাদ হোসেন (বাঙ্গালী)। ঢাকা থেকে বলা হল, অয়ারলেস সেট অন করার পর সেখানে যেন কেউ না থাকে। তাই নায়েক ফরহাদ হোসেন ঝুঁকি নিয়ে পাশের ঘরে একটা জায়গা চুপি চুপি দাঁড়িয়ে থাকে। সৌভাগ্যবশত সে পাঞ্জাবী ভাষা বুঝত। ঢাকা থেকে উইং কমাণ্ডারকে বলা হচ্ছিল সমস্ত বাঙ্গালী ইপিআরকে নিরস্ত্র করার জন্য এবং কোতে, ম্যাগজিন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চাবি নিয়ে নিতে এবং বাঙ্গালীদের কোন ডিউটি না দেয়ার জন্য। ঢাকা থেকে ইপিআর-এর স্টাফ কর্নেল সিকান্দার খান তাকে আরো বলে যে, আজ রাতের মধ্যে মসস্ত বাঙ্গালী ইপিআরকে খতম করতে হবে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় ইপিআরদের সমন্ধে তোমাকে পরে নির্দেশ দেয়া হবে।