পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খণ্ড
৬১৮

কম-বেশ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তদুপরি ১৯৫৪, ১৯৫৫ ও ১৯৫৬ সালের সর্বগ্রাসী বন্যা প্রদেশের অবস্থা আরও সঙ্গীন করে তোলে। এরপর ১৯৫৭ সালে অনাবৃষ্টির ফলে প্রদেশের কতকগুলি জেলায় আউস আমন ও রবিশস্য সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবং অপর কতকগুলি জেলায় আংশিক শস্যহানি, উপকূল এলাকায় লোনাপনির প্লাবন ও কীটের উপদ্রবে অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।

 এর উপর আবার মড়কে বিভিন্ন জেলায় বহু গবাদিপশুর মৃত্যু হয়। আর সেই সঙ্গে কালেরা ও বসন্তের ভয়াবহ মহামারী সমগ্র প্রদেশ ছেয়ে ফেলে। এর দরুন-গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণের কর্মসক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

 এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ধান, চাল ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে এখন জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে। ফলে, এখন সর্বত্র শোচনীয় দুরবস্থা বিরাজ করছে। দুর্গত এলাকায় বিপন্ন জনসাধারণ জান বাঁচানরো তাগিদে গরু, বাছুর, বীজ এমনকি কৃষি যন্ত্রপাতি পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। এখন তাদের কাছে এমন কোন সম্পদই নেই, যার উপর তারা নির্ভর করে থাকতে পারে। এ অবস্থায় এখন সরকারকে কেবল এদের চাষাবাদের ব্যবস্থা করে দিলেই চলবে না। বরং এই সঙ্কটকালে তাদের বেঁচে থাকবার মত সংস্থানও করে দিতে হবে।

 এসব প্রাকৃতিক দুর্বিপাকে প্রদেশের শতকরা সাড়ে ১২ জন অর্থাৎ মোট প্রায় ৫০ লক্ষ লোক মারাত্মক রকমের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের সকলেরই সাহায্যের দরকার এবং তাদের তা পাওয়া উচিত। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৩০ লক্ষ লোকের (৬ লক্ষ পরিবার) কৃষি ঋণ প্রয়োজন। এই ৬ লক্ষ পরিবারের মধ্যে ৫ লক্ষ পরিবারকে পরিবার প্রতি ৫০ টাকা হারে কৃষি ঋণ ও পরিবার প্রতি ১৫০ টাকা হারে দুই লক্ষ পরিবারকে গবাদিপশু ক্রয় ঋণ মঞ্জুর করতে হবে। এ বাবদ প্রয়োঞ্জন হবে সাড়ে ৫ কোটি টাকা।

টেষ্ট রিলিফ-

 ভূমিহীন যে সব শ্রমিক সহজে কাজ পাচ্ছে না, টেষ্ট রিলিফের মারফত তাদের কাজ দিতে হবে। দুর্গত জনসাধারণের মধ্যে ১৫ লক্ষ লোক অর্থাৎ ৩ লক্ষ পরিবারের জন্য এই ধরনের রিলিফের প্রয়োজন। টেষ্ট রিলিফের কাজ জুন মাসের শেষ কিংবা জুলাই মাসের মাঝামাঝি এমনকি, কোন কোন জেলায় এর পরেও চালু রাখতে হবে। পরিবার পিছু দুইজন হিসাবে মাথাপ্রতি ২ টাকা করিয়া হিসাব করিলে ছয় লক্ষ লোকের এক মাসের কর্মসংস্থান করিতে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী এবং বগুড়া জেলার একফসলী অঞ্চলের প্রায় এক লক্ষ লোকের সাহায্যার্থে টেষ্ট রিলিফের কাজ নভেম্বর মাসের শেষভাবে আমন ফসল ওঠা পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে এবং এজন্য অতিরিক্ত ৩ কোটি টাকা প্রয়োজন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, টেষ্ট রিলিফের জন্য মোট প্রয়োজন প্রায় ৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ভূমিহীন অক্ষম লোকদেরও খয়রাতি সাহায্য দিয়ে যেতে হবে। আগষ্টের প্রথমভাগে আউস কাটা শুরু হলে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে। এ ধরনের লোকের সংখ্যা প্রদেশে ৫ লক্ষের মত। স্বাভাবিক হারে মাসপ্রতি মাথাপিছু ১০ সের চাল জোগালেও দু'মাসে (জুন ও জুলাই) চাল প্রয়োজন হবে ২,৫০,০০০ মণ যার দাম হবে যাবতীয় খরচসহ মোট ৫৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা অর্থাৎ মনপ্রতি ২২ টাকা ৮ আনা। এ ছাড়া এক-ফসলী এলাকার ১ লক্ষ লোককেও আগামী নভেম্বর পর্যন্ত ৪ মাস খয়রাতি সাহায্য দিতে প্রয়োজন হবে ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এ নিয়। খয়রাতি সাহায্যের জন্য মোট দরকার ৭৮ লক্ষ টাকা।

 চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও অন্যান্য জায়গায় ঘূর্ণিবতায় ক্ষতিগ্রস্ত ২ লক্ষ পরিবারকে তাদের ঘরবাড়ী মেরামতের জর্ন গৃহনির্মাণ সাহায্য মঞ্জুর করতে হবে। পরিবার-পিছু স্বাভাবিক হবে ৩০ টাকা করে ধরে হলেও ৬০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। ঘূর্ণিঝড়ে প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে বহুসংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও দাতব্য চিকিৎসালয় ভূমিসাৎ হয়েছে। এগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মেরামতের জন্য এককালীন দান