পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| 6 | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড মস্কোর প্রভাবশালী রাজনৈতিক সাপ্তাহিক নিউ টাইমস’-এ বিশিষ্ট সোভিয়েট লেখক মি. উলানুকী এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, পাকিস্তানের নিষ্ঠুর নিষ্পেষণই স্বাধীন বাংলাদেশের দাবীর জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশ আন্দোলনের ধারাবাহিক ইতিহাস পর্যালোচনা করে মি. উলানুকী বলেছেন, পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের প্রেক্ষিতেই বাঙালীরা অস্ত্ৰধারণ করতে বাধ্য হয়েছে। বৃটেনের উদারনৈতিক দৈনিক গার্ডিয়ান বলেছেন, পাকিস্তান এখন নিঃসঙ্গ ও বন্ধুবিহীন। যুদ্ধ বাধলে তাকে একাই তার ফল ভোগ করতে হবে। ডেলি টেলিগ্রাফ পত্রিকাও পাকিস্তানের এই নিঃসঙ্গ অবস্থার কথা বর্ণনা করে বলেছে, যতক্ষণ না ইয়াহিয়া বাংলাদেশ সমস্যার একটি যথার্থ রাজনৈতিক সমাধান না চাচ্ছেন, ততক্ষণ তার বন্ধুহীনতা কেবল বাড়তেই থাকবে। এদিকে বৃটিশ মন্ত্ৰী মিঃ রিচার্ড উড বাংলাদেশ সমস্যার যথার্থ রাজনৈতিক সমাধানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, বাংলাদেশ সমস্যার যুক্তগ্রাহ্য সমধান ছাড়া শরণার্থীরা দেশে ফিরে যেতে পারে না। আর এই যুক্তগ্রাহ্য সমাধানের অর্থই হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা। মার্কিন সিনেটর উইলিয়ম স্যাকসবি বলেছেন, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত জননেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ছাড়া বাংলাদেশ সমস্যার কোন সমধান হতে পারে না। সুতরাং বাংলাদেম সমস্যার সমাধানে অগ্রসর হতে হলে প্রথমেই শেখ মুজিবের মুক্তি প্রয়োজন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাকে তিনি ইতিহাসের অন্যতম শোচনীয় ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানে মার্কিন সরকারকে সচেষ্ট হওয়ার জন্য তিনি আহবান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিস্তৃত অঞ্চলে- আর সেই সঙ্গে বিশ্বমানুষের সমর্থনপুষ্ট মানবতার পতাকাও উড়ছে বিশ্বের সর্বত্র। কেননা ন্যয়, সত্য ও স্বাধীনতার সংগ্রাম কখনো ব্যর্থ হয় না। (মহাদেব সাহ রচিত) পিপ্তির প্রলাপ * ১২ নভেম্বর, ১৯৭১ জঙ্গী শাসক ইয়াহিয়া খাঁ আর তার জল্লাদ বাহিনীর তোতাপাখীগুলা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত একই শেখানো বুলি আউড়ে চলেছে রেডিও গায়েবি আওয়াজে গ্রামোফোন কোম্পানীর কুকুরের ছবিওয়ালা সেই রেকর্ডের মতো। পিন দিয়ে চড়িয়ে দিলেই হোল কলেরগান বাজতে শুরু করবে। বাঁধা গতে গান হবে। সকালসন্ধ্যা-রাত-যখনই শুনুন না কেন, পড়ানো লবজই বেতারের একমাত্র পুঁজি। সকালবেলা উঠে শুনতে পাবেন, অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুপুরে-দেশপ্রেমিক জনসাধারণ দৃস্কৃতকারীদের প্রশ্ৰয় তো দিচ্ছে-ই না বরং সেনাবাহিনীর কাছে ধরিয়ে দিচ্ছে। এরপর রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে পিন পাল্টে দেয়া হবে। আর তোতার কণ্ঠে শোনা যাবে- একদল অনুপ্রবেশকারী আমাদের সীমান্তের কয়েকশ’ গজ ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। আমাদের সেনাবাহিনী শুরুতেই তাদের বাধা না দিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। পরে সময়মতো আক্রমণ চালায়। আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে অনুপ্রবেশকারীরা অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। এর পরেই একটি অস্ত্রপাতির লম্বা ফর্দ পেশ

  • পিণ্ডির প্রলাপ’ শীর্ষক ধারাবাহিক কথিকাগুলো তোয়াব খান রচিত।