পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

219 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাপত্র তারিখ সম্পাদকীয় বিপ্লবী বাংলাদেশ ২৮ নভেম্বর, শোষণ অবসানের অভিযান ১ম বর্ষঃ ১৫শ সংখ্যা Տ5, Գ Տ সম্পাদকীয় শোষণ অবসানের অভিযান একদিকে সারা বাংলাদেশ রাহুমুক্ত হবে, বাংলাদেশের সূচাগ্র ভূমিতেও পাকিস্তানী শোষকের অবৈধ অধিকার থাকবে না, সর্বত্র উড়বে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হবে সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, সামাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের শাসন। কবে আসবে সেদিন? কয়েক মাস আগেও মনে হয়েছিল, সেদিন বুঝি বহুদূর। কিন্তু আজ শুধু বাংলাদেশের বাঙালী নয়, বিদেশীরাও, শুধু বন্ধুরা নয়, শত্রগু ভাবছে এ ঘটবে অদূর ভবিষ্যতেই। কী করে ঘটল এই পরিবর্তন? কোন গোপন অস্ত্র এল বাঙালীর হাতে? কে যোগাল সেই অস্ত্র? বিদেশী কোন মহাশক্তি কি? দুনিয়া জানে পাকিস্তানী জল্লাদেরা কার অস্ত্রের বলে বাংলার রক্ত বইয়ে দিয়েছে। যারা দিয়েছে সেই অস্ত্র তাদের না সবাই জানে। তারা মহাশক্তি, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যান্ত্রিক উন্নতিতে যারা জগতের শীর্ষস্থানে অধিকার করেছে। তেমন কোন শক্তি কোন মহাপরাক্রমাশালী মারণাস্ত্র বাঙালীর হাতে তুলে দেয়নি, যার বলে আজ পাক পশুশক্তি সন্ত্রস্ত, আতঙ্কগ্রস্ত। যে শক্তির প্রয়োগে এই সামান্য সময়ে বাঙালী জাতি পাক রক্তপায়ীদের রাক্ষস উল্লাসকে ত্রাসে পরিণত করেছে সে হল সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর শোষণ মুক্তির আকাঙ্ক্ষা, মষ্টিমেয় বাঙালীর ক্ষমতা লোলুপতা নয়। সেই আকাঙ্ক্ষা অনুপ্রাণিত করেছে সামান্য অস্ত্রে সজ্জিত, সুশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, বৃদ্ধ, যুবক, শিশু, নারী-পুরুষ মুক্তিসেনাকে। শোষণ মুক্তির উন্মাদনায় মুক্তিযোদ্ধারা রক্তবীজের মত এক থেকে অনেক, স্বল্প থেকে বহু হয়ে উঠেছে। সেই উন্মাদনায় ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে অঞ্চলে অঞ্চলে, সীমান্তে ও কেন্দ্রে-যেখানেই শোষিত বাঙালী সেখানেই মক্তিসংগ্রামের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে-মুক্তির তীর্ব আকুতি তার দ্রুত বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। অপপ্রচারে বাংলাদেশের জনসাধারণ বিভ্রান্ত হয়নি। কেন? কারণ তারা মুক্তিবাহিনীর কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করেছে। তারা দেখেছে, মুক্তিযোদ্ধারা শুধু অস্ত্রবলে বলীয়ান নয়। তাদের মনোবল অটুট আর তাদের মনোবলের উৎস জনসাধারণের প্রতি তাদের সহানুভূতি, সৌহার্দ্য, আত্মবোধ। তারা দেখেছে যে তারা জনসাধারণের জন্য, তাদের শোষণ মুক্তির জন্য দিতে পারে সব কিছুই, দিতে পারে প্রাণ-অথচ চায় না কিছুই। তাদের মুক্ত চিত্তে ক্ষমতালোভের কলুষ নেই, বিলাস বসনে আগ্রহ নেই, নেই ক্ষুদ্র স্বার্থবৃদ্ধি। একটা মহৎ আদর্শ-সাধারণ মানুষের শোষণের আবসান-তাদের অন্তরকেও মহৎ করেছে। তাদের শৌর্যের মূলে আছে অগ্নিশুদ্ধ, স্বার্থলেশহীন স্বাধীনতা, শোষণমুক্তির যজ্ঞে নিবেদিত নিষ্কলুষ মন। এ যদি না হতো, তবে সমগ্র দেশে এত শীঘ্ৰ মুক্তিযুদ্ধ এত তীব্ররূপ ধারণ করত না। জনসাধারণের স্বচ্ছ দৃষ্টিতে স্বাধীনতা যুদ্ধের ত্রটি, তার অন্ধকার রূপ অনাবৃত হয়ে পড়ত। এ যুদ্ধ হয়ে পড়ত শীর্ণ, সংকীর্ণ-হত শুধুই অস্ত্র ঝঞ্চনা।