পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ প্রথম খন্ড
৭২৩

বন্যা নিয়ন্ত্রণ

 প্রদেশের বন্যা সম্যার প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ জরীপে কার্যের কর্মসূচী প্রণয়ন, তথ্যাদি সংগ্রহ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা প্রস্তুত কার্যের জন্য পূর্ব পাকিস্তান সরকার বন্যা কমিশন গঠন করিয়াছেন। একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানও গঠন করা হইয়াছে। জরীপ ও তদন্ত কার্য পরিচালনার জন্য বন্যা কমিশনে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধামেত্মর পরিপ্রেক্ষিতে দশটি স্বল্পমেয়াদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রস্তুত করিয়া বন্যা কমিশনের নিকট পেশ করা হয়। অতঃপর উহা পূর্ব পাকিস্তান সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও মঞ্জুরীর জন্য পাকিস্তান সরকারের নিকট দাখিল করা হয়। পাকিস্তান সরকার পরীক্ষামূলকভাবে পরিকল্পনাগুলির মধ্যে দুইটি, যথা (১) জরীপ ও তদন্ত এবং (২) রংপুর জিলার কালাপনী বাঁধ সম্প্রসারণ কার্যের আশু ব্যয় নির্বাহের জন্য ৪ লক্ষ টাকা দিতে সম্মত হইয়াছেন। উভয় কার্যই আরম্ভ করা হইয়াছে।

 কালাপনী বাঁধ নির্মাণের কাজ বেশ অগ্রসর হইতেছে। এই বাঁধ নির্মিত হইলে যমুনা নদীর বন্যার ব্যাপক ধ্বংলীলা হইতে প্রায় ৫২ বর্গমাইল পরিমিত শস্য উৎপাদনকারী এলাকা রক্ষা পাইবে। পাকিস্তান সরকার এ যাবত অন্যান্য আরও বন্যা নিরোধ পরিকল্পনা অনুমোদন করিয়াছেন। এবং বর্তমান আর্থিক বৎসরের জন্য ১ কোটি ১০ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দ করিয়াছেন। এইসব পরিকল্পনার মধ্যে ৭টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা ও ১২টি সেচ ও জল নিষ্কাশন পরিকল্পনা রহিয়াছে। বর্ষা শেষে এইসব পরিকল্পনার কাজে হাত দেওয়া হইবে। জল নিষ্কাশনের সুবিধার্থে সরকার খাল সংস্কার করিবার জন্য বহুসংখ্যক পরিকল্পনা গ্রহণ করিয়াছেন। এইসব পরিকল্পনা বন্যার তীব্রতা হ্রাসে সাহায্য করিবে।

শিক্ষা

 শিক্ষার খাতে ৪ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে। সাধারণ প্রয়োজনে এবং উন্নয়ন পরিকল্পনারদির জন্য বর্ধিত হারে অর্থ বরাদ্দ করা হইয়াছে।

 বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনের উদ্দেশে বাংলা একাডেমী স্থাপিত হইয়াছে। আশা করা যায় যে, এই একাডেমী কালক্রমে শুধুমাত্র অন্যান্য ভাষায় লিখিত দর্শন, কারিগরী বিজ্ঞান ও সাহিত্য বিষয়ক গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশ কেন্দ্ররূপেই গড়িয়া উঠিবে না, বরং ইহা বাংলা ভাষার অভিজ্ঞ পণ্ডিত ও শিক্ষার্থীগণের একটি গবেষণা ও আলোচনার কেন্দ্ররূপ পরিপূর্ণতা লাভ করিবে।

 ঢাকা কলেজ ধানমণ্ডাই এলাকায় নতুন গৃহ স্থানান্তরিত হইয়াছে। এই কলেজের ছাত্রাবাসের নির্মাণ কার্যও শুরু করা হইয়াছে।

 ইকবাল হলের বর্তমান গৃহের স্থলে একটি নূতন গৃহ নির্মাণের জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হইয়াছে। ইডেন গার্লস কলেজ ও হোষ্টেলের জন্যও নতুন গৃহ নির্মাণ করা হইবে। এই জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। দেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য যাহাতে দেশের বালকগণ নিজেদেরকে গড়িয়া তুলিতে পারে, তজ্জন্য সরকার চট্টগ্রামে একটি ক্যাডেট কলেজ স্থানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এই পরিকল্পনা কার্যকরী করিতে যে ব্যয় হইবে উহার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বহন করিতে সম্মত হইয়াছেন। প্রাদেশিকসরকার জমি প্রদান ও এককালীন খরচের অংশ বহন করা ছাড়াও এই পরিকল্পনা বাবদ বার্ষিক পুনঃপৌনিকভাবে যে ৭ লক্ষ টাকা ব্যয়িত হইবে উহা বহনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব বহন করিবেন। কারিগরী শিক্ষা ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটাইবার জন্য সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন এবং এই উদ্দেশ্যে বাজেট প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হইয়াছে।

 সরকার বর্তমান বৎসরের জন্য গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি ও সাহায্য বাবদ ৯ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা বরাদ্দ করিয়াছেন। এই সম্বন্ধে ইহাও উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, গত বৎসর সরকার এই বাবদ মোট ৬ লক্ষ