পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৪৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৪৬৭

কয়েকজন আহত হয়। ১৯-৭-৭১- ভালুকা থানার হরিরবাড়ী এলাকায় সিস্টোর বাজারে আফছার সাহেবের নেতৃত্বে রাত্রি ৩-২০ মিনিটে পাকসেনাদের ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়। ফলে ২৩ জন পাকসেনা নিহত ও ৯ জন আহত হয়। রাত্রের আক্রমণে তারা ভীত হয়ে পরের দিন ত্যাগ করে পলায়ন করে।

 ২৫-৭-৭১- অধিনায়ক আফছার সাহেব নিজে একদল মুক্তিসেনা নিয়ে অতর্কিত মল্লিকবাড়ী ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়ে রাত্রি ৪-২০ মিনিটে পাকসেনাদের ১৬ জনকে নিহত ও কয়েকজনকে আহত করেন। ২৬-৭- ৭১ মল্লিকবাড়ী পাক বাহিনীর ঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধারা রাত্রি ২ ঘটিকায় গেরিলা পদ্ধতিতে গ্রেনেড চার্জ করে পাক সেনাদের ৪ জনকে নিহত ও ৩ জনকে গুরুতরভাবে আহত করেন। একই দিন অন্য একদল মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা জেলার শ্রীপুর থানার মাওয়া গ্রামের কুখ্যাত ডাকাত ও দালাল হাবিবুর রহমান (এম,ইউ,সি) এবং হামিদ ফকিরকে হত্যা করেন। ২৯-৭-৭১- আফছার ব্যাটালিয়নের কোম্পানী কমাণ্ডার চাঁন মিয়ার দলের হাতে পাকবাহিনীর ৩ জন গুপ্তচর পারুলদীয়া বাজারে ধরা পড়ে ও তাদেরকে হত্যা হরা হয়। অধিনায়ক আফছার সাহেব ১লা আগষ্ট তারিখে অন্য একদল মুক্তিসেনা নিয়ে ভালুকা থানার ভয়াবহ খেয়াঘাটে পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে ৯ জন পাকসেনাকে হত্যা করেন।

 ৩-৮-৭১-প্লাটুন কমাণ্ডার হাফিজুর রহমান, মোঃ আইয়ুব আলী এবং সেকশন কমাণ্ডার আবদুল করিমের নেতৃত্বে একদল মুক্তিসেনা ত্রিশাল থানার কানিহারী গ্রামে একদল রাজাকারের উপর আক্রমণ চালিয়ে একটি রিভলবার ও কয়েক রাউণ্ড গুলি উদ্ধার করেন। ঐদিন রাত্রে প্লাটন কমাণ্ডার হাফিজুর রহমান একজন মুক্তিসেনা সাথে নিয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে কালীরবাজার স্কুলের ছাত্র ফোরকানউদ্দিন আহমেদ, কাঁঠাল গ্রামের মোঃ আবু তাহের. মহসীন, শামছুল হক, জালাল, টুকু ও সুন্দর আলীর সহায়তায় কালীরবাজার হাই স্কুল ল্যাবরেটরী থেকে কিছু হাত বোমা, এসিড, বারুদ ইত্যাদি উদ্ধার করেন। একই দিন প্লাটুন কমাণ্ডার আইয়ুব আলী সাহেব অন্য কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সাথে নিয়ে কাঁঠাল গ্রামে হানা দিয়ে ২ জন দুস্কৃতকারীকে গ্রেপ্তার করেন।

 ৪-৮-৭১- পাকবাহিনী ভালুকা থানার ডাকাতিয়া বাজার এবং গ্রামের বাড়িঘর লুটপাট করে ফিরবার পথে অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে ২ দল মুক্তিসেনা পাকসেনাদের পিছন ও বাম দিক থেকে আক্রমণ চালায়। ফলে পাক বাহিনীর ৩০ জন সেনা নিহত ও আহত হয়। লুট করা সমস্ত মালপত্র মুক্তিসেনাদের হস্তাগত হয়। একটি ব্যারোমিটারও পাওয়া যায়। মেজর আফছার সাহেবের নির্দেশে গফরগাঁও থানার কুখ্যাত ডাকাত ও রাজাকার কমাণ্ডার গাওয়াকে মুক্তিবাহিনীর কোম্পানী কমাণ্ডার চাঁন মিয়ার নেতৃত্বে তার নিজ বাড়িতে গ্রেপ্তার ও পরে হত্যা করা হয়।

 ৯-৮-৭১- অধিনায়ক আফছার সাহেব নিজেই কোম্পানী কমাণ্ডার মোমতাজউদ্দিন ও অল্প কায়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বিকাল ৫ ঘটিকায় মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি আক্রমণ করেন এবং ১৪ জন পাকসেনা, ৪ জন রাজাকারকে নিহত ও কয়েকজনকে আহত করেন। ১০-৮-৭১- সকাল ঘটিকায় পাকাহিনীর একটি দল মল্লিকবাড়ী বাজার থেকে ভালুকা যাওয়ার জন্যে খেয়াঘাটে এসে নৌকায় চড়লে অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা পাকসেনাদলকে আক্রমণ করেন। ফলে ১৪ জন পাকসেনা এবং ২ জন নৌকার মাঝি নিহত হয়। মল্লিবাড়ী বাজারে ২৪ জন খানসেনা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।

 ১২-৮-৭১-মল্লিকবাড়ী বাজারের ঘাট আক্রমণ চালিয়ে ১১ জন পাকসেনা ও ২ জন রাজাকার হত্যা করা হয়। ১৩-৮-৭১- অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে মল্লিকবাড়ী বাজারে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ২৬ জন রাজাকার ও ২জন পাক সেনাকে হত্যা হরা হয়। ১-৮-৭১- মেজর আফছার সাহেবের নির্দেশে প্লাটুন কমাণ্ডার আইয়ুব আলী ও সেকশন কমাণ্ডার আমজাত হোসেনের দল কর্তৃক ভরাডুবা গ্রামের হজরত আলী নামে একজন রাজাকার ধৃত ও নিহত হয়। অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়। ফলে ৭ জন রাজাকার নিহত ও কয়েকজন আহত হয় এবং ৩টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়। এই দিন সন্ধ্যায় অধিনায়ক আফছার সাহেব হাকিম সাহেবকে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করে ওপার বাংলায় রওয়ানা হন।