পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চদশ খণ্ড
১১৩

আমাকে ছেড়ে দেন। কমলাছড়ির বৌদ্ধ মন্দিরে অবস্থানকালে আমি ধোপাছড়িতে মোখলেসুর রহমান, সুলতান আহম্মদ কুসুমপুরী পটিয়ার এম সি এ-এর নেতৃত্বে বেশ কিছুসংখ্যক এ পি আর ও স্থানীয় যুবক ও ছাত্রদের দুটি গ্রুপ নিয়ে অবস্থানের সংবাদ শুনি। তাজউদ্দিন সরকারের নির্দেশ মোতাবেক কুসুমপুরীতে ভারতে যেতে অনুরোধ করি। কিন্তু ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে তিনি যেতে অস্বীকার করেন। তখন বাধ্য হয়ে আমি কমলাছড়িতে ফিরে আসি। সার্জেণ্ট আলমকে চিকিৎসার জন্যে কমলাছড়িতে রেখে আমি শাহজাহান ইসলামাবাদী, মহসীন আবুল হোসেন প্রমুখদের নিয়ে পটিয়ার দিকে আসি। পটিয়ার রেলষ্টেশনের কাছে রাজাকার ঘাঁটিতে আমাদের সংগে রাজাকারদের সংঘর্ষ বাধলে ৩ জন রাজাকার নিহত হয়। সেখান থেকে তিনটা রাইফেল, একটা এল এম জি, তিনটা মাইন উদ্ধার করি। তাছাড়া প্রায় ৩ হাজার গুলিও আমরা পাই। অপারেশন শো করে একটা দলসহ আমি আমার নিজ গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করি কিন্তু আমরা গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার কদিন পর পাক সেনারা গৈরিলা গ্রামখানা জ্বালিয়ে দেয়। তাছাড়া ধলঘাটে রাজাকার মুজাহিদ ও পাক ফৌজ অকথ্য অত্যাচার চালায়। ধলঘাটবাসীদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে আমরা তাই ধলঘাট রেলওয়ে ষ্টেশনের পাঞ্জাবী ঘাঁটি আক্রমণ করি। ষ্টেশনে আগত শেষ ট্রেনটি আমরা যাত্রীদের নামিয়ে পুড়িয়ে দেই। তারপর ঘাঁটির ওপর অবিরাম গুলি বর্ষণ করি। পাক ফৌজের ঘাঁটি থেকে আমরা জি-৩ গান, ২৭টা ষ্টেনগান, ৩টা এল, এম,জি, ১১টি রাইফেল, ৩টা রিভলবার ও ৭ হাজার গুলি উদ্ধার করি। এখান থেকে নিজ গ্রামে যাই। গ্রামের কয়েকজন দালাল পটিয়া থেকে পাঞ্জাবী ডেকে গ্রামখানা ঘেরাও করে। আমরা পালিয়ে যাই এবং আরাকান রোডের পাশে গোপনে অবস্থান নেই। পাকবাহিনী সে পথে যাওয়ার সময় আমরা গুলি করি। এখানে ভীষণ যুদ্ধ হয় এবং বাম হাতে গুলি লাগলে আমি আহত হই। সার্জেণ্ট আলম এই আক্রমণের নেতৃত্ব দেন। এই আক্রমণের পর আমরা পটিয়ার জিরি গ্রামে চলে যাই। জিরি গ্রামে এসে দেখতে পেলাম পশ্চিম আনোয়ারা থানার গ্রামাঞ্চলে রাজাকার, আল বদর ও পাক ফৌজের নিদারুণ নির্যাতনে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তখন সার্জেণ্ট আলম সাহেবের নেতৃত্বে পশ্চিম পটিয়ায় অপারেশন চালানোর পরিকল্পনা নেই। এ সময় ভারত থেকে ৪০ জনের একটা ফ্রগম্যান গেরিলা বাহিনী মেজর রফিক ও এম এ মান্নান সাহেবের দু’খানা পত্র নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করে। তাদের সংগে পরামর্শ করে আমরা চর লইক্ষ্যা চাকতাই হতে পতেঙ্গার বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত যেসব ষ্টিমার ও জাহাজ ছিল সেগুলো মাইন দিয়ে ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেই। পরিকল্পনা মোতাবেক ফ্রগম্যানদের নিয়ে মাইন লাগিয়ে স্টীমার ফাটিয়ে দিলে পাক বাহিনী বেপরোয়াভাবে গুলি চালায়। আমরাও এর জবাব দেই। এভাবে ১১ দিনে আমরা ৫টা জাহাজ ধ্বংস করতে সক্ষম হই।

হাফেজ মৌলভী আসাবুল হক

গ্রামঃ নাইখাইল, ডাকঘরঃ
গৈড়লা
পটিয়া, চট্টগ্রাম।

মে, ১৯৭৩


এ এম এ মুহিত

 নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ের সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বাঙ্গালীরা সংগঠিত হতে থাকে। নিউইয়র্কের ইষ্ট পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা ঘূর্ণিঝড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলা নিয়ে কথা তুলে আর বাংগালীদের জন্য সাহায্যের আবেদন করে। কাজী শামসুদ্দিন আর ডঃ আলমগীর মার্চ মাসে স্বাধীনতার দাবী উঠান, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের নালিশ করেন আর জাতিসংঘের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের আয়োজন করেন। ২৫শে মার্চ গণহত্যা শুরু হলে এই লীগ নাম পরিবর্তন করে এবং জুন মাস পর্যন্ত বাঙ্গালী সমাজের প্রতিনিধির ভূমিকা পালন করে। ২৫শে পরে মার্চের শহরে শহরে লীগের শাখা গড়ে ওঠে তবে তারা সকলেই নিজস্ব কার্যক্রম অনুযায়ী এগুতে থাকে। সমন্বিত সংগঠন গড়ে উঠতে কয়েক মাস চলে যায়। তবে নিউইয়র্কের লীগ অব আমেরিকাই বাংলাদেশ আন্দোলনে অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করে।