পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৩০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



২৮০

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড

 ৩১শে মার্চ রাত্রি আড়াই ঘটিকার সময় ২৬এফ-এফ ব্যাটালিয়ন ও ২৩ ফিল্ড রেজিমেণ্ট গোলন্দাজ বাহিনী আমাদের ব্যারাকের উপর অতর্কিতভাবে আক্রমণ চালায় কিন্তু আমরা সতর্ক থাকায় সকাল ১০টা পর্যন্ত উভয় পক্ষে গুলি বিনিময় হয়, এবং তারা আমাদের ব্যারাকে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়। পাক বাহিনী মাইক দ্বারা প্রচার করতে থাকে, তোমরা আত্মসমর্পণ কর, তোমাদিগকে কিছু করা হবে না। সেই সময় আমাদের অবস্থানের চারিপাশ তারা ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। আমরা তখন বাধ্য হয়ে সেনানিবাস ছেড়ে ফুলবাড়ী নামক স্থানে ডিফেন্স নিই। সাথে সাথে আম্মাদের বাইরে অবস্থানরত অন্য সকল কোম্পানিকে এই ঘটনা অবগত করি।

 ১লা এপ্রিল সুবেদার রহমতুল্লাহ তার অবাঙ্গালীর মেজর সাফায়েৎ হোসেনকে হত্যা করে এবং সমস্ত জোয়ান নিয়ে ফুলবাড়ীতে চলে আসে।

 ৩রা এপ্রিল ঘোড়াঘাটে অবস্থানরত বি ও ডি কোম্পানী ফুলবাড়ী এসে পৌছে। সেই সময় আমাদের মোট শক্তি ছিল ৪৫০ জনের মত। ৪/৫ তারিখে ব্যাটালিয়নকে পুনর্গঠন করা হয় ও তিনটি কোম্পানীতে ভাগ করা হয়।

 ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক নিযুক্ত করা হয় মেজর নিজাম সাহেবকে। ১টি কোম্পানীর দায়িত্ব দেওয়া হয় ক্যাপ্টেন আশরাফকে। লেঃ মোখলেসকে দেওয়া হয় ১ টি কোম্পানীর দায়িত্ব। অপর কোম্পানীর দায়িতু ন্যস্ত হয় আমার উপর। ক্যাম্পে আশরাফ তার কোম্পানী নিয়ে দিনাজপুরে পথ দিয়ে সৈয়দপুর আসবে স্থির হয়। সৈয়দপুর থেকে তিন মাইল দূরে ৮ই এপ্রিল পাক বাহিনীর সাথে তার কোম্পানীর ভীষণ যুদ্ধ বাধে। এখানে পাকবাহিনীর তিনটি গাড়িসহ বহু পাকসেনা হতাহত হয়। লেঃ মোখলেস তার কোম্পানী নিয়ে নীলফামারী হয়ে সৈয়দপুর আসবে ঠিক হয়। আমার কোম্পানী এবং হেডকোয়ার্টার কোম্পানী নিয়ে আমি ফুলবাড়ী থেকে খোলাহাটিতে শিবির স্থাপন করি।

 ৭ই এপ্রিল সুবেদার রহমতুল্লাহ ১টি প্লাটুন নিয়ে পার্বতীপুর চলে যায়। আমি সেই দিনই আমার কোম্পানী নিয়ে বদরগঞ্জে ডিফেন্স করি।

 ৯ই এপ্রিল পাকবাহিনী বদরগঞ্জে আমাদের ডিফেন্সের উপর আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর পক্ষে ব্রিগেডিয়ার আব্দুল্লাহ খান মালেক যুদ্ধ পরিচালনা করে। সকাল ৯ ঘটিকা থেকে বিকাল ৪ ঘটিকা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। শেষে পাক বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে আমাদের জোয়নরা পিছন হটতে থাকে। এই সময় আমি এক ডিফেন্স থেকে অন্য ডিফেন্সে যাওয়ার সময় বদরগঞ্জ বাজারে পাক বাহিনীর ঘেরাওয়ে পড়ে যাই। তখন তারা আমাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আমার গাড়ির ড্রাইভার মারা যায়। আমি তখন গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে অন্য দিকে বদরগঞ্জ বাজারের ভিতর ঢুকে পড়ি। সেখান থেকে বহু কষ্টে বের হয়ে বদরগঞ্জ রেল ষ্টেশন হয়ে আড়াই মাইল গ্রামের ভিতর চলে যাই। সেখানে গিয়ে আমার জোয়ানদিগকে দেখতে পাই। তখন আমার শরীর রক্তাক্ত ছিল এবং পা গুলিবিদ্ধ ছিল। সেখান থেকে আমাকে ফুলবাড়ী পাঠিয়ে দিয়ে আমার কোম্পানী খোলাহাটিতে চলে যায়।

 ১০ই এপ্রিল সকালে পাক বাহিনী খোলাহাটি আক্রমণ করে। সেখানে পাক বাহিনীর সাথে আমার কোম্পানী টিকতে না পেরে ফুলবাড়ীতে চলে যায়। এদিকে ক্যাপ্টেন আশরাফ ও লেঃ মোখলেসের কোম্পানীও ফুলবাড়ীতে চলে আসে।

 ১১ই এপ্রিল পাকবাহিনী ফুলবাড়ী আক্রমণ করে। ফুলবাড়ীতে পাকবাহিনীর সাথে আমাদের ব্যাটালিয়নের ভীষণ যুদ্ধ হয়। কিন্তু পাকবাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে আমাদের পুরা ব্যাটালিয়ন চরখাইয়ে চলে যায়। চরখাইয়ে ডিফেন্স করে কোম্পানীগুলিকে নিন্মলিখিত গুরুত্বপূর্ণ পথে ডিফেন্সে বসানো হয় যাতে পাকবাহিনী চরখাই আক্রমণ করতে না পারেঃ (১) ক্যাপ্টেন আশরাফের কোম্পানিকে ফুলবাড়ী-চরখাই রোডে