পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬১৫
শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমানের ভাষণ পূর্ব পাকিস্তান সরকার ৪ঠা জানুয়ারী, ১৯৫৮

পূর্ব পাকিস্তানের আর্থিক দুর্গতি

 পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তান এক মারাত্মক রকমের আর্থিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগে আসছে, তা থেকে সে আজও মুক্ত হতে পারেনি। বর্তমানে তার অবস্থা আরও চরমে গিয়ে পৌঁছেছে। বস্তুতঃ পূর্ব পাকিস্তানের আর্থিক জীবনের কতকগুলি সমস্যাকে মূলধন করে কোন কোন পত্রিকা ও রাজনৈতিক দল এমন সব প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন যাতে করে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকেবহাল নন তাঁরাও স্বভাবতঃ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। তাই, পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান সমস্যাগুলি প্রকৃত প্রস্তাবে কি, জনসাধারণ সহজেই যাতে তা সম্যক উপলব্ধি করতে পারেন, তার জন্য আজ পূর্ব পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক ইতিহাসের এক সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিতে চাই।

 ম্মিলিখিত খাতগুলি মোট ১৪ কোটি ১৬ লাখ টাকার দেনার বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ প্রদেশ হিসাবে পূর্ব পাকিস্তানের জন্ম হয়:

(১) রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে দেনা,
(২) প্রভিডেণ্ট ফাণ্ড,
(৩) বে-সামরিক আমানতাদি,
(৪) অনাদায়ী ট্রেজারী বিলসমূহ,
(৫) খাদ্য ক্রয় খাতে ঘাটতি জমা ও
(৬) সরকারী চাকুরীয়াদের পাওনাসহ চুক্তিগত দেনা।

 অবশ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই পাওনা ও অবিভক্ত বাংলার অনাদায়ী ট্রেজারী বিল বাবদ আমাদের যে দেনা ছিল, তা পরিশোধের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার গোড়াতেই ৪ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা ঋণ মঞ্জুর করেন। কিন্তু অন্যান্য খাতের দেনা থেকেই যায়। ফলে, কার্যভার গ্রহণের পর থেকে প্রাদেশিক সরকারকেই বছরের পর বছর ধরে এসব খাতের দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা করে যেতে হয়। সেই সংগে প্রাদেশিক সরকারকে প্রদেশের রাজধানীতে সদর দফতরসমূহের স্থান সঙ্কুলানের জন্য বহু সংখ্যক দালান-কোঠা নির্মাণ করতে হয়।

 ৪ কোটি ১৯ লক্ষ লোকের বাসভুমি পূর্ব পাকিস্তানের রাজস্ব খাতে ১৯৪৮-৮৯ সালের বার্ষিক আয় ছিল ১৬ কোটি ৯১ লক্ষ টাকা। অপর পক্ষে ৩ কোটি ৩৭ লক্ষ অধিবাসী অধ্যুষিত পশ্চিম পাকিস্তানের রাজস্ব বাবদ আয় ছিল সে সময় ২৭ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা।

কেন্দ্রের সাহায্য

 সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, শুরু থেকেই কেন্দ্রের কাছ থেকে পশ্চিম অংশের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানেরই অনেক বেশী আর্থিক সাহায্য পাওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ এই সত্যটি কার্যক্ষেত্রে সর্বদাই উপেক্ষিত হয়েছে এবং গত ক'বছরে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন সময়ে উভয় অংশের জন্য যে সাহায্য মঞ্জুর করেছেন, দুই অংশের