পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

252 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড পরাজয়ের পর সক্রিয় রাজনীতি হইতে অবসর গ্রহণ করিয়াছিলেন। কিন্তু দ্য গল পন্থীদের মাঝে তাঁহার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। সম্প্রতি নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রধান উদ্যোক্তা সর্বোদয় নেতা শ্রী জয় প্রকাশ নারায়ণের কাছে এক চিঠিতে তিনি লিখিয়াছেন- “পাকিস্তানী জঙ্গীচক্র যে সময়ে ট্যাঙ্ক ও সৈন্যবাহিনীর সাহায্যে বাংলাদেশের জনগণের উপর পশুসুলভ বর্বর আচরণ অব্যাহত রাখিয়াছে- তখন আবেদন-নিবেদন কিংবা সম্মেলন করিয়া কোন ফল হইবে না।’ ‘লা ফিগারো’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের উপর জোর দিয়া মশিয়ে মালরো লিখিয়াছেন- আবেদন-নিবেদনের দিন শেষ হইয়াছে। আজ ইসলামাবাদের জঙ্গীশাহীর বর্বরতার একমাত্র জবাব সশস্ত্র সংগ্রাম। বাংলার জনগণকে যদি কেউ সত্যিই সাহায্য করিতে চান- তবে তাঁহাকে সশস্ত্র যুদ্ধে বাঙালীর পাশে আসিয়া দাঁড়াইতে হইবে।” আঁদ্রে মালরোর এই প্রত্যয় দৃঢ় ঘোষণা ফ্রান্সের রাজনৈতিক মহলে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করিয়াছে। আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় একই সাথে ইহা দারুণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করিয়াছেন। আদ্রে মালরো ইতিমধ্যে জানাইয়াছেন- তিনি তাঁহার ঘোষণা সম্পর্কে একটি বিবৃতি প্ৰদান করিবেন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামী জনগণের সাহায্যে তাঁহার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা তিনি এই বিবৃতি উলেখ করিবেন বলিয়া আশা করা যাইতেছে। সম্প্রতি মশিয়ে মালরো সহিত যাঁহার সাক্ষাৎ করিয়াছেন তাঁহারা বলেন, প্যারিসের বাইরে তাঁর নিজের বাড়িতে তিনি এখন অবসর জীবনযাপন করিতেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে সর্বশেষ সংবাদটিও তাঁহার জানা এবং মশিয়ে মালরোর দৃঢ় ধারণা, বিশ শতকের সত্তর দশকে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি নির্যাতিত, নিপীড়িত জনতার এই নব-উত্থান পৃথিবীর ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা। সত্তর বছরের এই বৃদ্ধ মানুষটি তাই বলিয়াছেন- আমি বাংলাদেশের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিতে চাই। মানবতার সপক্ষে নিপীড়িত জনতার এই সংগ্রাম একটি মহান সংগ্রাম। তিনি বলেন, আমি বৃদ্ধ, হয়তো পদাতিক হিসাবে যুদ্ধ করার সামর্থ্য আমার হইবে না। তবে ট্যাঙ্কে চড়িয়া আমি পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার পশুদের মোকাবিলা করিবার শক্তি রাখি।” ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের উল্লেখ করিয়া তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক দুনিয়ার ঘটনাবলীর পটভূমিতে বিচার করিলে বুঝা যায়- তৎকালীন সময়ে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ সম্ভবপর হইয়াছিল। কিন্তু আজ সেই সম্ভাবনা সম্পূর্ণরূপে তিরোহিত। আমাদের চোখের সামনে রহিয়াছে ভিয়েতনামের দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের মানুষকে আজ উপলব্ধি করিতে হইবে- যে জঘন্য পশুশক্তির বিরুদ্ধে বাঙালীরা রুখিয়া দাঁড়াইয়াছেন, সেই পশুশক্তি ইতিহাসের ঘৃণ্যতম নরপশু। বাঙালীকে আজ সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমেই মুক্তি সংগ্রামকে চূড়ান্ত সফলতার দিকে নিয়া যাইতে হইবে। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের সামনে আজ আর অন্য কোন পথ নাই।