পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড).pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এখানে বিভিন্ন খণ্ডে মুদ্রিত তারিখ সংক্রান্ত জটিলতার কথা উল্লেখ নিতান্ত অপরিহার্য বলে মনে হয়। আগেই বলা হয়েছে যে, সুদীর্ঘ ৮ বছরকাল ধরে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ অব্যাহত ছিল। ফলে ১ নং থেকে ৬ নং এবং ১২ নং ও ১৩ নং খণ্ডে মুদ্রণের সময়কাল নভেম্বর ১৯৮২ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে উল্লিখিত সময়ে এসবের পাণ্ডুলিপি অনুমোদনের পর মুদ্রণের কাজ অনেকাংশে সমাপ্ত হলেও আবারও উল্লেখ করতে হচ্ছে যে, ১৫ নং খণ্ডসহ বাকি অংশ মুদ্রণ এবং শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ বাঁধাই এর কাজ অসম্পূর্ণ ছিলো। এই সমস্ত কাজই অত্র প্রকল্পের সমাপ্তিকরণ পর্যায়ে করা হয়েছে। এজন্যই সমস্ত কর্মকাণ্ড শেষ হওয়ার পর সর্বসাধারণের মধ্যে খণ্ডগুলো বিক্রয় শুরু করার তারিখ ডিসেম্বর ১৯৮৫-কেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের সময়কাল হিসেবে গ্রহণ করা সমীচীন হবে।

 তবুও এক কথায় বলতে গেলে স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস প্রকল্পের গবেষক ও কর্মীরা সুদীর্ঘ আট বছরকাল (১৯৭৭-৭৮ থেকে ১৯৮৪-৮৫) একনিষ্ঠভাবে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং নানা প্রতিষ্ঠান ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যেভাবে সহযোগিতা করেছেন তারই ফসল হচ্ছে আজকের এই “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র”। তথ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্ববধানে এজন্য সরকারের সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ৭২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

 সমাপ্তিকালীন পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধের দিনগুলিতে শত্রুকবলিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার পূর্ণাঙ্গ বিবরণও সন্তোষজনকভাবে উপস্থাপিত করা যায়নি। এরই পাশাপাশি সে সময় দুর্বিষহ অবস্থায় পাকিস্তানে বসাবাসকারী বাঙালীদের সম্পর্কেও উল্লেখযোগ্য তথ্য এই ১৫ খণ্ডে সন্নিবেশ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। বলা দরকার, দলিল ও তথ্যের অভাবই এই অপূর্ণতার কারণ।

 প্রসঙ্গত আরও একটা বিষয়ের উল্লেখ প্রয়োজন বলে মনে হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানের তৎকালীন হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় যেসব উল্লেখযোগ্য যুদ্ধে মোকাবেলা করেছেন, সেগুলির দিন, তারিখ এবং বিস্তারিত বিবরণ ও ধারাবাহিক তালিকা আরও ব্যাপকভিত্তিক হওয়া দরকার বলে বিবেচিত হয়েছে।

 এই প্রেক্ষিতে স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস প্রকল্প, দ্বিতীয় পর্যায়ে, নতুন কয়েকটি খণ্ডে এসব অন্তর্ভূক্তি লক্ষ্যে কাজে হাত দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র সংবলিত বিরাটাকার ফটো এ্যালবাম প্রকাশের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। এই কারণে প্রথম পর্যায়ে পরিকল্পিত ষোড়শ খণ্ডটির মুদ্রণের কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে। দুই পর্যায়ে মুদ্রিত মকল খণ্ডের নির্ঘণ্ট এবং কালপঞ্জি ও গ্রন্থপঞ্জিসহ এই খণ্ডটি প্রকাশিত হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের সর্বশেষ খণ্ড হিসেবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য বাংলাদেশ সরকার ৪২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। আশা করা যায় ১৯৮৬-৮৭ সাল নাগাদ দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ সম্পূর্ণ হবে।

 পরিশেষে বলতে চাই যে, আমাদের যেটুকু ত্রুটি রয়েছে তা আমরা অকপটচিত্তে স্বীকার করলেও আমাদের ক্ষুদ্র একদল গবেষক ও কর্মী সুদীর্ঘ আট বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল সফরের পর যে তিন লক্ষাধিক দলিলপত্র ও সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করেছেন, সেটাও তো কম কথা নয়। এসবের কথা চিন্তা করে ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে নিরীক্ষা করার অনুরোধ করতে সাহসী হচ্ছি। ভবিষ্যতে গবেষক ও ইতিহাসবিদরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস প্রণয়নকালে আলোচ্য ১৫ খণ্ডে সন্নিবেশিত দলিলপত্র ও সাক্ষাৎকারগুলোকে তথ্য নির্দেশিকা হিসেবে ব্যবহারের সক্ষম হলে পরিশ্রম সার্থক বলে বিবেচিত হবে।

বিজয় দিবস, ১৯৮৫ এম আর আখতার
পরিচালক
স্বাধীনতা যুদ্ধ ইতিহাস প্রকল্প (২য় পর্যায়)