পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

85 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড আক্রমণে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অধিকৃত যশোর বিমানবন্দরে রানওয়ে ও কন্ট্রোল টাওয়ারটি সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতে করতে পাকিস্তানী বাহিনী এখন দ্রুত পিছু হটে যেতে শুরু করেছে। বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা ও অস্ট্রেলীয় বেতার থেকে প্রচারিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়ঃ বাংলাদেশের সর্বত্রই বীর মুক্তিসেনারা সর্বাত্মক অভিযান চালিয়ে শত্রসেনাদের একের পর এক ঘাঁটি থেকে বিতাড়িত করে দুর্বার বেগে এগিয়ে চলেছে। পাকিস্তানী হানাদারদের শিবিরে শিবিরে এখন ত্ৰাহি ত্ৰাহি হাঁক উঠেছে। ঢাকা থেকে AFP সংবাদদাতা এক তারবার্তায় জানাচ্ছেনঃ শত্রবাহিনী অধিকৃত ঢাকার সঙ্গে গত সোমবার থেকে বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঢাকা-যশোর, ঢাকাইশ্বরদী, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কুমিল্লা এক কথায় বাংলাদেশের সকল আভ্যন্তরীণ রুটে পি-আই এ’র সকল সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। গত মার্চের পর ঢাকার সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার একমাত্র যোগাযোগ ছিলো পাকিস্তানী বাহিনী নিয়ন্ত্রিত পি-আই-এ সার্ভিস। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর দুর্বার আক্রমণের মুখে তাও বিনষ্ট হয়ে গেল। প্রকৃতপক্ষে মুক্তিসেনারা বর্তমানে চারদিক থেকে শক্রবাহিনীকে ঘিরে ফেলেছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তার শত্রবাহিনীকে সমূলে নিধন করে চলেছে। সর্বত্রই চলেছে মুক্তিবাহিনীর অপ্রতিরোধ্য জয়যাত্রা। ঢাকার মাত্র আঠারো মাইল দূরে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা মুন্সীগঞ্জ শহর আক্রমণ করে। মুন্সীগঞ্জ থানার পুলিশের ওপর আক্রমণ করলে থানার একজন পুলিশ অফিসার ও বহু পুলিশ নিহত হয়। মুক্তিসেনারা বিজয় দৰ্পে সারা শহরে কুচকাওয়াজ করেন। মুক্তিসেনারা মুন্সিগঞ্জ মহকুমার লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ী থানা দুটিও পুড়িয়ে দিয়ে ঢাকার এক বিশাল এলাকাকে শত্রমুক্ত করে। এদিকে মুক্তিসেনারা বর্তমানে উত্তরে সামরিক গুরুত্বপূর্ণ সিলেট শহরের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ করে বলে বিবিসির বিশেষ সংবাদদাতা মিঃ ডোনাল্ড রোবসন উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, সিলেটের বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে পাকিস্তানী সৈন্যরা হটে যাচ্ছে। তিনি তার বার্তায় জানিয়েছেন মুক্তিসেনারা কুমিল্লার ওপরেও এক ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে। গত রাতে অষ্ট্রেলীয় বেতারের এক সংবাদদাতা বুলেটিনে বলা হয়ঃ বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনী যে দুর্বার আক্রমণ চালিয়েছে তার সঙ্গে একমাত্র বাংলাদেশের গত ঘূর্ণিঝড়েরই তুলনা করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে আমরা উল্লেখ করবোঃ গত সপ্তাহে NEWSWEEK-এর সিনিয়র এডিটর মিঃ বোচগ্রেভ তাঁর An unwinnable Guerilla war শীর্ষক রিপোটে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্তব্য করেছিলেনঃ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এখন এমন এক দুর্জয় গেরিলা যুদ্ধের ফাঁদে পড়েছে যেখান থেকে তাদের মুক্তির কোন সম্ভাবনা নেই। ২৬ নভেম্বর, ১৯৭১ ... গত ২২ শে নভেম্বর নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক দীর্ঘ রিপোর্টে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক রূপরেখা প্রকাশিত হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস-এর করাচীস্থ সংবাদদাতা গত সপ্তাহে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা সফর করে God is not with the big battalions শিরোনামের এক দীর্ঘ রিপোর্টে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেনঃ গেরিলা যুদ্ধের কৌশল সম্পর্কিত মাও সেতুঙ এর একটি বিখ্যাত উক্তি ভিয়েৎনাম তথা সমগ্র ইন্দোচীন, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার মুক্তিসেনাদের দারুণ প্রেরণা দিয়ে চলেছে। উক্তিটি হলোঃ মাছ