পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (নবম খণ্ড).pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : নবম খণ্ড
৩৪

 লেফটেন্যাণ্ট কর্নেল এম,আর, চৌধুরীকে ব্যারিকেড পরিস্কার করার দায়িত্ব দেয়া হয়। তার সাথে ক্যাপ্টেন আজিজ ব্যারিকেড পরিস্কারের কাজ তদারক করছিলো।

 সকাল ১১টা থেকে চারটে পর্যন্ত সকল সৈন্যসামন্ত নিয়ে মাত্র ২০০ গজ রাস্তা পরিস্কার করা হয়। বহু কষ্টে বায়েজিদ বোস্তামীর রাস্তার মোড় পর্যন্ত যান। সৈন্যদেরকে সেখানেই দুপুরের খাবার দেয়া হয়।

 বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বেসামরিক ট্রাক যেগুলো আমাদের সৈন্য নিয়ে ব্যারিকেড পরিস্কারের কাজে যাচ্ছিল সমস্ত ড্রাইভার ট্রাক ফেলে পলায়ন করেন।

 বায়েজীদ বোস্তামের মোড়ে বিপুল জনসমাবেশ হয়েছিলো। তারা ড্রাম দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেছিল। এবং সেখানে দাড়িয়ে বক্তৃতা করছিল। শ্লোগানে শ্লোগানে সে এলাকাকে তারা মুখরিত করে তুলেছিল।

 জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য বাধ্য হয়ে কর্নেল এম, আর, চৌধুরী নির্দেশে এক রাউণ্ড গুলি ছোড়া হয়। এতে তিনজন লোক আহত হয় একজনের অবস্থা খুব শোচনীয় ছিল। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর সামনের দিকে অগ্রসর না হয়ে এম, আর, চৌধুরী সৈন্যসামন্ত নিয়ে সেনানিবাসে ফিরে আসেন।

 এরপর কর্নেল এম, আর, চৌধুরীর সাথে আমার দেখা হয়। তিনি অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলেন যে, এই গুলিটি শুধু পাকিস্তানীদের দেখাবার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলাম।

 সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমাদের এক কোম্পানীকে জেটি এলাকায় যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। মেজর কামাল মেহের (পাঞ্জাবী) ক্যাপ্টেন আজিজ কোম্পানীকে নিয়ে জেটিতে রওনা হয়ে যান।

 ২১শে মার্চ ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ই-বি-আর সির বাঙ্গালী অফিসারদেরকে ডেকে চট্টগ্রাম শহরকে পুরো নিয়ন্ত্রনে আনা এবং বাঙ্গালীদের যেন অযথা হয়রানি, দুঃখ-দুর্দশার সম্মুখীন হতে না হয়। সেদিকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দিলেন। তদানুসারে আমরা সমস্ত অফিসার সৈন্যদের নিয়ে শহরে যাই। আমি নিজে অয়ারলেস কলোনীতে যাই। সেখানে ক্যাপ্টেন রফিকের (এডজুট্যাণ্টট, ই-পি-আর) সাথে দেখা হয়। তার সাথে চট্টগ্রামের ডি-সি এবং এস-পিও ছিলেন। রাত আটটার দিকে অয়ারলেস কলোনীতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। বহু কষ্টে ই-পি-আর ও বেঙ্গল রেজিমেণ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। তার জন্য ডি-সি, এস পি খুব আনন্দিত হন এবং বলেন, যে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা থাকলে পরিস্থিতি আরো মারাত্মক আকার ধারন করত।

 পথে আমি নৌবাহিনীর পশ্চিম পাকিস্তানী জোয়ানদেরকে হাতে অস্ত্রশস্ত্রসহ দেখতে পাই। অয়ারলেস কলোনীতেও তাদেরকে দেখা গিয়েছিল। তা আমি ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে বলি। তিনি বললেন যে এরপর নৌবাহিনীর কোন লোককে শহরে দেখা যাবে না।

 কর্নেল এম, আর, চৌধুরী সেদিন বড় অসুস্থ ছিলেন। তার দুদিন আগে হাতে ব্যাথা পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি বড় খারাপ আমাদেরকে সাবধানে থাকতে হবে। এই সময় ঢাকা থেকে ক্যপ্টেন আমিন আহমদ চৌধুরী টেলিফোনে চারদিকে খেয়াল রাখতে বলেন। টেলিফোনটি এম,আর, চৌধুরীকে দিতে বলেন। এম, আর, চৌধুরী টেলিফোনে কথোপকথনের পর আমাকে বলেন পরিস্থিতি বড় খারাপ, আমাদেরকে অত্যন্ত সতর্কের সাথে থাকতে হবে।

 ২৫শে মার্চ রাতে মেসে যাবার পর কর্তব্যরত অবস্থায় ক্যাপ্টেন মোহসিন আমাকে বললেন, তার মেয়ে বড় অসুস্থ। আমি যদি তার জায়গায় ডিউটি করি তাহলে রাতে তিনি বাসায় থাকতে পারেন। আমি তাতে সম্মত হলাম।