পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
২৬৮

উর্দু শেখেন তাহলে উভয় অংশের জনগণ একে অপরের ভাবধারা, সুখ-দুঃখ, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংগে পরিচিত হতে পারবেন এবং উভয় অংশের জনসাধারণের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপিত হবে।

 তাই উপসংহারে এ কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আমরা ঘোষণা করতে চাই যে, বাংলাভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের ঐক্যে ফাটল ধরায়নি বরং এক ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পথে এ আন্দোলন আমাদের এগিয়ে দিয়েছে।

ইসলামী ভ্রতৃসংঘ ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন

 বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে উপরে যেসব যুক্তি দেওয়া গেল, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘের কর্মীবৃন্দ মনেপ্রাণে তা বিশ্বাস করে বলেই সাংগঠনিক সমস্ত অসুবিধা অপেক্ষা করেও কর্মীরা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলো।

 এই আন্দোলনে কারাবরণ ও নির্যাতনের সম্মুখীন হতে তারা মোটেই দ্বিধাবোধ করেনি।

 আমরা বিশ্বাস করি, প্রাদেশিকতার সংকীর্ণ মনোবৃত্তি বা উর্দু ভাষাভাষীদের প্রতি কোনরকম বিদ্বেষের মনোভাব ভাষা আন্দোলনের জন্মদান করেনি। গভীর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই পূর্ব-পাকিস্তানের সাড়ে চার কোটি জনসাধারণ বাংলাকে আজ পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য সংগ্রাম আরম্ভ করেছেন।

 মহান উদ্দেশ্যে অনুপ্রাণিত হয়ে যে আন্দোলন আরম্ভ হয়েছে তাকে পার্টিগত বা ব্যক্তিগত স্বার্থের কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ রুখে দাঁড়াবে।

 ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ বিশ্বাস করে, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে যারা রাষ্ট্রভাসানো আন্দোলনে পরিণত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সদাজাগ্রত প্রহরীরূপে কাজ করে যাবেন পূর্ব-বাঙ্গলার প্রতিটি সন্তান।

 তাই বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার কাজে সহায়তা করার জন্য পাকিস্তানের প্রতিটি কল্যাণকামী সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও শ্রমজীবীকে আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাই।