পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

253 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ষষ্ঠ খণ্ড শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ সম্পাদকীয় বাংলার বাণী ৫ অক্টোবর, ১৯৭১ সর্বশেষ জল্লাদী ষড়ষন্ত্র মুজিবনগরঃ ৬ষ্ঠ সংখ্যা সম্পাদকীয় সর্বশেষ জল্লাদী ষড়ষন্ত্র ইতিহাসের কি বিচিত্র পুনরাবৃত্তি। দুই শত বছর আগে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ অব্যাহত রাখার জন্য ডিভাইড এণ্ড রুল পলিসি উদ্ভাবন করিয়াছিল। এই পলিসি অনুসারেই তারা সুচতুর কৌশলে হিন্দুমুসলমানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করিয়া, বঙ্গভঙ্গ’ করিয়া নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করিতে বহুলাংশে সক্ষমও হইয়াছিল। তারপর দীর্ঘদিন কাটিয়াছে। ভারতবর্ষ হইতে বৃটিশরা বিদায় নিয়াছে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশের সেদিনের ঔপনিবেশিক স্বার্থরক্ষার তাগিদে অনুসৃত বিভেদ নীতির বিষাক্ত ছোবলের ক্ষতচিহ্ন এই উপমহাদেশের বুক হইতে আজিও নিঃশেষে মুছিয়া যায় নাই। সেই যে বৃটিশ আমলে বাংলা বিভক্ত হইয়াছে, ঘুরিয়া ফিরিয়া উহা দ্বিখণ্ডিতই রহিয়া গিয়াছে- জোড়া লাগে নাই, লাগিবেও না। আর আশ্চর্য দুই শত বৎসর পরে বাংলাদেশে পাঞ্জাবী উপনিবেশবাদী শাসন অব্যাহত রাখার জন্য জঙ্গশাহী আজ সেই একই সনাতনী বৃটিশ বিভেদ নীতিকেই তুরুপের তাস হিসাবে ব্যবহার করিতে উদ্যত হইয়াছে। পররাজ্যলোভী পশ্চিম পাকিস্তানী শাসককুলের এই জঘন্য দুরভিসন্ধিটির প্রতিফলন ঘটিয়াছে জল্লাদ ইয়াহিয়ার প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্রের খসড়ায়। এই খসড়ায় বৃটিশ বিভেদ-নীতিরই অনুসরণে বাঙালী জাতির মধ্যে বিভেদ, বিদ্বেষ এবং শক্রতার মনোভাব সৃষ্টির জন্য একদিকে হিন্দুদের ভোটাধিকার হরণ এবং অপরদিকে বাংলাদেশের অধিকৃত অঞ্চলকে তিনটি প্রদেশে ভাগ করার দূরভিসন্ধিমূলক সুপারিশ সন্নিবেশিত হইয়াছে। পশ্চিম পাকিস্তানী জঙ্গী সরকারের বেসরকারী মুখপাত্র পাকিস্তান টাইমসে ইয়াহিয়া খানের প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্রের একটি খসড়া প্রকাশিত ইহায়াছে। জঙ্গী শাসনের অধীনস্থ জনগণের উপর চাপাইয়া দিবার উদ্দেশ্যে একটি শাসনতন্ত্র রচনার জন্য ইয়াহিয়া খান কিছুদিন আগে যে কমিটি নিয়োগ করিয়াছিল সেই কমিটি খসড়া শাসনতন্ত্র রচনার অপকর্মটি সম্পন্ন করিয়াছে। পাকিস্তান টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী খসড়াটিতে হিন্দুদের ভোটাধিকার হরণ করা হইয়াছে। কারণ স্বরূপ বলা হইয়াছে যে, হিন্দুদের ভোটের জোরেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতিয়া পাকিস্তানকে ধ্বংস করিবার চেষ্টা করিয়াছে। সুতরাং হিন্দুদের ভোটাধিকার থাকা উচিত নয়। খসড়া শাসনতন্ত্রে বলা হইয়াছে, আওয়ামী লীগের কোন লোক দলের নামে বা বেনামে কোনদিন পাকিস্তানের কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে না। সব চাইতে উল্লেখযোগ্য বিষয়, জল্লাদী শাসনতন্ত্রে বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকাকে তিনটি পৃথক প্রদেশে বিভক্ত করার পরিকল্পনা সংযোজিত হইয়াছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী প্রদেশ গঠিত হইবে এবং প্রত্যেক প্রদেশের পৃথক আইন পরিষদ থাকিবে। প্রত্যেক প্রদেশে গভর্নর থাকিবে এবং গভর্নরই মন্ত্রীদের নিয়োগ করিবে। জঙ্গীশাহীর রাজত্বে এখন কড়া প্রেস সেন্সরশীপ। তা ছাড়া পাকিস্তান টাইমস সরকার সমর্থক পত্রিকা। সন্দেহের